ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড Logo ডিবিসির সাংবাদিক সাজুর উপর হামলাকারী কনক কে ১০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ Logo ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৫৮০ Logo পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব Logo নওগাঁ ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে মারধর Logo পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা Logo ৫ বছর পর দেশে এসেছেন শাবানা Logo নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Logo মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো, ট্রাম্পের নতুন আদেশ Logo বরগুনায় নিজ বসতঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

লালমনিরহাটে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা

অর্থনীতি ডেস্ক: আসন্ন শীতে সবজির বাজার দখল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।শীতকালেই শুধু নয়, সারা বছর সবজির চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন এ জেলার চাষিরা।

শীতকালে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে যায় এখানকার চাষিদের উৎপাদিত নানা জাতের সবজি। সারা দেশের বড় বড় বাজারের পাইকাররা সরাসরি মাঠে এসে কৃষকদের সবজি ক্রয় করেন।

পরদিন সকালেই শহরের ভোক্তাদের কাছে টাটকা সবজি বিক্রি করেন। সরাসরি মাঠে সবজি বিক্রি হওয়ায় কোনো ঝামেলা হয় না চাষিদের। ফলে দিনদিন সবজি চাষ বাড়ছে লামনিরহাটে ।

জেলাটির সব থেকে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নে। সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত কমলাবাড়ী। আদিতমারীতে রবি মৌসুমে এক হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ৩৯৬ হেক্টর। তবে চাষাবাদ চলমান রয়েছে।

এছাড়া সবজি পুষ্টি বাগানের আওতায় চলতি মৌসুমে ২৫৮ জন চাষিকে বিনামূল্যে সবজি বীজ ও চাষাবাদ খরচ বাবদ কৃষক প্রতি এক হাজার ৯৩৫ টাকা এবং কৃষি প্রণোদনার আওতায় ১৭৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে ১৪টি পদে সবজি বীজ দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানান, আসন্ন শীতকালের বাজারে চাহিদা পূরণে আগাম সবজি চাষাবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে সবজির চারা প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। চলছে পরিচর্যা ও রোপন করার জমি তৈরির কাজ।

চারা রোপন করতে মাঠে জৈব সার প্রয়োগ করছেন চাষিরা। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই ফুলকপি, বাঁধা কপির চারা রোপন করবেন তারা। রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে শীতের বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধা কপি। এরই মধ্যে লাউ, ঝিঙ্গা, মুলা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শিম, টমেটো, বেগুন কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে বলেও জানান চাষিরা।

সবজি এলাকা খ্যাত কমলাবাড়ীর চড়িতাবাড়ী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, ফুলকপি চাষের জন্য জৈব সার দিয়ে আমার এক একর জমি প্রস্তুত করেছি। সবজির বীজ বপন করেছি কিছুদিন আগে।

বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আমার জমির ফুলকপি বাজারে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে।

রমজান আলী আরও বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করছি। গত বছর এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি।

একই গ্রামের চাষি আলাল উদ্দিন  বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ করে ১১ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই লাউ বাজারে বিক্রি করা যাবে।

বর্তমানে প্রতি পিস লাউ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হবে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। লাউ শেষ হলে বরবটির চারা একই মাচায় বড় হবে। একই খরচে দুই ফসল চাষ করা যায়।

আলাল উদ্দিন বলেন, লাউ, শিম, বরবটি, পটল, করলা, শসা প্রভৃতি চাষাবাদে মাচা তৈরিতে বেশি খরচ হয়। তাই একই মাচায় একাধিক ফসল ঘরে তুলেন চাষিরা। মাঠেই সবজি বিক্রি হওয়ায় বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই।

১১ শতাংশ জমিতে লাউ ও বরবটি চাষাবাদে ৩৫-৪০ হাজার টাকা আয় করার লক্ষ্য রয়েছে। আমি আমার মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে চাষ করা বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রি করে দুই ছেলেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করি।

এসব অঞ্চলের বেশ কিছু ভূমিহীন চাষি রয়েছেন। যারা জমি বর্গা বা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।

এসব সবজি ক্ষেতে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে চলে অনেক কৃষি শ্রমিকের সংসার। অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সারা বছর কাজ থাকে না। কিন্তু এ অঞ্চলে সারা বছরই সবজি চাষাবাদ হওয়ার কারণে কৃষি শ্রমিকদের কাজের অভাব হয় না।

একই সঙ্গে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সারা দেশের বাজারে পাঠাতে ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীও গড়ে উঠেছে লালমনিরহাটে। তারা বড় বড় পাইকারদের টাকায় কৃষকদের সবজি ক্ষেতে ক্রয় করে ট্রাকে করে আড়তে পাঠান।

সবজি চাষাবাদের কারণে এভাবেই নানামুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এ জেলায়। কৃষি প্রধান এ জেলার অর্থনীতির বড় অংশই আসে সবজি চাষাবাদ থেকে। আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলীনুর রহমান  বলেন, জেলার সব থেকে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় কমলাবাড়ী ইউনিয়নে।

বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলন ও মূল্য ভালো থাকায় সবজিতে কৃষকরা বেশ মুনাফা পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশা রাখি।

ট্যাগস

নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড

লালমনিরহাটে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

আপডেট সময় ০৯:৩০:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

অর্থনীতি ডেস্ক: আসন্ন শীতে সবজির বাজার দখল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।শীতকালেই শুধু নয়, সারা বছর সবজির চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করেন এ জেলার চাষিরা।

শীতকালে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে যায় এখানকার চাষিদের উৎপাদিত নানা জাতের সবজি। সারা দেশের বড় বড় বাজারের পাইকাররা সরাসরি মাঠে এসে কৃষকদের সবজি ক্রয় করেন।

পরদিন সকালেই শহরের ভোক্তাদের কাছে টাটকা সবজি বিক্রি করেন। সরাসরি মাঠে সবজি বিক্রি হওয়ায় কোনো ঝামেলা হয় না চাষিদের। ফলে দিনদিন সবজি চাষ বাড়ছে লামনিরহাটে ।

জেলাটির সব থেকে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নে। সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত কমলাবাড়ী। আদিতমারীতে রবি মৌসুমে এক হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ৩৯৬ হেক্টর। তবে চাষাবাদ চলমান রয়েছে।

এছাড়া সবজি পুষ্টি বাগানের আওতায় চলতি মৌসুমে ২৫৮ জন চাষিকে বিনামূল্যে সবজি বীজ ও চাষাবাদ খরচ বাবদ কৃষক প্রতি এক হাজার ৯৩৫ টাকা এবং কৃষি প্রণোদনার আওতায় ১৭৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে ১৪টি পদে সবজি বীজ দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানান, আসন্ন শীতকালের বাজারে চাহিদা পূরণে আগাম সবজি চাষাবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে সবজির চারা প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। চলছে পরিচর্যা ও রোপন করার জমি তৈরির কাজ।

চারা রোপন করতে মাঠে জৈব সার প্রয়োগ করছেন চাষিরা। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই ফুলকপি, বাঁধা কপির চারা রোপন করবেন তারা। রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে শীতের বাজারে আসবে চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধা কপি। এরই মধ্যে লাউ, ঝিঙ্গা, মুলা বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শিম, টমেটো, বেগুন কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে বলেও জানান চাষিরা।

সবজি এলাকা খ্যাত কমলাবাড়ীর চড়িতাবাড়ী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, ফুলকপি চাষের জন্য জৈব সার দিয়ে আমার এক একর জমি প্রস্তুত করেছি। সবজির বীজ বপন করেছি কিছুদিন আগে।

বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচাতে চারা বীজের বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিতে হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আমার জমির ফুলকপি বাজারে পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে।

রমজান আলী আরও বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ করছি। গত বছর এক একর জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা লাভ করেছি। চলমান বাজার ও আবহাওয়া ভালো থাকলে একই জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা রাখছি।

একই গ্রামের চাষি আলাল উদ্দিন  বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকা খরচ করে ১১ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই লাউ বাজারে বিক্রি করা যাবে।

বর্তমানে প্রতি পিস লাউ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হবে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। লাউ শেষ হলে বরবটির চারা একই মাচায় বড় হবে। একই খরচে দুই ফসল চাষ করা যায়।

আলাল উদ্দিন বলেন, লাউ, শিম, বরবটি, পটল, করলা, শসা প্রভৃতি চাষাবাদে মাচা তৈরিতে বেশি খরচ হয়। তাই একই মাচায় একাধিক ফসল ঘরে তুলেন চাষিরা। মাঠেই সবজি বিক্রি হওয়ায় বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই।

১১ শতাংশ জমিতে লাউ ও বরবটি চাষাবাদে ৩৫-৪০ হাজার টাকা আয় করার লক্ষ্য রয়েছে। আমি আমার মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে চাষ করা বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রি করে দুই ছেলেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করি।

এসব অঞ্চলের বেশ কিছু ভূমিহীন চাষি রয়েছেন। যারা জমি বর্গা বা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।

এসব সবজি ক্ষেতে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে চলে অনেক কৃষি শ্রমিকের সংসার। অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সারা বছর কাজ থাকে না। কিন্তু এ অঞ্চলে সারা বছরই সবজি চাষাবাদ হওয়ার কারণে কৃষি শ্রমিকদের কাজের অভাব হয় না।

একই সঙ্গে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সারা দেশের বাজারে পাঠাতে ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীও গড়ে উঠেছে লালমনিরহাটে। তারা বড় বড় পাইকারদের টাকায় কৃষকদের সবজি ক্ষেতে ক্রয় করে ট্রাকে করে আড়তে পাঠান।

সবজি চাষাবাদের কারণে এভাবেই নানামুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এ জেলায়। কৃষি প্রধান এ জেলার অর্থনীতির বড় অংশই আসে সবজি চাষাবাদ থেকে। আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলীনুর রহমান  বলেন, জেলার সব থেকে বেশি সবজি চাষাবাদ হয় কমলাবাড়ী ইউনিয়নে।

বেশি ফলনের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলন ও মূল্য ভালো থাকায় সবজিতে কৃষকরা বেশ মুনাফা পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশা রাখি।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471