ঢাকা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩ বছর ধরে তাণ্ডব চালাতে পারে করোনা ভাইরাস!

প্রতীকী ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাবানলের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ভয়াল তাণ্ডবে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী।এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে মহামারি কাটতে লেগে যেতে পারে ১২ থেকে ৩৬ মাস।

নিত্যদিন হু হু করে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। আবার এই মহামারি কেটে গেলেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মৌসুমে স্থানীয় আকারে এটি ফিরে আসতে পারে।

তাই করোনাকে রুখে দিতে কার্যকর টিকা আবিষ্কার ছাড়া আর কোনো পথ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মাইক স্কিনার বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে, এন্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু এটা সারাজীবনের জন্য সুরক্ষা দেবে না।

অধিকাংশ ভাইরোলজিস্ট মনে করেন, এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক বছর কিংবা দুই বছর থাকবে।

স্কিনারের মতে, পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হলেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দেশে এটি থেকে যাবে। তখন এটি মৌসুমী রোগ হিসেবে ফিরে আসবে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মৌসুমী আকারে এটা ফিরে আসলে তখন মৃত্যুর হার কমে আসবে। তবে এটি আরও প্রাণঘাতী হিসেবে ফিরে আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে কার্যকর টিকা কেবল মুক্তি দিতে পারে।

ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ফাহিম ইউনুস বলেছেন, করোনা কখন দূর হবে, এটা বলা অসম্ভব। কেননা, এটা নতুন এবং গতিবিধি পরিবর্তন করছে।

মহামারি আগেও হয়েছে। সেটা চলেও গেছে এবং টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। আগের মহামারিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ১২ থেকে ৩৬ মাস সময় নিয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু কাটতে ১৩ মাস সময় লেগেছিল। এটারও এমন সময়ই লাগতে পারে। কেননা, ইতোমধ্যে কার্যকর টিকা আবিষ্কার অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

আমেরিকার রোগতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ ঋষি দেশাই বলেছেন, আগেরগুলোর সঙ্গে এটা তুলনাও করা যাবে না। কারণ এটা একদমই নতুন ভাইরাস।

তবে আমার অনুমান হচ্ছে, ২০২১ সাল নাগাদ এটা কমে যাবে। সে সময় আমরা বাজারে টিকাও পাবো। ১৮ মাসের মধ্যে তা চলে আসবে।

অন্যদিকে বেলজিয়ান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান ভাইরোলজিস্ট গাইডো বেনহাম বলেন, সম্ভবত এটা কখনো দূর হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত এটাকে দূর করা না যায়।

আর এটার একমাত্র উপায় হলো প্রত্যেক ব্যক্তিকে টিকার আওতায় আনা। এজন্য অনেক বছর লেগে যেতে পারে।

এটা মৌসুমী আকারে শীত, বসন্ত এবং শরৎকালে ফিরে আসতে পারে। একটা দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এই মহামারি কেটে যাবে, যেটা আগের প্রত্যেকটা মহামারির সময় হয়েছে। যখন কোনো চিকিৎসা সেসব রোগের আবিষ্কার হয়নি।

আমরা জানি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু এটা কতদিন সুরক্ষা দেবে তা জানি না। হয়তো এটা কয়েক মাস বা কয়েক বছর সুরক্ষা দেবে। তাই আমরা একে থামাতে পারবো না। কেউ এখনো জানে না, কখন এটি থামবে। তাই টিকা নিয়েই ভাবতে হবে।

আর টিকা আবিষ্কারের বিষয়ে এখনো নানা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সারা পৃথিবীতে ৭৮টি টিকা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ে অধ্যাপক সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে প্রকল্পটি নিয়ে।

বলা হচ্ছে আগামী মধ্য জুনেই তারা মানবদেহে প্রয়োগ শেষে সেপ্টম্বরের রোগীর কাছে টিকা পৌঁছে দেবে।ইতালির একদল গবেষক কার্যকর টিকা আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন। চীনের একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রও দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবেও একটি টিকা তৈরির জন্য কাজ করছে দেশটি।

আমেরিকা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই কয়েক মিলিয়ন টিকার ডোজ বাজারে আনার জন্য বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তিও করেছে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্তের তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার বলেছে, পুরো পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭১ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৬ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ২৯৪ জন।

 

ট্যাগস

সর্বাধিক পঠিত

৩ বছর ধরে তাণ্ডব চালাতে পারে করোনা ভাইরাস!

আপডেট সময় ১০:৪৭:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মে ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাবানলের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ভয়াল তাণ্ডবে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী।এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে মহামারি কাটতে লেগে যেতে পারে ১২ থেকে ৩৬ মাস।

নিত্যদিন হু হু করে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। আবার এই মহামারি কেটে গেলেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মৌসুমে স্থানীয় আকারে এটি ফিরে আসতে পারে।

তাই করোনাকে রুখে দিতে কার্যকর টিকা আবিষ্কার ছাড়া আর কোনো পথ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মাইক স্কিনার বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে, এন্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু এটা সারাজীবনের জন্য সুরক্ষা দেবে না।

অধিকাংশ ভাইরোলজিস্ট মনে করেন, এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক বছর কিংবা দুই বছর থাকবে।

স্কিনারের মতে, পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হলেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দেশে এটি থেকে যাবে। তখন এটি মৌসুমী রোগ হিসেবে ফিরে আসবে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, মৌসুমী আকারে এটা ফিরে আসলে তখন মৃত্যুর হার কমে আসবে। তবে এটি আরও প্রাণঘাতী হিসেবে ফিরে আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে কার্যকর টিকা কেবল মুক্তি দিতে পারে।

ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ফাহিম ইউনুস বলেছেন, করোনা কখন দূর হবে, এটা বলা অসম্ভব। কেননা, এটা নতুন এবং গতিবিধি পরিবর্তন করছে।

মহামারি আগেও হয়েছে। সেটা চলেও গেছে এবং টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। আগের মহামারিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, ১২ থেকে ৩৬ মাস সময় নিয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু কাটতে ১৩ মাস সময় লেগেছিল। এটারও এমন সময়ই লাগতে পারে। কেননা, ইতোমধ্যে কার্যকর টিকা আবিষ্কার অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

আমেরিকার রোগতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ ঋষি দেশাই বলেছেন, আগেরগুলোর সঙ্গে এটা তুলনাও করা যাবে না। কারণ এটা একদমই নতুন ভাইরাস।

তবে আমার অনুমান হচ্ছে, ২০২১ সাল নাগাদ এটা কমে যাবে। সে সময় আমরা বাজারে টিকাও পাবো। ১৮ মাসের মধ্যে তা চলে আসবে।

অন্যদিকে বেলজিয়ান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান ভাইরোলজিস্ট গাইডো বেনহাম বলেন, সম্ভবত এটা কখনো দূর হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত এটাকে দূর করা না যায়।

আর এটার একমাত্র উপায় হলো প্রত্যেক ব্যক্তিকে টিকার আওতায় আনা। এজন্য অনেক বছর লেগে যেতে পারে।

এটা মৌসুমী আকারে শীত, বসন্ত এবং শরৎকালে ফিরে আসতে পারে। একটা দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর এই মহামারি কেটে যাবে, যেটা আগের প্রত্যেকটা মহামারির সময় হয়েছে। যখন কোনো চিকিৎসা সেসব রোগের আবিষ্কার হয়নি।

আমরা জানি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু এটা কতদিন সুরক্ষা দেবে তা জানি না। হয়তো এটা কয়েক মাস বা কয়েক বছর সুরক্ষা দেবে। তাই আমরা একে থামাতে পারবো না। কেউ এখনো জানে না, কখন এটি থামবে। তাই টিকা নিয়েই ভাবতে হবে।

আর টিকা আবিষ্কারের বিষয়ে এখনো নানা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সারা পৃথিবীতে ৭৮টি টিকা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ে অধ্যাপক সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে প্রকল্পটি নিয়ে।

বলা হচ্ছে আগামী মধ্য জুনেই তারা মানবদেহে প্রয়োগ শেষে সেপ্টম্বরের রোগীর কাছে টিকা পৌঁছে দেবে।ইতালির একদল গবেষক কার্যকর টিকা আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন। চীনের একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রও দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবেও একটি টিকা তৈরির জন্য কাজ করছে দেশটি।

আমেরিকা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই কয়েক মিলিয়ন টিকার ডোজ বাজারে আনার জন্য বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তিও করেছে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্তের তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটার বলেছে, পুরো পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত মোট ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭১ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৬ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ২৯৪ জন।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471