ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Logo মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো, ট্রাম্পের নতুন আদেশ Logo বরগুনায় নিজ বসতঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার Logo ১৪, ১৮ ও ২৪’র নির্বাচন মাথা থেকে মুছে ফেলতে হবে Logo নওগাঁর মান্দায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক উল্টে চালক নিহত Logo বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন Logo একাদশে ভর্তি শুরু আজ,চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত Logo পাকিস্তানে বন্যার্তদের উদ্ধারকারী নৌকা উল্টে ৫জনের মৃত্যু Logo আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজ নেতাদের মনোনয়ন দেবে জাতীয় পার্টি : মোস্তফা Logo সুন্দরবনে অস্ত্রসহ ছোট সুমন বাহিনীর ৪ দস্যুসহ আটক ৬

সবজির উৎপাদন যথেষ্ট হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষিরা

স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় এখানকার সবজি। কিন্তু এবার সবজির উৎপাদন যথেষ্ট হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষিরা।

লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে। এ জেলার সদর উপজেলা, বদলগাছী, মহাদেবপুর ও মান্দারের কিছু অংশে সবজির আবাদ হয়ে থাকে।নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, এ বছর প্রায় ১৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।

সবজি একটি পচনশীল দ্রব্য। সবজিগুলো জেলায় সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নাই। প্রতিদিন জমি থেকে সবজি তুলে দিনেই বিক্রি করেন চাষিরা। তাই দাম যেটাই হোক না কেন সে দামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় তাদের।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ৪-৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০-১৫ টাকা, সিম ৮-৩০ টাকা, গাজর ১০-২০ টাকা, বেগুন ১৫-২০ টাকা, আলু ১০-২০ টাকা কেজি এবং টমেটো ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

সদর উপজেলা বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দুপুর গ্রামের চাষি ময়নুল হক বলেন, এক বিঘা জমিতে লাউ ও ১০ কাঠা জমিতে সিমের আবাদ করেছেন। জমিতে হালচাষ, সার, ওষুধ এবং মাচা করতে লাউয়ে সাত হাজার টাকা এবং সিমে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ কাঁচা বাজারে ৩০ পিস লাউ ও এক মণ সিম নিয়ে যাই। প্রতি পিস লাউ ১০ এবং সিম ১০ টাকা কেজি দরে বেচেছি। অথচ ওই সবজি পাইকাররা বেচছেন লাউ ২০-২৫ টাকা এবং সিম ২৫-৩০ টাকায়।

অনন্তপুর গ্রামে কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে কাতিশা সিম চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার টাকার সিম বিক্রি হয়েছে। তবে লাভ না হলেও লোকসান হবে না।

কারণ হচ্ছে প্রথম দিকে সিমের আমদানি কম ছিল। প্রতি কেজি প্রায় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন ৮-১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বেশি হওয়ার কারণে দাম কম হচ্ছে।

ধোপাইপুর গ্রামে কৃষক ময়নাল হোসেন বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানি বেশি হওয়ার কারণে সবজির দাম কমে গেছে। প্রথম দিকে যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি ছিল, সে বেগুন এখন ১৫-২০ টাকা কেজি।

তিনি আরও বলেন, একসময় পাটের আবাদ করতাম। পাটে যখন লোকসান হতে শুরু করল তারপর থেকে সবজির আবাদ শুরু করেছি। কিন্তু এখন সবজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার চকআতিতা বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, তারা তিনজন মিলে ব্যবসা করেন। চকআতিতা বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করেন। দেড়মাস আগে যেখানে প্রতিদিন ট্রাকে করে সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হতো। এখন সেখানে ১৫-২০ বস্তা করে সিমসহ অন্য সবজি সংগ্রহ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে কাতিশা প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকায় সংগ্রহ করে ৩০-৩৫ টাকা, লাল সিম ১২-১৫ টাকায় সংগ্রহ করে ২০-২৫ টাকা এবং খাটো সিম ৮-১০ টাকা সংগ্রহ ১৫-২০ টাকা বিক্রি করা হয়। যেহেতু এগুলো কাঁচা দ্রব্য কখনো বেশি দামে বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়। আবার কখনো কম লাভ হয়।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেলে পণ্যের দাম কমে যায়। সবজির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানি হয়েছে। এ কারণে দাম তুলনামুলক কম। তবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও মধ্যস্বসত্ত্বভোগীরা (ফড়িয়া) দাম পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যদি সরাসরি ঢাকায় সবজি রফতানি করেন তাহলে তারা ন্যায্য দাম পাবেন। এক্ষেত্রে আমরা ‘কৃষক গ্রুপ’ করার চেষ্টা করছি। যারা সরাসরি ঢাকায় সবজি সরবরাহ করবেন।

ট্যাগস

নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার

সবজির উৎপাদন যথেষ্ট হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষিরা

আপডেট সময় ০৩:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় এখানকার সবজি। কিন্তু এবার সবজির উৎপাদন যথেষ্ট হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষিরা।

লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে। এ জেলার সদর উপজেলা, বদলগাছী, মহাদেবপুর ও মান্দারের কিছু অংশে সবজির আবাদ হয়ে থাকে।নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রমতে, এ বছর প্রায় ১৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।

সবজি একটি পচনশীল দ্রব্য। সবজিগুলো জেলায় সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নাই। প্রতিদিন জমি থেকে সবজি তুলে দিনেই বিক্রি করেন চাষিরা। তাই দাম যেটাই হোক না কেন সে দামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় তাদের।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ৪-৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০-১৫ টাকা, সিম ৮-৩০ টাকা, গাজর ১০-২০ টাকা, বেগুন ১৫-২০ টাকা, আলু ১০-২০ টাকা কেজি এবং টমেটো ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

সদর উপজেলা বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দুপুর গ্রামের চাষি ময়নুল হক বলেন, এক বিঘা জমিতে লাউ ও ১০ কাঠা জমিতে সিমের আবাদ করেছেন। জমিতে হালচাষ, সার, ওষুধ এবং মাচা করতে লাউয়ে সাত হাজার টাকা এবং সিমে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ কাঁচা বাজারে ৩০ পিস লাউ ও এক মণ সিম নিয়ে যাই। প্রতি পিস লাউ ১০ এবং সিম ১০ টাকা কেজি দরে বেচেছি। অথচ ওই সবজি পাইকাররা বেচছেন লাউ ২০-২৫ টাকা এবং সিম ২৫-৩০ টাকায়।

অনন্তপুর গ্রামে কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে কাতিশা সিম চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার টাকার সিম বিক্রি হয়েছে। তবে লাভ না হলেও লোকসান হবে না।

কারণ হচ্ছে প্রথম দিকে সিমের আমদানি কম ছিল। প্রতি কেজি প্রায় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন ৮-১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বেশি হওয়ার কারণে দাম কম হচ্ছে।

ধোপাইপুর গ্রামে কৃষক ময়নাল হোসেন বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানি বেশি হওয়ার কারণে সবজির দাম কমে গেছে। প্রথম দিকে যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি ছিল, সে বেগুন এখন ১৫-২০ টাকা কেজি।

তিনি আরও বলেন, একসময় পাটের আবাদ করতাম। পাটে যখন লোকসান হতে শুরু করল তারপর থেকে সবজির আবাদ শুরু করেছি। কিন্তু এখন সবজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার চকআতিতা বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, তারা তিনজন মিলে ব্যবসা করেন। চকআতিতা বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করেন। দেড়মাস আগে যেখানে প্রতিদিন ট্রাকে করে সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হতো। এখন সেখানে ১৫-২০ বস্তা করে সিমসহ অন্য সবজি সংগ্রহ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে কাতিশা প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকায় সংগ্রহ করে ৩০-৩৫ টাকা, লাল সিম ১২-১৫ টাকায় সংগ্রহ করে ২০-২৫ টাকা এবং খাটো সিম ৮-১০ টাকা সংগ্রহ ১৫-২০ টাকা বিক্রি করা হয়। যেহেতু এগুলো কাঁচা দ্রব্য কখনো বেশি দামে বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়। আবার কখনো কম লাভ হয়।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেলে পণ্যের দাম কমে যায়। সবজির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানি হয়েছে। এ কারণে দাম তুলনামুলক কম। তবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও মধ্যস্বসত্ত্বভোগীরা (ফড়িয়া) দাম পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যদি সরাসরি ঢাকায় সবজি রফতানি করেন তাহলে তারা ন্যায্য দাম পাবেন। এক্ষেত্রে আমরা ‘কৃষক গ্রুপ’ করার চেষ্টা করছি। যারা সরাসরি ঢাকায় সবজি সরবরাহ করবেন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471