সিলেট প্রতিনিধি : টিপ নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেটে লিয়াকত আলী নামে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়। তিনি সিলেট জেলার কোর্ট পরিদর্শক। সমালোচনার মুখে ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ট্যাটাসটি ডিলিটও করেছেন।
জানা গেছে, টিপ পরায় ঢাকার এক কলেজ শিক্ষিকাকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেক পুরুষ নিজেদের কপালে টিপ পরে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। এটিকে কটাক্ষ করে সোমবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন লিয়াকত আলী। পুলিশ কর্মকর্তার পোস্টটিকে ‘আপত্তিকর’ উল্লেখ করে ফেসবুকে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।
সোমবার রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে লিয়াকত আলী বলেন, ‘সম্পূর্ণ পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, টিপ মেয়েরা পড়ে। আমার স্ত্রীও টিপ পড়েন। পুরুষরা নারীর লেবাস পড়ে প্রতিবাদ জানানোর কারণেই আমি ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। পোস্ট ভাইরাল করা আমার মূল মোটিভ ছিল না। আমি নারী বিদ্বেষী কর্মকর্তাও নই। তবে পোস্ট নিয়ে বিভিন্নজনের সমালোচনার কারণে সেটি ডিলিট করেছি।
সিলেট জেলা পুলিশের মুখপাত্র (মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফুর রহমান জানান, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে তারা অবগত হয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা এরই মধ্যে স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশ সুপার মহোদয় জৈন্তাপুরে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বিষয়টি অবহিত হয়ে কোর্ট পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে ক্লোজড করার নির্দেশ দিয়েছেন।
টিপ ফেসবুকে পরিদর্শক লিয়াকত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘প্রসঙ্গ : টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানি। ফালতু ভাবনা : (18+)। টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানি করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ ভাবনায় শংকিত।
বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোশাক পরে চলাফেরা করেন তার মধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের ওপর দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারণে বাকি অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পরার কারণে কোনো নারীকে হয়রানি করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন?’’
পুলিশের একজন কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে হতবাক সিলেটের সুশীল সমাজ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, টিপ নিয়ে একজন পুলিশের আপত্তিকর মন্তব্যে যেখানে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সারা দেশ, সেখানে সিলেটের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরে দায়িত্ব পালন করা একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এমন চিন্তা-চেতনার লোক রাষ্ট্রের মূলনীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাই পুলিশের মতো সংবেদনশীল বিভাগ থেকে লিয়াকত আলীর মতো ব্যক্তিদের অপসারণ করতে হবে।