ঢাকা ১০:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড Logo ডিবিসির সাংবাদিক সাজুর উপর হামলাকারী কনক কে ১০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ Logo ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৫৮০ Logo পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব Logo নওগাঁ ভর্তি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে মারধর Logo পদত্যাগ করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা Logo ৫ বছর পর দেশে এসেছেন শাবানা Logo নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Logo মার্কিন বাণিজ্যে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে মিত্র দেশগুলো, ট্রাম্পের নতুন আদেশ Logo বরগুনায় নিজ বসতঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

রাজশাহীতে দিন গেলেই আমের দাম মণপ্রতি বাড়ছে ১০০ টাকা!

আম বাজার

অর্থনীতি ডেস্কঃ  রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার অধিবাসী সেলিম আহমেদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। রোববার (১৪ জুন) সকালে পাশেই থাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়েছিলেন আম কিনতে।

আমের মণ কত? এই প্রশ্ন করতেই দারাজ কণ্ঠে দোকানি বললেন, ২ হাজার ৮০০ টাকা। এ কথা শুনেই সেলিম আহমেদের চোখ ছানাবড়া! কারণ তিনদিন আগেই আম কিনেছিলেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়।

তবে কেবল সেলিম আহমেদ নন, মৌসুম শুরুর পর যারা প্রায়দিনই আম কেনেন তাদের অবস্থাও একই। আজ যে দামে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কাল আর সেই দাম থাকছে না।

রাত পোহালেই একলাফে মণপ্রতি ১০০ টাকা বাড়ছে একই আমের দাম। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় এবার তাই রাজশাহীর আমের বাজারের চিত্র ভিন্ন।

অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে রাজশাহী শহরের আমের বাজার। শহরের এক প্রান্তে বসে যদি কোনো একজন ব্যবসায়ী ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দাম হাঁকছেন,-

অন্য প্রান্তে গিয়েও দেখা যাচ্ছে সেই একই দাম। ফলে রিকশাভাড়া দিয়ে যারা এলাকা এলাকা ঘুরে একটু সাশ্রয়ী দামে আম কিনতে চাইছেন তাদের সে আশায় ‘গুড়ে বালি’।

সবখানে একই দাম। মাঝখান থেকে হিসাবের খাতায় যোগ হচ্ছে রিকশাভাড়ার বাড়তি খরচ। আমের এই আকাশছোঁয়া দামে-

অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এই অবস্থায় জাত ও মান ভেদে আমের দাম বেঁধে দেওয়ার দাবি করছেন ভোক্তারা।

সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে বড় আমের আড়ত শালবাগান, নওদাপাড়া, শিরোইল বাস টার্মিনাল, স্টেশন বাজার,-

সাহেব বাজার, স্বর্ণকারপট্টি, লক্ষ্মীপুর ও কোর্ট চত্বর ঘুরে আমের এই লাগামহীন দামের কোনো তারতম্য চোখে পড়েনি আজ।

অথচ আমের এই ভরা মৌসুমে প্রতিবারই দাম কম থাকে বলে জানান, মহানগরীর শালবাগান আমের আড়তে আসা মঈন উদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই যখন আম ওঠে তখন দাম কম থাকে। আর মৌসুম যতই শেষের দিকে যায় ততই দাম বাড়ে। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম।

মৌসুম শুরু থেকেই রাজশাহীর আমের দাম চড়া। আমের বাজারে গিয়ে কেউই স্বস্তি নেই। ঝড়-ঝঞ্ঝা, আমপান ও করোনার ওজর তুলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম হাঁকছেন।

২৪ ঘণ্টাতেই মণপ্রতি ১০০ টাকা করে দাম বাড়াচ্ছেন। রাজশাহীর অধিবাসীয় হওয়ায় নানান কারণে তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ অন্যান্য মানুষকেও আম পাঠাতেই হচ্ছে।

সবমিলিয়ে আম ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। দাম বেশি হলেও কিছু করার নেই। বেশি দামেই আম কিনে পাঠাতে হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রিয়জনদের কাছে।

মহানগরীর আমের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে জাত আম গোপালভোগ। ফলন কম হওয়ায় এবার হাতেগোনা কয়েকদিনই ব্যবসায়ীর ঝুড়িতে ছিল এই সুমিষ্ট আম।

তাই যারা একটু দাম কমলে কিনবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, তারা এবার জিভে গোপালভোগ আমের স্বাদ উপভোগ করতে পারেননি।

বর্তমানে রাজশাহীর বাজার দখল করে আছে কেবলই ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর)। আর মাত্রই উঠতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম।

এছাড়া দামের কথা বলার আর কোনো অবকাশ নেই! কারণ  শনিবারই (১৩ জুন) বাজারে যে আম ২ হাজার ৭০০ টাকা ছিল আজ রোববার (১৪ জুন) সকাল থেকে তা ২ হাজার ৮০০ বিক্রি হচ্ছে।

যদিও এখন দাম বেশি নেওয়া ছাড়া কোনো উপায়ই নেই বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে নানান কারণে ফলন কমছে। আর উৎপাদন কমলে দাম বাড়বেই।

বাগান আম কম। এরপরও দেরি করে আম ভাঙা হচ্ছে জানিয়ে মহানগরীর শালবাগান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, এখনকার এই আম বাজার তাদের কাছেও ব্যতিক্রম।

কারণ শুরু থেকেই দাম বেশি। কিন্তু কিছুই করার নেই। করোনার জন্য এবার আমগাছে যথাযথ পরিচর্যা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এতে ফলন এমনিতেই কমেছে। তার ওপর গাছে মুকুল আসার শুরু থেকেই আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। বৈশাখজুড়েই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ধকল গেছে আমের ওপর।

সবশেষে ঘূর্ণিঝড় আমপানে সব বাগানেই উঠতি আম ঝরেছে। তাই শেষ পর্যন্ত গাছে যে ফলন পাওয়া গেছে তাই নামানো হচ্ছে। আর সরবরাহ কমায় দাম বেশি পড়ছে।

আর দেরি হওয়ায় এবার আম পরিপক্ক হয়েই বাগান থেকে নামছে। তাই সবাই নিশ্চিন্তে এই নিরাপদ আম খেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।

তিনি বলেন, গাছ থেকে পরিপক্ক আম নামানোর জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। নানান কারণে তার চেয়েও দেরিতে আম নামাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এতে বিষমুক্ত আম বাজারজাতকরণের বিষয়টি অন্তত নিশ্চিত হয়েছে। আর করোনা পরিস্থিতিতে চাষি বা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য আমের বিপণন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ডাক বিভাগের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রান্তিক চাষিরা আম পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছেন। নামমাত্র মূল্যে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ঢাকায় আম পাঠাতে পারছেন। এরপরও আমের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ালে তা যাচাই করে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

ট্যাগস

নওগাঁয় নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান, পরিচালককে কারাদণ্ড

রাজশাহীতে দিন গেলেই আমের দাম মণপ্রতি বাড়ছে ১০০ টাকা!

আপডেট সময় ০৫:১০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০

অর্থনীতি ডেস্কঃ  রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার অধিবাসী সেলিম আহমেদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। রোববার (১৪ জুন) সকালে পাশেই থাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়েছিলেন আম কিনতে।

আমের মণ কত? এই প্রশ্ন করতেই দারাজ কণ্ঠে দোকানি বললেন, ২ হাজার ৮০০ টাকা। এ কথা শুনেই সেলিম আহমেদের চোখ ছানাবড়া! কারণ তিনদিন আগেই আম কিনেছিলেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়।

তবে কেবল সেলিম আহমেদ নন, মৌসুম শুরুর পর যারা প্রায়দিনই আম কেনেন তাদের অবস্থাও একই। আজ যে দামে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কাল আর সেই দাম থাকছে না।

রাত পোহালেই একলাফে মণপ্রতি ১০০ টাকা বাড়ছে একই আমের দাম। গেলো কয়েক বছরের তুলনায় এবার তাই রাজশাহীর আমের বাজারের চিত্র ভিন্ন।

অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে রাজশাহী শহরের আমের বাজার। শহরের এক প্রান্তে বসে যদি কোনো একজন ব্যবসায়ী ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দাম হাঁকছেন,-

অন্য প্রান্তে গিয়েও দেখা যাচ্ছে সেই একই দাম। ফলে রিকশাভাড়া দিয়ে যারা এলাকা এলাকা ঘুরে একটু সাশ্রয়ী দামে আম কিনতে চাইছেন তাদের সে আশায় ‘গুড়ে বালি’।

সবখানে একই দাম। মাঝখান থেকে হিসাবের খাতায় যোগ হচ্ছে রিকশাভাড়ার বাড়তি খরচ। আমের এই আকাশছোঁয়া দামে-

অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এই অবস্থায় জাত ও মান ভেদে আমের দাম বেঁধে দেওয়ার দাবি করছেন ভোক্তারা।

সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে বড় আমের আড়ত শালবাগান, নওদাপাড়া, শিরোইল বাস টার্মিনাল, স্টেশন বাজার,-

সাহেব বাজার, স্বর্ণকারপট্টি, লক্ষ্মীপুর ও কোর্ট চত্বর ঘুরে আমের এই লাগামহীন দামের কোনো তারতম্য চোখে পড়েনি আজ।

অথচ আমের এই ভরা মৌসুমে প্রতিবারই দাম কম থাকে বলে জানান, মহানগরীর শালবাগান আমের আড়তে আসা মঈন উদ্দিন।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই যখন আম ওঠে তখন দাম কম থাকে। আর মৌসুম যতই শেষের দিকে যায় ততই দাম বাড়ে। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম।

মৌসুম শুরু থেকেই রাজশাহীর আমের দাম চড়া। আমের বাজারে গিয়ে কেউই স্বস্তি নেই। ঝড়-ঝঞ্ঝা, আমপান ও করোনার ওজর তুলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম হাঁকছেন।

২৪ ঘণ্টাতেই মণপ্রতি ১০০ টাকা করে দাম বাড়াচ্ছেন। রাজশাহীর অধিবাসীয় হওয়ায় নানান কারণে তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ অন্যান্য মানুষকেও আম পাঠাতেই হচ্ছে।

সবমিলিয়ে আম ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। দাম বেশি হলেও কিছু করার নেই। বেশি দামেই আম কিনে পাঠাতে হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রিয়জনদের কাছে।

মহানগরীর আমের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে জাত আম গোপালভোগ। ফলন কম হওয়ায় এবার হাতেগোনা কয়েকদিনই ব্যবসায়ীর ঝুড়িতে ছিল এই সুমিষ্ট আম।

তাই যারা একটু দাম কমলে কিনবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, তারা এবার জিভে গোপালভোগ আমের স্বাদ উপভোগ করতে পারেননি।

বর্তমানে রাজশাহীর বাজার দখল করে আছে কেবলই ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর)। আর মাত্রই উঠতে শুরু করেছে ল্যাংড়া আম।

এছাড়া দামের কথা বলার আর কোনো অবকাশ নেই! কারণ  শনিবারই (১৩ জুন) বাজারে যে আম ২ হাজার ৭০০ টাকা ছিল আজ রোববার (১৪ জুন) সকাল থেকে তা ২ হাজার ৮০০ বিক্রি হচ্ছে।

যদিও এখন দাম বেশি নেওয়া ছাড়া কোনো উপায়ই নেই বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে নানান কারণে ফলন কমছে। আর উৎপাদন কমলে দাম বাড়বেই।

বাগান আম কম। এরপরও দেরি করে আম ভাঙা হচ্ছে জানিয়ে মহানগরীর শালবাগান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, এখনকার এই আম বাজার তাদের কাছেও ব্যতিক্রম।

কারণ শুরু থেকেই দাম বেশি। কিন্তু কিছুই করার নেই। করোনার জন্য এবার আমগাছে যথাযথ পরিচর্যা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এতে ফলন এমনিতেই কমেছে। তার ওপর গাছে মুকুল আসার শুরু থেকেই আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল। বৈশাখজুড়েই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ধকল গেছে আমের ওপর।

সবশেষে ঘূর্ণিঝড় আমপানে সব বাগানেই উঠতি আম ঝরেছে। তাই শেষ পর্যন্ত গাছে যে ফলন পাওয়া গেছে তাই নামানো হচ্ছে। আর সরবরাহ কমায় দাম বেশি পড়ছে।

আর দেরি হওয়ায় এবার আম পরিপক্ক হয়েই বাগান থেকে নামছে। তাই সবাই নিশ্চিন্তে এই নিরাপদ আম খেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।

তিনি বলেন, গাছ থেকে পরিপক্ক আম নামানোর জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। নানান কারণে তার চেয়েও দেরিতে আম নামাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এতে বিষমুক্ত আম বাজারজাতকরণের বিষয়টি অন্তত নিশ্চিত হয়েছে। আর করোনা পরিস্থিতিতে চাষি বা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য আমের বিপণন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ডাক বিভাগের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রান্তিক চাষিরা আম পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছেন। নামমাত্র মূল্যে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ঢাকায় আম পাঠাতে পারছেন। এরপরও আমের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ালে তা যাচাই করে দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471