একই ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন মো. শাহিনুর ইসলাম। একই উপজেলার ভারুয়া সীমান্ত মডেল কলেজেও দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০২২ সালে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখলে নিয়েছেন শাহিনুর ইসলাম।
অভিযোগ উঠেছে, দলবল নিয়ে তালা ভেঙে কলেজে প্রবেশ করেন তিনি। পরে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বিতাড়িত করে সেই চেয়ারে বসেন শাহিনুর।এদিকে, শাহিনুর ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ড্রয়ারে রাখা ২৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর যোগদানপত্র, শিক্ষার্থীদের মার্কশিট ও সনদ গায়েব এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা লোপাটের অভিযোগ করেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান। এ ঘটনার বিচার চেয়ে শেরপুর জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। এতে কোনো সমাধান না পেয়ে শেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। যার নম্বর ২৪৫/২০২৪।
সীমান্ত মডেল কলেজের অফিস সহকারী মো. মুক্তার হোসেন বলেন, আমি প্রধান সহকারী হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্র ধরতে দেননি সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম। ভর্তি, ফরম-পূরণ ও রেজিস্ট্রেশনসহ সব কাজ নিজেই করতেন তিনি। এমপিওর জন্য কয়েক ধাপে তাকে আমরা টাকাও দিয়েছি। পরে তিনি পদত্যাগ করে চলে যান। এবার সরকার পরিবর্তনের পর আবার ফিরে এসেছেন।কলেজটির জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শাহজালাল বলেন, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমি এই কলেজে শিক্ষকতা করছি। কলেজটি প্রথমে ভালোভাবেই চলছিল। এমপিওর জন্য অন্যান্য শিক্ষকের মতো আমার কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তিনি। এখন আবার তালা ভেঙে প্রতিষ্ঠানে ঢুকে আমাদের সরিয়ে দিয়েছেন। মারার হুমকি দিচ্ছেন। প্রাণ ভয়ে কলেজে যাচ্ছি না। সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান চাই।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, শাহিনুর ইসলাম দুর্নীতি দায় নিয়ে ২০২২ সালে পদত্যাগ করে চলে যান। এরপর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। গত ৭ আগস্ট তিনি তালা ভেঙে কলেজে প্রবেশ করেন এবং আমাকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর থেকে আমাকে আর কলেজে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। আমি ন্যায় বিচার দাবি করছি।ঝিনাইগাতি মহিলা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শাহিনুর ইসলাম আমাদের কলেজের সহকারী শিক্ষক। আমার জানামতে একইসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন না। এ বিষয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হলে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি কোথায় কাজ করবেন।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমি এই এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য আমার পেনশনের টাকায় কেনা জমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। তৎকালীন গ্রামের মানুষসহ আমরা তাকে প্রতিষ্ঠান দেখভাল করার দায়িত্ব দেই। কিন্তু কে জানতো তিনি এতো দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। দায়িত্ব নিয়েই তিনি নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পরেন। অর্থ তছরুপ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি পদত্যাগ করে চলে যান। এখন হঠাৎ করে কলেজের তালা ভেঙে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে পড়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তীতে সকল শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মিলে আমাকে জোর করে তারিখ বিহীন কাগজে অব্যহতিপত্র নেয়। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে করা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেই অভিযোগটি তদন্ত-পূর্বক নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।