ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তার পানিবণ্টনে ভারত আপসে রাজি না হলে আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজতে চায় বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক আইনের দ্বারস্থ হতে পারে বাংলাদেশ। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  

পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন—তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি জানিয়েছেন, তবে এই ইস্যুতে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের দ্বারস্থ হতে পারে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে (বাংলাদেশে) সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা আলোচনা করেছি যে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রক্রিয়া ও সংলাপ পুনরায় শুরু করতে হবে। আমাদের গঙ্গা চুক্তিতেও কাজ করতে হবে। যা আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হতে হবে।’

৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদীর ওপর ভারত গজলডোবায় একটি বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কোনো চুক্তি নেই। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আলোকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার চেষ্টা করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক নীতিমালার দিকে ইঙ্গিত করে সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, ‘আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক পানি সমস্যা, এটি অন্যান্য দেশের আইনগত অধিকারের বিবেচনাকেও আমলে নেয়। সুতরাং, কতটা পানি পাওয়া যায় এবং তা পর্যাপ্ত কি না—তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। খুব ন্যূনতম পানি পাওয়া গেলেও আন্তর্জাতিক পানিবণ্টনের নিয়মের কারণে বাংলাদেশে প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ পানিবণ্টন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও নথির অনুমোদনের বিষয়টিও আমলে নিতে পারে।’

এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা বিরোধ সমাধানের জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেই বৈঠকের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেয় ভারত।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘সে সময় উভয় পক্ষই সম্মত হয় এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। বাস্তবতা হলো, আমরা চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে পারিনি। সুতরাং, আমরা সেই জায়গা থেকে চুক্তির খসড়া দিয়েই শুরু করব এবং ভারতকে এগিয়ে আসার ও সংলাপ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানাব।’ উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর রাজ্যে পানির অভাবের কারণ তুলে ধরে এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। সেই থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে।

ট্যাগস

তিস্তার পানিবণ্টনে ভারত আপসে রাজি না হলে আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেবে বাংলাদেশ

আপডেট সময় ০৬:০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজতে চায় বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এই ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক আইনের দ্বারস্থ হতে পারে বাংলাদেশ। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  

পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন—তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি জানিয়েছেন, তবে এই ইস্যুতে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের দ্বারস্থ হতে পারে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে (বাংলাদেশে) সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা আলোচনা করেছি যে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রক্রিয়া ও সংলাপ পুনরায় শুরু করতে হবে। আমাদের গঙ্গা চুক্তিতেও কাজ করতে হবে। যা আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হতে হবে।’

৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদীর ওপর ভারত গজলডোবায় একটি বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে কিন্তু এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের কোনো চুক্তি নেই। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আলোকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার চেষ্টা করা হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক নীতিমালার দিকে ইঙ্গিত করে সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, ‘আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক পানি সমস্যা, এটি অন্যান্য দেশের আইনগত অধিকারের বিবেচনাকেও আমলে নেয়। সুতরাং, কতটা পানি পাওয়া যায় এবং তা পর্যাপ্ত কি না—তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। খুব ন্যূনতম পানি পাওয়া গেলেও আন্তর্জাতিক পানিবণ্টনের নিয়মের কারণে বাংলাদেশে প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ পানিবণ্টন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও নথির অনুমোদনের বিষয়টিও আমলে নিতে পারে।’

এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে সর্বশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা বিরোধ সমাধানের জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেই বৈঠকের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেয় ভারত।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘সে সময় উভয় পক্ষই সম্মত হয় এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। বাস্তবতা হলো, আমরা চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে পারিনি। সুতরাং, আমরা সেই জায়গা থেকে চুক্তির খসড়া দিয়েই শুরু করব এবং ভারতকে এগিয়ে আসার ও সংলাপ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানাব।’ উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর রাজ্যে পানির অভাবের কারণ তুলে ধরে এটিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। সেই থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির বিষয়টি ঝুলে আছে।