শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে অভিনয় করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং এসব আদান–প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের (এনসিএমইসি) এ তথ্য জানিয়েছে। শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের অধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার বা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এনসিএমইসিকে জানিয়ে থাকে ।
এনসিএমইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে শিশু পর্নোগ্রাফি, শিশুদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং আদান-প্রদানের সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩০টি ঘটনা ঘটেছে ভারতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ঘটেছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯০টি, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইরাকে ঘটেছে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৮০৯টি, চতুর্থ অবস্থানে থাকা আলজেরিয়ায় ঘটেছে সাত লাখ ৫৩৫টি এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ঘটেছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪২টি।
শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে সাইবার অপরাধ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃত ওই তিনজন নিজেদের পরিচয় গোপন করে দেশি-বিদেশি শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হতো। পরে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতো।
ওই তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ বছরের এক কিশোরীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। ওই কিশোরীর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে এই তিন যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামের একটি গ্রুপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
এ প্রসংগে বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি মমতাজ বিলকিস রেডিও তেহরানকে বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এখন সহজলভ্য হবার কারণে শিশু পর্ণোগ্রাফি বিষয়ক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পরিবার ও স্কূল পর্যায়ে শিশুদের প্রতি আরেআ বেশী নজর দেওয়া দরকার। শিশুদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার প্রভাব বাড়াতে হবে। আর এরকম আপত্তিকর সাইট বা কনটেন্ট নিষন্ত্রন করতে হবে। । ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষার জন্য আবশ্যই সরকার বা প্রশাসনকে দায়িত্ব করতে হবে।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ (চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট) শাবনাজ জাহেরিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশে যে শিশু পর্নোগ্রাফি বা তাদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, এটা তো বিভিন্ন ওয়েবসাইটেই দেখা যায়। কিন্তু এগুলোর ওপর যথাযথ নজরদারি নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। বিষয়গুলো তদন্তের সক্ষমতাও সেভাবে এখনো হয়নি। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুরো বিষয়টি সরকারের কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা দরকার।
বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদন্তের জন্য যে সক্ষমতা এবং অবকাঠামো প্রয়োজন, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আয়ত্বে নেই।
সম্প্রতি এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) । এরপর গত নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু পর্নোগ্রাফিসংক্রান্ত সড়ে ষোল হাজার ঘটনার কথা সিআইডিকে জানিয়েছে এনসিএমইসি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬১৮টি ঘটনা ফেসবুকের, ৩২৫টি ঘটনা ইনস্টাগ্রামের এবং বাকি ৫১১টি ঘটনা গুগল, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের। প্রতিটি ঘটনাতেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুঠোফোন নম্বর, আইপি অ্যাড্রেস, আইএসপি, গুগল অ্যাকাউন্ট, ব্যবহৃত ডিভাইসের নাম ও ধরন, এমনকি কোন অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ থেকে একজন ব্যক্তি সেই উপাদান ইন্টারনেটে আপলোড করেছেন বা আদান-প্রদান করেছেন, সে তথ্যও রয়েছে।
উল্লেখ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অঙ্গহানি করার মতো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে যেকোনো ধরনের পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, ধারণ, হস্তান্তর, বাজারজাতকরণ ও সম্মানহানি অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং এর শাস্তি সর্বোচ্চ দশ বছর কারাদণ্ড।