এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়েছে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক। সোমবার (১৮ মার্চ) বেসরকারি খাতের ব্যাংক দুটির মধ্যে একীভূত হওয়ার চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে এ সময় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দুই ব্যাংকের উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগের পর দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার এটিই প্রথম সিদ্ধান্ত।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পদ্মা ব্যাংকের সব দায় নেওয়া হবে। ব্যাংকটি একীভূত হলেও এর কোনো কর্মী চাকরি হারাবে না।
এর আগে ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়।
পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত হওয়ার বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে কীভাবে এই একীভূত হওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও পরামর্শক্রমে দুই ব্যাংকের আইনজীবী মিলে ঠিক করবেন। সমঝোতা চুক্তি হলে একীভূত হওয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক আলোচনায়ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে ভালো ও দুর্বল ব্যাংকের এমডিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুরও পরামর্শ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে শিগগিরই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নীতিমালার আওতায় একীভূত হওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
জানা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যা কিনে নেবে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। ফলে যে কারণে ব্যাংকটির সম্পদের (ঋণ ও বিনিয়োগ) মান খারাপ হয়ে পড়েছে, তা আর থাকবে না। এরপর ভালো সম্পদগুলো নিয়ে কার্যক্রম শুরু করবে এক্সিম ব্যাংক। এর ফলে এক্সিম ব্যাংকের সূচক খারাপ হয়ে পড়ার কোনো শঙ্কা নেই।
২০১৩ সালের চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পায় সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই ব্যাংকেই বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে এবং তা ঘটে ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যেই। এরপর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। ২০১৭ সালে এ ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারি একাধিক ব্যাংক ও সংস্থা। ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি।
এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। বর্তমানে এটি ইসলামি ধারার একটি ব্যাংক। ২০০৪ সালে ব্যাংকটি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।