গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতারসহ সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ উপলক্ষে শনিবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম কাটামোড় এলাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে সাঁওতালরা এই দাবি জানান।
শুরুতেই সাঁওতাল পল্লীর জয়পুর মাদারপুরে বসতি উচ্ছেদের জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহত মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন। পরে তাদের দাবিদাওয়া সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও কালো পতাকা হাতে কয়েক পাঁচ শতাধিক সাঁওতাল-বাঙালি শোকর্যালিতে অংশ নেন।
র্যালি শেষে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তীর-ধনুক ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদ, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি, কাপেং ফাউন্ডেশন, সিডিএ দিনাজপুর ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধা যৌথভাবে এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাক্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ভূমি অধিকার কর্মী ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গাইবান্ধা জেলা বার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, প্রাণ-বৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, জনউদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম নেতা হরেন্দ্রনাথ সিং, কাপেং ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক খোকন সুইটেন মুরমু, আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুরমু, থমাস হেমব্রম, সুফল হেমব্রম, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, আদিবাসী নেতা দ্বীপায়ন শিখা, গোলাম রব্বানী মুসা, আব্দুল খালেক, অঞ্জলী রানী দেবী, মৃনাল কান্তি বর্মন, সুজন প্রসাদ প্রমুখ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতালকে হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর, নির্যাতনের বিচার-ক্ষতিপুরণ ও বাপ-দাদার জমিতে পূর্ণ অধিকারসহ সাত দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাহেবগঞ্জ এলাকায় তিনজন সাঁওতাল হত্যা, ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও আদিবাসীরা প্রকৃত বিচার পায়নি।
উপরন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) কর্তৃক তদন্তকৃত চার্জশীটে বাদ পড়েছে মামলার প্রধান আসামী এবং সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম।
বক্তারা সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেফতার ও সাঁওতালদের রক্তভেজা তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, যে কোন এলাকার উন্নয়নে ইপিজেড স্থাপন সেই এলাকার মানুষের জন্য অবশ্যই সুখের খবর। কিন্তু সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসী ও বাঙালিদের বাপ-দাদার জমিতে সেখানকার ওয়ারিশগণের সাথে কোন ধরনের স্বাধীন, পূর্ব সম্মতি ছাড়াই ইপিজেড স্থাপনের ঘোষণা আদিবাসী-বাঙালি জনগণকে হতাশ করেছে।
তারা অবিলম্বে তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি করেন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সাঁওতালরা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের ওই জমি তাঁদের বাপ-দাদার দাবি করে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আন্দোলন গড়ে তোলেন। জমি উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। শুরু হয় নানা কর্মসূচি।
ওই বছরের ৬ নভেম্বর জমি থেকে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের তিনজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এই দিনকে ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে ভুক্তভোগীরাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।