নওগাঁয় পশুর চামড়ার প্রকৃত দাম না পেয়ে ক্ষোভে অভিমানে অনেকে সড়কে ফেলে দিয়েছেন । কেউ কেউ চামড়া ফ্রিতে দিয়েছেন বেপারীদের।
সোমবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় চামড়া গুদাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফড়িয়ারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা, ভ্যান এবং চার্জারে করে চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। ঈদের প্রথম দিন দুপুরে চামড়া নিয়ে এসে কিছু ফড়িয়াকে বিক্রি করতে দেখা গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় কোরবানি পশুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৭ লাখ। নওগাঁয় কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার।
নওগাঁ আত্রাই উপজেলার বান্ধাইঘরা এলাকার মোহাম্মদ আলী সোমবার দুপুরে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খাসির একটা চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন। সেখানে কথা হয় তিনি বলেন, ‘গত ৫ বছর ধরে ঈদুল আজহা দিন এলেই ব্যবসায়ীরা গরিবের হক মেরে খাওয়ার শুরু করছে। ৫০ হাজার টাকার খাসির চামড়া দাম দিতে চাচ্ছে ১৫ টাকা। যে সকল ব্যবসায়ীরা গরিবের হক মেরে খাচ্ছে তারা মানুষ নয় অমানুষ বলে জানান তিনি।’
ঈদুল আজহা এলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়ার টাকা সংগ্রহ করেন শহরের পৌর এলাকার মুক্তির মোড়ের রিকশা চালক করিম দেওয়ান (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা কুরবানি দিয়েছে। সকাল থেকে তাদের বাড়িতে যাচ্ছি। গত কয়েক বছর থেকে ১০০ টাকা ২০০ টাকা পেলেও এবার ৬০ টাকার মতো পেয়েছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে করিম দেওয়ান বলেন, ‘গরিবের হক মেরে খাওয়ার ফল আল্লাহ সহ্য করবেন না।’
নওগাঁর আরজি নওগাঁ এলাকার সামাদ বলেন, ‘প্রতি বছরই মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে টাকা সংগ্রহ করি। এইবার যার বাড়িতেই গেছি সবাই বলে চামড়ার দাম কম। তাই, ব্যবসায়ীদের চামড়া বিনামূল্যে দিয়ে দিছে। আমার মতো গরিব মানুষের হকের টাকা মাইরা খাইয়া ঠিক হইতাছে না। গরিবের হক মেরে খাওয়ার বিচার আল্লাহ করবে।’
উকিল পাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ৪টি খাসি ও ১টি গরু কোরবানি করা হয়। কিন্তু দিন গড়িয়ে বিকেল হলেও চামড়ার ক্রেতা পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় ফড়িয়া ব্যবসায়ী মোনায়েমকে ডেকে এনে খাসির চামড়াগুলো দিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বাজারে গিয়ে ৪টি খাসির চামড়া মাত্র ৪০ টাকা বিক্রি করেন।
মোনায়েম বলেন, ‘৪ টি খাসির চামড়া মাত্র ৪০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। এর বেশি কেউ দিতে চাননি। পরে ওই ৪০ টাকা চামড়ার মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি।’
সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আড়তদাররা সেই দাম দিচ্ছেন না। তাই কম মূল্যে চামড়া কিনতে হচ্ছে বলে চামড়া ব্যবসায়ী সমসের ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রির কথা থাকলেও ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেন। ফলে আমরা লোকসানের মুখে পড়ি। তাই আমরা বেশি দামে চামড়া কিনতে পারি না।
সান্তাহার ঢাকা রোড মাদ্রাসার থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে এসেছে হযরত ফাতেমা (রাঃ) মহিলা হাফেজিয়া ও নূরানী মাসরাসা ও লিল্লাহ বোডিং এর শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘চামড়া কুরবানী দাতারা দান করলেও দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গরু ৩/৪ শত টাকা, খাসির চামড়া ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা দিচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো. মমতাজ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি খাসির চামড়া কিনছি ১৫/২০ টাকা দরে। প্রতিটি চামড়া প্রস্তুত করতে লবণ প্রয়োজন ২ কেজি যার বর্তমান মূল্য ৪০ টাকা, লেবার ২০ টাকা,পরিবহণ খরচ ৫ টাকা, আড়ত খরচ ৫ টাকা সর্বমোট ৯০ টাকা খরচ পরে প্রতিটি চামড়া প্রতি। ট্যানারিতে বিক্রির সময় ১০০ চামড়ায় মধ্য ১০ টি বাতিল হয়ে যায়। প্রসেস করার পর ২০ টাকা ফুট চামড়া ৪/৫ ফিট চামড়ার বিক্রি দাঁড়ায় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। তাহলে আপনারাই বলুন চামড়া ব্যবসা করবো কিভাবে? চামড়ায় লবণ দেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার চাহিদা কম। তাই সবমিলিয়ে ব্যবসাটা কোনোভাবেই ভালো হচ্ছে না।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব বলেন, ‘জেলায় কোরবানি পশু জবাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার। যা গত বছরের তুলনায় ৩৪ হাজার বেশি। এসব কোরবানি পশুর চামড়া সুন্দরভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্য দাম পান সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করেছেন।