ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আধুনিক তৈজস পত্রের দাপট

নওগাঁর কাঁসা-পিতল শিল্পে দুর্দিন

আগে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হিসেবে দেখা যেত কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র। টেকসই ও দাম কম হওয়ায় নানা অনুষ্ঠানে এসব সামগ্রী উপহার দেওয়ারও ব্যাপক চল ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁসা-পিতলের বাসন-কোসন ব্যবহারে ভাটা পড়েছে। ফলে সময়ের সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ শিল্প।

নওগাঁ শহরের পুরাতন আলুপট্টিতে একসময় কাঁসা-পিতল তৈরির ছোট-বড় ২০ থেকে ২২টি কারখানা ছিল। সেখানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টুং টাং শব্দ কানে বাজত। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন শতাধিক কারিগর। সময়ের ব্যবধানে সেখানে এখন মাত্র চারটি কারখানা টিকে রয়েছে। কাজ করছেন কেবল ১০ থেকে ১২ জন কারিগর। অনেকেই জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০০ সালের পর থেকে কাঁসা-পিতলের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। সে সময় কাঁসা ৭০০ এবং পিতল ১৮০ টাকা কেজি ছিল। বর্তমানে নতুন কাঁসা দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার এবং পিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। এছাড়া পুরাতন কাঁসা এক হাজার ৮০০ এবং পিতল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওজন হিসেবে একটি থালার দাম পড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, গ্লাস ৬০০ থেকে ১২৫০, বাটি ৫০০, ঘটি ১১০০, বদনা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

ননী গোপাল সরকার মাত্র আট বছর বয়সে বাবার সহায়তাকারী হিসেবে এই পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এখন তার বয়স প্রায় ৪০ বছর। দিনকাল কেমন চলছে প্রশ্ন করতেই মলিন মুখে জানান, খুব একটা ভালো না। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও আলুপট্টির কাঁসা-পিতলের কারিগররা দিনভর ব্যস্ত সময় পার করতেন। টুংটাং শব্দে মুখর থাকতো পুরো এলাকা। এখন সেই ব্যস্ততা আর নেই। পুরাতন জিনিসপত্র ঘষামাজা করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলছে।

আরেক কারিগর ঝড়ু চন্দ্র দাস বলেন, কাঁসা-পিতলের স্থান দখল করেছে চিনামাটি, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম। মানুষ বেশি দাম দিয়ে কাঁসা-পিতলের বাসন কিনতে চায় না। তিনি বলেন, দিন দিন এ পেশার কারিগরদের সংখ্যা কমছে। তারা ভিন্ন পেশায় যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা আছে। আগামী কয়েক বছরে সেগুলোও হারিয়ে যাবে। শহরের পার-নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা বিপুল রায় বলেন, আগে বাড়ির নিত্যব্যবহার্য সব তৈজসপত্র ছিল কাঁসা-পিতলের। এখন ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কেবল পূজা-পার্বণে কিছু ব্যবহার হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁসা-পিতলের জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে।

কাসা-পিতলের তৈরি এসব তৈজসপত্রকে কেন্দ্র করে নওগাঁ শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি দোকান ছিল। চাহিদা কমায় এখন মাত্র পাঁচটি দোকান রয়েছে। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। শহরের ডাবপট্টি এলাকার সঞ্চিতা মেটাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী গোপাল সাহা বলেন, কাঁসা-পিতলকে বলা হয় রাজকীয় ব্যবসা। ৩০ বছর এ পেশায় যুক্ত আছি। কাঁসা-পিতলের বাসনপত্রে মানুষের চাহিদা আছে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১০ বছর পিতল-কাঁসার জিনিসের জৌলুস কমেছে। আগে যে ব্যবসা ছিল এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। মূলধন হারিয়ে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, যেকোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিসিক সহযোগিতা করে থাকে। এ শিল্পে জড়িতরা যদি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে প্রশিক্ষণ, মার্কেটিং এবং বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আধুনিক তৈজস পত্রের দাপট

নওগাঁর কাঁসা-পিতল শিল্পে দুর্দিন

আপডেট সময় ০৩:৫২:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

আগে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হিসেবে দেখা যেত কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র। টেকসই ও দাম কম হওয়ায় নানা অনুষ্ঠানে এসব সামগ্রী উপহার দেওয়ারও ব্যাপক চল ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁসা-পিতলের বাসন-কোসন ব্যবহারে ভাটা পড়েছে। ফলে সময়ের সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ শিল্প।

নওগাঁ শহরের পুরাতন আলুপট্টিতে একসময় কাঁসা-পিতল তৈরির ছোট-বড় ২০ থেকে ২২টি কারখানা ছিল। সেখানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টুং টাং শব্দ কানে বাজত। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন শতাধিক কারিগর। সময়ের ব্যবধানে সেখানে এখন মাত্র চারটি কারখানা টিকে রয়েছে। কাজ করছেন কেবল ১০ থেকে ১২ জন কারিগর। অনেকেই জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০০ সালের পর থেকে কাঁসা-পিতলের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। সে সময় কাঁসা ৭০০ এবং পিতল ১৮০ টাকা কেজি ছিল। বর্তমানে নতুন কাঁসা দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার এবং পিতল ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। এছাড়া পুরাতন কাঁসা এক হাজার ৮০০ এবং পিতল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওজন হিসেবে একটি থালার দাম পড়ে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, গ্লাস ৬০০ থেকে ১২৫০, বাটি ৫০০, ঘটি ১১০০, বদনা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

ননী গোপাল সরকার মাত্র আট বছর বয়সে বাবার সহায়তাকারী হিসেবে এই পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এখন তার বয়স প্রায় ৪০ বছর। দিনকাল কেমন চলছে প্রশ্ন করতেই মলিন মুখে জানান, খুব একটা ভালো না। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও আলুপট্টির কাঁসা-পিতলের কারিগররা দিনভর ব্যস্ত সময় পার করতেন। টুংটাং শব্দে মুখর থাকতো পুরো এলাকা। এখন সেই ব্যস্ততা আর নেই। পুরাতন জিনিসপত্র ঘষামাজা করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলছে।

আরেক কারিগর ঝড়ু চন্দ্র দাস বলেন, কাঁসা-পিতলের স্থান দখল করেছে চিনামাটি, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম। মানুষ বেশি দাম দিয়ে কাঁসা-পিতলের বাসন কিনতে চায় না। তিনি বলেন, দিন দিন এ পেশার কারিগরদের সংখ্যা কমছে। তারা ভিন্ন পেশায় যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা আছে। আগামী কয়েক বছরে সেগুলোও হারিয়ে যাবে। শহরের পার-নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা বিপুল রায় বলেন, আগে বাড়ির নিত্যব্যবহার্য সব তৈজসপত্র ছিল কাঁসা-পিতলের। এখন ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কেবল পূজা-পার্বণে কিছু ব্যবহার হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঁসা-পিতলের জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে।

কাসা-পিতলের তৈরি এসব তৈজসপত্রকে কেন্দ্র করে নওগাঁ শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি দোকান ছিল। চাহিদা কমায় এখন মাত্র পাঁচটি দোকান রয়েছে। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। শহরের ডাবপট্টি এলাকার সঞ্চিতা মেটাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী গোপাল সাহা বলেন, কাঁসা-পিতলকে বলা হয় রাজকীয় ব্যবসা। ৩০ বছর এ পেশায় যুক্ত আছি। কাঁসা-পিতলের বাসনপত্রে মানুষের চাহিদা আছে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১০ বছর পিতল-কাঁসার জিনিসের জৌলুস কমেছে। আগে যে ব্যবসা ছিল এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। মূলধন হারিয়ে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, যেকোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিসিক সহযোগিতা করে থাকে। এ শিল্পে জড়িতরা যদি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে প্রশিক্ষণ, মার্কেটিং এবং বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে।