ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা সিলিকন ভ্যালি বলি কেন

অ্যাপলের প্রধান কার্যালয়ের অবস্থান ক্যালিফোর্নিয়ার কুপার্টিনো শহরে। সিলিকন ভ্যালির শহরগুলোতে এমন অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ   প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের হাত থাকলে বলা যেত, সিলিকন ভ্যালিতে তারা হাত ধরাধরি করে চলে। যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলটিকে অনায়াসে বিশ্বের প্রযুক্তিকেন্দ্র বলা যেতে পারে।

অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ইনটেল, এইচপি, ওরাকল, সিসকোসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা সব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সিলিকন ভ্যালিতে। তবে অঞ্চলটি এমন নাম পেল কোথা থেকে? প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নাম? নাকি নামের সঙ্গে মিলিয়ে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো বে-র দক্ষিণের অঞ্চলটিকে বলা হয় সিলিকন ভ্যালি। সান হোসে, সানিভেল, সান্তা ক্লারা, রেডউড সিটি, মাউন্টেন ভিউ, পালো অল্টো, মেনলো পার্ক, কুপার্টিনোসহ বেশ কিছু শহর সিলিকন ভ্যালির অন্তর্গত। বড়জোর পাঁচ দশক হলো অঞ্চলটি এমন নাম পেয়েছে। গত শতকের শুরুর দিকেও বলা হতো ‘ভ্যালি অব হার্টস ডিলাইট’। অমন নামের পেছনের কারণ হলো, ওই অঞ্চলে অসংখ্য ফলের বাগান ছিল। পাকা ফলের মধুর রসের সঙ্গে নিশ্চয় ম ম করা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত।

১৯৫০-এর দশকের আশপাশে সিলিকন চিপনির্ভর উদ্ভাবক ও উৎপাদনকারীরা এল শহরগুলোতে। বলা যেতে পারে, ওই অঞ্চলে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছিল। কম্পিউটার তো বটেই, কম্পিউটার ঘরানার সবকিছুতে সিলিকন চিপ ব্যবহার করা হয়—মোবাইল ফোন, প্রিন্টার, গেম খেলার যন্ত্র থেকে শুরু ক্যালকুলেটর পর্যন্ত। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এমন অসংখ্য মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে উঠল। তবে সিলিকন ভ্যালি নাম পেয়েছে আরও বছর বিশেক পর।

ঠিক কে নামটির প্রচলন করেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে জনপ্রিয়করণের পেছনের মানুষটি যে ডন হফলার, তা মোটামুটি পরিষ্কার। সে সময় তিনি ছিলেন ‘ইলেকট্রনিক নিউজ’ ট্যাবলয়েডের প্রযুক্তি প্রতিবেদক। ১৯৭১ সালে ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়ে বেশ কিছু কলাম লিখেছিলেন তিনি।

জেমস ভিনক্লার নামের এক লেখক সত্তরের দশকে কাজ করেছেন হফলারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্যমতে, হফলারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় একজন বিপণন কর্মজীবী (মার্কেটার) সান্তা ক্লারা ভ্যালিকে ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করেন হফলার। ভিনক্লার বলেন, হফলারের চোখ সঙ্গে সঙ্গে দীপ্তিময় হয়ে ওঠে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘ওই নামটি এল কোত্থেকে?’ সেই বিপণন কর্মজীবী বলেছিলেন, ‘ওহ, মানুষ তো ও নামেই ডেকে থাকে।’

পরবর্তী তিন সপ্তাহে সান্তা ক্লারার সিলিকন কম্পিউটার চিপশিল্প নিয়ে পরপর বেশ কটি নিবন্ধ লেখেন হফলার। প্রতিটি নিবন্ধের শিরোনামে জুড়ে দেন ‘সিলিকন ভ্যালি যুক্তরাষ্ট্র’। সে থেকে নামটি পাকাপোক্ত হয়ে গেল।

 

কেউ কেউ অবশ্য বলেন, হফলারের নিবন্ধগুলোর আগে থেকেই সিলিকন ভ্যালি নামটি পরিচিত ছিল। বিশেষ করে যাঁরা সান ফ্রান্সিসকো বে অঞ্চলে ব্যবসায়ের জন্য যেতেন, তাঁরা ওই নামে ডাকতেন। তবে ঠিক কে সে নামের প্রচলন করেন, তা এখনো অজ্ঞাত।

সে যা হোক, ডন হফলারের মুনশিয়ানা কেবল সিলিকন ভ্যালি নামটির জনপ্রিয়করণের জন্যই নয়। লেখক মাইকেল এস ম্যালোন তাঁর ‘দ্য বিগ স্কোর’ বইয়ে লিখেছেন, হফলারের নিবন্ধগুলো ওই অঞ্চলকে ‘টেকনোলজি হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছে। কারণ, লেখায় উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার প্রযুক্তিশিল্পকে বিশেষায়িত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করতেন হফলার। সিলিকন ভ্যালি তৈরির পেছনে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, পেশাজীবী, উদ্ভাবক, প্রকৌশলীদের যেমন অবদান আছে, হফলারের অবদানও কম নয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ এপ্রিল সান ফ্রান্সিসকোতে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান এই সংবাদকর্মী।

সূত্র.প্রথম আলো

ট্যাগস

আমরা সিলিকন ভ্যালি বলি কেন

আপডেট সময় ০৭:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০২১

স্টাফ রিপোর্টারঃ   প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের হাত থাকলে বলা যেত, সিলিকন ভ্যালিতে তারা হাত ধরাধরি করে চলে। যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলটিকে অনায়াসে বিশ্বের প্রযুক্তিকেন্দ্র বলা যেতে পারে।

অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ইনটেল, এইচপি, ওরাকল, সিসকোসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা সব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় সিলিকন ভ্যালিতে। তবে অঞ্চলটি এমন নাম পেল কোথা থেকে? প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নাম? নাকি নামের সঙ্গে মিলিয়ে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো বে-র দক্ষিণের অঞ্চলটিকে বলা হয় সিলিকন ভ্যালি। সান হোসে, সানিভেল, সান্তা ক্লারা, রেডউড সিটি, মাউন্টেন ভিউ, পালো অল্টো, মেনলো পার্ক, কুপার্টিনোসহ বেশ কিছু শহর সিলিকন ভ্যালির অন্তর্গত। বড়জোর পাঁচ দশক হলো অঞ্চলটি এমন নাম পেয়েছে। গত শতকের শুরুর দিকেও বলা হতো ‘ভ্যালি অব হার্টস ডিলাইট’। অমন নামের পেছনের কারণ হলো, ওই অঞ্চলে অসংখ্য ফলের বাগান ছিল। পাকা ফলের মধুর রসের সঙ্গে নিশ্চয় ম ম করা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত।

১৯৫০-এর দশকের আশপাশে সিলিকন চিপনির্ভর উদ্ভাবক ও উৎপাদনকারীরা এল শহরগুলোতে। বলা যেতে পারে, ওই অঞ্চলে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছিল। কম্পিউটার তো বটেই, কম্পিউটার ঘরানার সবকিছুতে সিলিকন চিপ ব্যবহার করা হয়—মোবাইল ফোন, প্রিন্টার, গেম খেলার যন্ত্র থেকে শুরু ক্যালকুলেটর পর্যন্ত। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এমন অসংখ্য মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে উঠল। তবে সিলিকন ভ্যালি নাম পেয়েছে আরও বছর বিশেক পর।

ঠিক কে নামটির প্রচলন করেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে জনপ্রিয়করণের পেছনের মানুষটি যে ডন হফলার, তা মোটামুটি পরিষ্কার। সে সময় তিনি ছিলেন ‘ইলেকট্রনিক নিউজ’ ট্যাবলয়েডের প্রযুক্তি প্রতিবেদক। ১৯৭১ সালে ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর শিল্প নিয়ে বেশ কিছু কলাম লিখেছিলেন তিনি।

জেমস ভিনক্লার নামের এক লেখক সত্তরের দশকে কাজ করেছেন হফলারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্যমতে, হফলারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের সময় একজন বিপণন কর্মজীবী (মার্কেটার) সান্তা ক্লারা ভ্যালিকে ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহণ করেন হফলার। ভিনক্লার বলেন, হফলারের চোখ সঙ্গে সঙ্গে দীপ্তিময় হয়ে ওঠে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘ওই নামটি এল কোত্থেকে?’ সেই বিপণন কর্মজীবী বলেছিলেন, ‘ওহ, মানুষ তো ও নামেই ডেকে থাকে।’

পরবর্তী তিন সপ্তাহে সান্তা ক্লারার সিলিকন কম্পিউটার চিপশিল্প নিয়ে পরপর বেশ কটি নিবন্ধ লেখেন হফলার। প্রতিটি নিবন্ধের শিরোনামে জুড়ে দেন ‘সিলিকন ভ্যালি যুক্তরাষ্ট্র’। সে থেকে নামটি পাকাপোক্ত হয়ে গেল।

 

কেউ কেউ অবশ্য বলেন, হফলারের নিবন্ধগুলোর আগে থেকেই সিলিকন ভ্যালি নামটি পরিচিত ছিল। বিশেষ করে যাঁরা সান ফ্রান্সিসকো বে অঞ্চলে ব্যবসায়ের জন্য যেতেন, তাঁরা ওই নামে ডাকতেন। তবে ঠিক কে সে নামের প্রচলন করেন, তা এখনো অজ্ঞাত।

সে যা হোক, ডন হফলারের মুনশিয়ানা কেবল সিলিকন ভ্যালি নামটির জনপ্রিয়করণের জন্যই নয়। লেখক মাইকেল এস ম্যালোন তাঁর ‘দ্য বিগ স্কোর’ বইয়ে লিখেছেন, হফলারের নিবন্ধগুলো ওই অঞ্চলকে ‘টেকনোলজি হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছে। কারণ, লেখায় উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার প্রযুক্তিশিল্পকে বিশেষায়িত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করতেন হফলার। সিলিকন ভ্যালি তৈরির পেছনে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, পেশাজীবী, উদ্ভাবক, প্রকৌশলীদের যেমন অবদান আছে, হফলারের অবদানও কম নয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ এপ্রিল সান ফ্রান্সিসকোতে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান এই সংবাদকর্মী।

সূত্র.প্রথম আলো


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471