সোমবার ৭৮ জন বিরোধী সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা । ১৪ তারিখ করা হয়েছিল ১৪ জনকে। মঙ্গলবার আরো ৪৯ জন সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সব মিলিয়ে তিন দিনে সাময়িক বরখাস্ত হলেন ১৪১ জন বিরোধী এমপি।
লোকসভায় লাফিয়ে পড়ে রঙিন গ্যাস ছড়ানো নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করছিলেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা। তাঁরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান ও স্লোগান দেন, প্রবল হট্টগোল হয়। তার পরই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিন দিনে রেকর্ডসংখ্যক সংসদ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হন। এতে দেশটির লোকসভা কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ল। লোকসভায় স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের আসনের সামনের অংশটিকেই ওয়েল বলে।
সংসদীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেছেন, বিরোধীরা ওয়েলে বিক্ষোভ না দেখানো, প্ল্যাকার্ড না নিয়ে আসা, স্লোগান না দেওয়া নিয়ে একমত হয়েছিলেন। তাঁরা এখন সেটাই করছেন। তাই তাদের সাময়িক বরখাস্ত না করে কোনো উপায় ছিল না। আর বিরোধীরা বলছেন, সংসদ যখন চলছে, তখন সেখানে কিছু না বলে বাইরে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কেন সংসদে এই নিয়ে কথা বলবেন না?
মঙ্গলবার লোকসভা থেকে অন্ততপক্ষে ৪৯ জন সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার মধ্যে শশী থারুর, মালা রায়, মনীশ তিওয়ারি, কার্তি চিদম্বরম, সুপ্রিয়া সুলে, ফারুক আবদুল্লা, ডিম্পল যাদব, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা আছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ডাকা বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিরোধী নেতারা যোগ দেবেন। সেখানে আগামী লোকসভা নির্বাচনে একসঙ্গে লড়াই করা, আসন সমঝোতা নিয়ে যেমন কথা হবে, তেমনই আলোচনা হবে সংসদ থেকে এতজন বিরোধী সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা নিয়েও।
যা নিয়ে হট্টগোল
সম্প্রতি দর্শক গ্যালারি থেকে দুইজন লোকসভায় লাফিয়ে নেমে পড়েন। তাঁরা লোকসভায় রঙিন গ্যাস ছড়িয়ে দেন। বিরোধীদের বক্তব্য, সংসদ যে সুরক্ষিত নয়, তা আবার প্রমাণিত হলো। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দিতে হবে। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, তাঁরা সংসদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন। তিনি বাইরে অনেক কথা বললেও সংসদে কিছুই বলছেন না। বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিরোধী সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ দেখাতে লোকসভা ও রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে পড়েছিলেন। স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী স্পিকার বা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিতেই পারেন। তাঁরা সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছেনও। তবে সচরাচর এতজন বিরোদী সংসদ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেছেন, ‘এভাবে বিরোধী সব সংসদ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হলে, তাঁরা মানুষের কথা বলবেন কী করে? তাহলে পুরো হাউসকেই সাসপেন্ড করা হোক। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হচ্ছে। মানুষের হয়ে কথা বলার কেউ নেই। জনতাই এবার ওদের সাসপেন্ড করবে।’
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘এই ঘটনার দুইটি দিক আছে। একটা প্রতিবাদের ধরণ এবং অন্যটা শাস্তি। ভারতে বিরোধীদের প্রতিবাদের ধরণ নিয়ে বহু দিন ধরে আলোচনা চলছে। ইউপিএ আমলে এটা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। এখনো আছে। কিন্তু তাই বলে বিরোধীশূন্য সংসদ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়টাও ভেবে দেখা উচিত।’