প্রযুক্তি ডেস্ক: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টানা তিনদিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকলে গ্রাহকদের বিল দিতে হবে না।
কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটাকে ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্থাৎ টানা ১৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকলে গ্রাহকদের বিল দিতে হবে না।
সম্প্রতি বিটিআরসি ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) তিনি বলেন, একসময় নিয়ম ছিল টানা ২১ দিন ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ থাকলে গ্রাহকদের বিল দিতে হবে না। কিন্তু বিটিআরসি বাস্তবতা অনুধাবন না করেই এবং আমাদের সঙ্গে বৈঠক না করেই সেটাকে তিনদিনে নামিয়ে আনে। এরপর আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলি কোনো জায়গায় আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন কাটা গেল, এমটিপিএন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকলো- তখন আমরা ওখানে (বিটিআরসিকে) বিল দেবো না, এটাও নিশ্চিত করতে হবে।
তারপর অনেক এলাকায় বিভিন্ন সংস্থা ক্যাবল কেটে দেয়, ফাইবার অপটিক্যাল লাইন কেটে দেয়; তখন একদিনের মধ্যে তা সমাধান করে দিবে এর গ্যারান্টি চাই বিটিআরসির কাছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের বাস্তবতা অনুধাবনের অনুরোধ জানাই। এর প্রেক্ষিতে বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগ গত ৫ অক্টোবর গণমাধ্যমগুলোতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, একদিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ৫০ ভাগ নিতে পারবে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। দুদিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ২৫ ভাগ নেওয়া যাবে। আর টানা তিনদিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে ওই মাসের কোনও মাসিক বিল গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না।
তবে পুরনো নিয়ম সংশোধন করে নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, টানা পাঁচদিন অব্যাহতভাবে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ৫০ ভাগ নিতে পারবে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। আর টানা ১০ দিন ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ২৫ ভাগ নেওয়া যাবে। এছাড়া টানা ১৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকলে গ্রাহকদের বিল দিতে হবে না।
গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন নির্দেশনা বিটিআরসি দিতে পারে না বিটিআরসির নতুন এই সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন নির্দেশনা বিটিআরসি দিতে পারে না।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কমিশনের কাজ সবার আগে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করা। কিন্তু বিটিআরসি এ নির্দেশনার মাধ্যমে কেবলমাত্র আইএসপি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। এমনকি ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯এর ৪৫ধারা অমান্য করেছে। এই আইনে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।
বিটিআরসির এই নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ইন্টারনেট-সেবা না থাকলে গ্রাহক যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হলো তার বিপরীতে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ কিংবা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কারণ দর্শানো জরিমানা করার কোনো নির্দেশনা নেই। এ সকল নির্দেশনা কেবলমাত্র লোক দেখানো এবং হাস্যকর বটে।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বা কলড্রপ হলে সেক্ষেত্রে আইটিইউ (ইন্টার ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) এমনকি বিটিআরসির গাইডলাইনে বলা আছে, দুই শতাংশের বেশি কলড্রপ করা যাবে না। এর অতিরিক্ত হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২০১৮ সালে আমাদের রিটের ভিত্তিতে হাইকোর্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন কলড্রপ বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তার ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। এ সকল আইন ও নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কমিশনের এসকল নির্দেশনা টেলিকম সেক্টরে আরও বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আশা করছি বিটিআরসি এ সকল নির্দেশনা প্রত্যাহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার কোয়ালিটি অব সার্ভিস নির্ধারণ করে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করবে। যে নীতিমালায় গ্রাহকস্বার্থ রক্ষা হবে, পাশাপাশি অপারেটররা জবাবদিহিতামূলক সেবা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।