ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৩ জনকে

  • স্টাফ রিপোটার :
  • আপডেট সময় ০৬:৫৮:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬১১ Time View

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটককৃতদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ  গণমাধ্যমক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন-ছাত্রলীগের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক থেকে পদত্যাগকৃত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন ও  পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুত্তাকীন সাকিন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।

একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, জালাল আহমেদসহ হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে বেধড়ক মারধর করছেন।শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, তিন শিক্ষার্থীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে গ্রেফতার দেখানো হবে।বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ওই হলে  তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করেন।

একপর্যায়ে তাকে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই চলে আসেন।এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অ্যাডভাইজার আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে।

তাকে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানায়। পরে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পেছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তারা সহায়তা করে অচেতন যুবককে ঢামেকে নিয়ে যায়। পরে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। তিনি উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। এর কিছুদিনের মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড়ভাই মারা যান। পরিবার ও অভিভাবক হারিয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। গেল ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। যারা তাকে চিনতো সবাই সহযোগিতা করতেন। খাবারের বাইরে তার তেমন কোনো চাহিদা ছিল না।

ট্যাগস

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৩ জনকে

আপডেট সময় ০৬:৫৮:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটককৃতদের শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ  গণমাধ্যমক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন-ছাত্রলীগের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক থেকে পদত্যাগকৃত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন ও  পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুত্তাকীন সাকিন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।

একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, জালাল আহমেদসহ হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে বেধড়ক মারধর করছেন।শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, তিন শিক্ষার্থীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে গ্রেফতার দেখানো হবে।বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ওই হলে  তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করেন।

একপর্যায়ে তাকে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই চলে আসেন।এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অ্যাডভাইজার আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে।

তাকে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানায়। পরে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পেছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তারা সহায়তা করে অচেতন যুবককে ঢামেকে নিয়ে যায়। পরে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। তিনি উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। এর কিছুদিনের মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড়ভাই মারা যান। পরিবার ও অভিভাবক হারিয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। গেল ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। যারা তাকে চিনতো সবাই সহযোগিতা করতেন। খাবারের বাইরে তার তেমন কোনো চাহিদা ছিল না।