ঢাকা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২দশকেও সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুর কারন জানা যায় নি

ছবিঃ চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন। -- (সংগৃহীত)

স্টাফ রিপোর্টারঃ  সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুর ২৫ বছর পেরিয়ে গেল। মৃত্যুবার্ষির্কী এলেই তাকে সীমিত আকারে স্মরণ করা হলেও বছরের বাকি দিনগুলোতে তার নাম থাকে অনুচ্চারিত।

১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংবাদ সংগ্রহের জন্যে ছুটে গিয়েছিলেন গাইবান্ধায়। সেখানে ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীতে কালাসোনার ড্রেজিং পয়েন্ট থেকে ফেরি যোগে নদী পারাপারের সময় পা পিছলে নদী গর্ভে হারিয়ে যায় মোনাজাত উদ্দিন। সেখানেই মৃত্যুর সাথে মহা মিলন ঘটে তার।

এই মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন আছে। সেকি আসলে পা পিছলে মারা যায়। নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এসব কোনো প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যায়নি আজও।

মৃত্যুর একদিন পর ৩০ ডিসেম্বর রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে শায়িত  করা হয় মোনাজাত উদ্দিনকে। চির বিদায়ের সাথে প্রশ্ন রেখে যায় অনেকের মাঝে। সত্যি কি পা পিছলে পড়ে নাকি কোনো ষড়যন্ত্রে চলে গেলেন তিনি। সেইসব  প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আড়াই দশকেও।

রংপুরের সন্তান চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন একজন সফল গবেষকও ছিলেন। তার লেখনিতে উঠেএসেছে গ্রাম বাংলার অজানা অনেক কথা। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, এরপর তথ্য-উপাত্তের সঠিক কিনারা উপলব্ধি থেকেই কলমের কালি দিয়ে তৈরি হতো তার রিপোর্টিং। সততা, ধৈর্য্য আর অসীম সাহসিকতাকে পুঁজি করেই তিনি সাংবাদিকতায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার লেখনিতে পাঠকরা পেতে নতুন স্বাদ। তাই তিনি পেয়েছিলেন চারণ সাংবাদিকের উপাধি। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি নাটক, গল্প, গান লিখে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার নামডাক ছিল যথেষ্ট।

রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন আব্দুস সাহেদ জানান, মোনাজাতের মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা শুনেছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রশিদ বাবু জানান, মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যু আজও রহস্য রয়ে গেছে রংপুরের তথা দেশের সাংবাদিকদের কাছে। এ প্রশ্নের উত্তর আর কোনো দিন পাওয়া যাবে না। মোনাজাত উদ্দিন পানি এবং মৃত্যুকে খুব ভয় পেতেন। শেষ পর্যন্ত পানিতেই তার মৃত্যু হলো।

ছাত্র থাকা অবস্থাতেই বগুড়ার সাপ্তাহিক বুলেটিন পত্রিকার মাধ্যমে ঝুকে পড়েন তিনি সাংবাদিকতায়। ১৯৬২ সালে স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে ঢাকার কাগজ দৈনিক আওয়াজ এবং ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। মোনাজাত উদ্দিন শুধু সাংবাদিকতায় নয়, নাটক, গল্প, কবিতা আর ছড়া লেখায়ও পারদর্শী ছিলেন।

বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘করিম মণ্ডলের বৈঠকখানা’র পান্ডুলিপি লেখার পাশাপাশি ভালো গীতিকার হিসেবেও তার ছিলো বেশ সুনাম। মৃত্যুর আগে তার লেখা ৯টি এবং পরে আরো দুটি গ্রন্থ প্রকাশ পায়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-পথ থেকে পথে, মজিবর ও শাহ আলমের কাহিনী, কানসোনার মুখ, লক্ষীটারী, অনুসন্ধানী রিপোর্ট ইত্যাদি।

সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে (মরণোত্তর) ২১ শে পদকসহ প্রায় অর্ধ-ডজন পুরস্কার পান। স্বাধীনতার পর তিনি নিজেই দৈনিক রংপুর নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। আর্থিক সমস্যার কারণে সেটি থমকে যায়। এরপর ১৯৭৬ সাল থেকে মোনাজাত উদ্দিন দৈনিক সংবাদে প্রায় ২০ বছর কাজ করেন। সেখান থেকে বের হয়ে ১৯৯৫ সালে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় তিনি সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত জনকন্ঠেই ছিলেন।

মোনাজাত উদ্দিন রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় ১৯৪৯ সালের ১৮ জানুয়ারি এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভি আলিম উদ্দিন আহমেদ ও মাতা মতিজানেছা। মোনাজাত কৈলাশ রঞ্জন স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ শেষে ভর্তি হন কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসময় তার বাবাকে হারিয়ে বিপাকে পড়েন মোনাজাত উদ্দিন। পরে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে বিএ পাশ করেন তিনি।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

২দশকেও সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুর কারন জানা যায় নি

আপডেট সময় ০৪:৪২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

স্টাফ রিপোর্টারঃ  সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুর ২৫ বছর পেরিয়ে গেল। মৃত্যুবার্ষির্কী এলেই তাকে সীমিত আকারে স্মরণ করা হলেও বছরের বাকি দিনগুলোতে তার নাম থাকে অনুচ্চারিত।

১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংবাদ সংগ্রহের জন্যে ছুটে গিয়েছিলেন গাইবান্ধায়। সেখানে ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীতে কালাসোনার ড্রেজিং পয়েন্ট থেকে ফেরি যোগে নদী পারাপারের সময় পা পিছলে নদী গর্ভে হারিয়ে যায় মোনাজাত উদ্দিন। সেখানেই মৃত্যুর সাথে মহা মিলন ঘটে তার।

এই মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন আছে। সেকি আসলে পা পিছলে মারা যায়। নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এসব কোনো প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যায়নি আজও।

মৃত্যুর একদিন পর ৩০ ডিসেম্বর রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে শায়িত  করা হয় মোনাজাত উদ্দিনকে। চির বিদায়ের সাথে প্রশ্ন রেখে যায় অনেকের মাঝে। সত্যি কি পা পিছলে পড়ে নাকি কোনো ষড়যন্ত্রে চলে গেলেন তিনি। সেইসব  প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আড়াই দশকেও।

রংপুরের সন্তান চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন একজন সফল গবেষকও ছিলেন। তার লেখনিতে উঠেএসেছে গ্রাম বাংলার অজানা অনেক কথা। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, এরপর তথ্য-উপাত্তের সঠিক কিনারা উপলব্ধি থেকেই কলমের কালি দিয়ে তৈরি হতো তার রিপোর্টিং। সততা, ধৈর্য্য আর অসীম সাহসিকতাকে পুঁজি করেই তিনি সাংবাদিকতায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার লেখনিতে পাঠকরা পেতে নতুন স্বাদ। তাই তিনি পেয়েছিলেন চারণ সাংবাদিকের উপাধি। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি নাটক, গল্প, গান লিখে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার নামডাক ছিল যথেষ্ট।

রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন আব্দুস সাহেদ জানান, মোনাজাতের মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা শুনেছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।

রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রশিদ বাবু জানান, মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যু আজও রহস্য রয়ে গেছে রংপুরের তথা দেশের সাংবাদিকদের কাছে। এ প্রশ্নের উত্তর আর কোনো দিন পাওয়া যাবে না। মোনাজাত উদ্দিন পানি এবং মৃত্যুকে খুব ভয় পেতেন। শেষ পর্যন্ত পানিতেই তার মৃত্যু হলো।

ছাত্র থাকা অবস্থাতেই বগুড়ার সাপ্তাহিক বুলেটিন পত্রিকার মাধ্যমে ঝুকে পড়েন তিনি সাংবাদিকতায়। ১৯৬২ সালে স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে ঢাকার কাগজ দৈনিক আওয়াজ এবং ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। মোনাজাত উদ্দিন শুধু সাংবাদিকতায় নয়, নাটক, গল্প, কবিতা আর ছড়া লেখায়ও পারদর্শী ছিলেন।

বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘করিম মণ্ডলের বৈঠকখানা’র পান্ডুলিপি লেখার পাশাপাশি ভালো গীতিকার হিসেবেও তার ছিলো বেশ সুনাম। মৃত্যুর আগে তার লেখা ৯টি এবং পরে আরো দুটি গ্রন্থ প্রকাশ পায়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-পথ থেকে পথে, মজিবর ও শাহ আলমের কাহিনী, কানসোনার মুখ, লক্ষীটারী, অনুসন্ধানী রিপোর্ট ইত্যাদি।

সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন সাংবাদিকতায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে (মরণোত্তর) ২১ শে পদকসহ প্রায় অর্ধ-ডজন পুরস্কার পান। স্বাধীনতার পর তিনি নিজেই দৈনিক রংপুর নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। আর্থিক সমস্যার কারণে সেটি থমকে যায়। এরপর ১৯৭৬ সাল থেকে মোনাজাত উদ্দিন দৈনিক সংবাদে প্রায় ২০ বছর কাজ করেন। সেখান থেকে বের হয়ে ১৯৯৫ সালে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় তিনি সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত জনকন্ঠেই ছিলেন।

মোনাজাত উদ্দিন রংপুর নগরীর ধাপ এলাকায় ১৯৪৯ সালের ১৮ জানুয়ারি এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভি আলিম উদ্দিন আহমেদ ও মাতা মতিজানেছা। মোনাজাত কৈলাশ রঞ্জন স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ শেষে ভর্তি হন কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এসময় তার বাবাকে হারিয়ে বিপাকে পড়েন মোনাজাত উদ্দিন। পরে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে বিএ পাশ করেন তিনি।