ঢাকা ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড Logo ডিবিসির সাংবাদিক সাজুর উপর হামলাকারী কনক কে ১০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ Logo ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৫৮০ Logo পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব Logo নওগাঁ ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে মারধর Logo পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা Logo ৫ বছর পর দেশে এসেছেন শাবানা Logo নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Logo মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো, ট্রাম্পের নতুন আদেশ Logo বরগুনায় নিজ বসতঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

দেশে সিমেন্টের বস্তার মূল্য ৫০০ টাকা ছাড়ানোর শঙ্কা

আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। প্রতি বস্তা সিমেন্ট উৎপাদনে ৫০-৬০ টাকা খরচ বেড়ে গেছে বলে জানান উৎপাদনকারীরা।

এ অবস্থায় সিমেন্ট কম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা পর‌্যায়ে নির্মাণকাজের মূল্যবান উপকরণ সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া দ্বিগুণ বাড়ায় অচিরেই দেশের বাজারে সিমেন্টের দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন শিল্পপণ্যের কাঁচামালের দাম। জাহাজের জ্বালানি (মেরিন ফুয়েল) টনপ্রতি ৫০ শতংশ বেড়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম ব্যবহৃত হয়, যার সবগুলোই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই হলো ক্লিংকার। কাঁচামাল ক্লিংকার প্রতি টন ৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৭৫-৭৯ ডলার হয়েছে। শুধু ক্লিংকারেই ১৫ ডলারের বেশি দাম বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম গড়ে ১০-১২ ডলার বেড়ে গেছে। কাঁচামাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কয়লা, কয়লার দাম বাড়ায় ও করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় কাঁচামালের সংকট তৈরি হওয়ায় দাম বাড়ছে। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও জাহাজসংকটের কারণে জাহাজভাড়া আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলেও জানান এই খাতের উদ্যোক্তারা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব কম্পানির সিমেন্টের দাম এক দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়েছে। শাহ স্পেশাল ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সুপারক্রিট ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকা, স্ক্যান সিমেন্ট ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৭০ টাকা, বেঙ্গল ৪১০ থেকে বেড়ে ৪৩০ টাকা, মীর ৪০৫ থেকে বেড়ে ৪২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কুড়িল এলাকার হেলমি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শামীম হাওলাদার বলেন, ‘রড-সিমেন্টের বাজার অস্থির। এক লাফে সিমেন্টের দাম প্রতি বস্তায় ২০ টাকা বেড়েছে। সামনে আরো বাড়বে। ’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারের ওপরে উঠলে জাহাজভাড়াসহ শিপিং ব্যয় কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উৎপাদকরা।

জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেও প্রতি টনে চার ডলার বেড়ে ক্লিংকারের দাম ৪৬ ডলারে ওঠে। বর্তমানে ক্লিংকারের দাম ৬০ ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে ৭৫-৭৯ ডলারে উঠেছে। মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সিমেন্টের দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের জনপ্রিয় এক সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিমেন্টের কাঁচামালের দাম ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় সিমেন্ট কম্পানিগুলো ব্যাপক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই দীর্ঘদিন চলতে পারবে না। এমতাবস্থায় সিমেন্ট কম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ’ এখনই যদি মূল্য সমন্বয় না করা হয়, তাহলে সিমেন্ট খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও তিনি জানান।

আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সহসভাপতি মো. শহীদ উল্ল্যাহ গতকাল বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে দেশের সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেবে।’ তিনি বলেন, ওই সব দেশ থেকে আসা কাঁচামালের দর এরই মধ্যে দ্বিগুণ বেড়েছে। এ ছাড়া যুক্ত হয়েছে পণ্য পরিবহন খরচ। এরই মধ্যে ওই সব অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে পড়েছে।

ট্যাগস

নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড

দেশে সিমেন্টের বস্তার মূল্য ৫০০ টাকা ছাড়ানোর শঙ্কা

আপডেট সময় ০৮:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০২২

আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। প্রতি বস্তা সিমেন্ট উৎপাদনে ৫০-৬০ টাকা খরচ বেড়ে গেছে বলে জানান উৎপাদনকারীরা।

এ অবস্থায় সিমেন্ট কম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা পর‌্যায়ে নির্মাণকাজের মূল্যবান উপকরণ সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া দ্বিগুণ বাড়ায় অচিরেই দেশের বাজারে সিমেন্টের দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন শিল্পপণ্যের কাঁচামালের দাম। জাহাজের জ্বালানি (মেরিন ফুয়েল) টনপ্রতি ৫০ শতংশ বেড়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম ব্যবহৃত হয়, যার সবগুলোই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই হলো ক্লিংকার। কাঁচামাল ক্লিংকার প্রতি টন ৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৭৫-৭৯ ডলার হয়েছে। শুধু ক্লিংকারেই ১৫ ডলারের বেশি দাম বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম গড়ে ১০-১২ ডলার বেড়ে গেছে। কাঁচামাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কয়লা, কয়লার দাম বাড়ায় ও করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় কাঁচামালের সংকট তৈরি হওয়ায় দাম বাড়ছে। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও জাহাজসংকটের কারণে জাহাজভাড়া আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলেও জানান এই খাতের উদ্যোক্তারা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব কম্পানির সিমেন্টের দাম এক দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়েছে। শাহ স্পেশাল ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সুপারক্রিট ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৪০ টাকা, স্ক্যান সিমেন্ট ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৭০ টাকা, বেঙ্গল ৪১০ থেকে বেড়ে ৪৩০ টাকা, মীর ৪০৫ থেকে বেড়ে ৪২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কুড়িল এলাকার হেলমি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শামীম হাওলাদার বলেন, ‘রড-সিমেন্টের বাজার অস্থির। এক লাফে সিমেন্টের দাম প্রতি বস্তায় ২০ টাকা বেড়েছে। সামনে আরো বাড়বে। ’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারের ওপরে উঠলে জাহাজভাড়াসহ শিপিং ব্যয় কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন উৎপাদকরা।

জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেও প্রতি টনে চার ডলার বেড়ে ক্লিংকারের দাম ৪৬ ডলারে ওঠে। বর্তমানে ক্লিংকারের দাম ৬০ ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে ৭৫-৭৯ ডলারে উঠেছে। মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সিমেন্টের দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের জনপ্রিয় এক সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিমেন্টের কাঁচামালের দাম ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় সিমেন্ট কম্পানিগুলো ব্যাপক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই দীর্ঘদিন চলতে পারবে না। এমতাবস্থায় সিমেন্ট কম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ’ এখনই যদি মূল্য সমন্বয় না করা হয়, তাহলে সিমেন্ট খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও তিনি জানান।

আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সহসভাপতি মো. শহীদ উল্ল্যাহ গতকাল বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে দেশের সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেবে।’ তিনি বলেন, ওই সব দেশ থেকে আসা কাঁচামালের দর এরই মধ্যে দ্বিগুণ বেড়েছে। এ ছাড়া যুক্ত হয়েছে পণ্য পরিবহন খরচ। এরই মধ্যে ওই সব অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে পড়েছে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471