আন্তর্জাতিক ডেক্স : রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে নিহত বেড়ে প্রায় পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
নিহতদের মধ্যে বেশকিছু নারী ও শিশু রয়েছে। মারিউপোল শহরের মেয়রের বরাতে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) করা প্রতিবেদনে তথ্যটি জানিয়েছে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ।
শহরটির মেয়রের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নামে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মারিউপোল শহরে প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২১০ জন শিশুও রয়েছেন।
মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কোর উদ্ধৃতি দিয়ে ইউক্রেনীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন বলছে, রুশ সেনা অভিযানের মধ্যে অনেকে বের হয়ে আসতে পারলেও গত রবিবার পর্যন্ত মারিউপোল শহরে এখনো এক লাখ ৭০ হাজার বাসিন্দা অবস্থান করছিলেন। রাশিয়ান হামলায় শহরটির বহুতল আবাসিক ভবনগুলোর ৯০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশেরও অধিক ভবন এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউক্রেনীয় বার্তা সংস্থাটির দাবি, রুশ বাহিনীর অনবরত আক্রমণে ইতোমধ্যে ৭টি হাসপাতাল পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া একই কারণে মারিউপোলের ৫৭টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২৩টি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে মারিউপোল শহর থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে জোরপূর্বক রুশ ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে গত রবিবার মস্কোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল কিয়েভ। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহরটি রুশ হামলায় বিধ্বস্ত এবং প্রায় এক মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়ান সৈন্যরা।
সোমবার (২৮ মার্চ) প্রতিবেদনে বিবিসি নিউজ জানায়, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে- মারিউপোল থেকে ৯০ কিলোমিটার (৫৬ মাইল) পূর্বে বেজিমেনে নামক স্থানে একটি অস্থায়ী শিবিরে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য রাশিয়ান এলাকায় ঠিক কত সংখ্যক মানুষ স্বেচ্ছায় গেছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ ইউক্রেনীয়দের অনেকের রাশিয়ায় আত্মীয় রয়েছে। আর তাই রুশ ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়া বা নির্বাসিতদের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি নিউজ।
মস্কো অবশ্য হাজার হাজার ইউক্রেনীয়কে জোরপূর্বক রাশিয়ার ভূখণ্ডে সরিয়ে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। এছাড়া এ ধরনের জবরদস্তিমূলক নীতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনেরও লঙ্ঘন।
বিশ্লেষকদের মতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নামে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে হামলাটি শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই আক্রমণে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।
উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর কাছেই অবস্থিত।