ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যে বেড়েছে তেল, ডাল, আটা চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। হঠাৎ করেই লাগামছাড়া দাম বেড়েছে পিয়াজের। এক লাফে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। ভোক্তা অভিযানের পর সামান্য কমলেও বাজারে ২০০ টাকার নিচে মিলছে না পিয়াজ।
এছাড়া মসলা জাতীয় পণ্যের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বেড়েছে ডাল, আটা ও ময়দার। একইসঙ্গে বেড়েছে সয়াবিন তেল, চিনি ও মুরগির দামও। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার এ চিত্র দেখা গেছে।
খিলগাঁও বাজারে দেখা যায়, হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পিয়াজ এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা দেশি পিয়াজ ২০০ টাকা এবং আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা কেজি দরে। খিলগাঁও বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আড়তদাররা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যে দরে বিক্রি করে সে দরে খুচরা বিক্রেতাদের কিনে বিক্রি করতে হয়।
ওদিকে পিয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পিয়াজের দাম বেশি রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও পিয়াজের বাজার এখনও অস্থিতিশীল রয়েছে।
মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বেড়েছে মসলাজাতীয় আরেকটি পণ্য রসুনের দাম। প্রতি কেজি রসুনে ৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে। বাজারে এখন দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায় আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির আগে দেশি রসুন ছিল ২০০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ছিল ১৮০ টাকা কেজি। মসলাজাতীয় এই দুই দরকারি পণ্যের সঙ্গে বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম
বাজারে ৫ লিটার বোতলের তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যদিও কিছুদিন আগে ছিল ৮২৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারে ৫ টাকা বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে আটা, ময়দা ও ডালের দামও। দুই কেজির প্যাকেট আটা ও ময়দাতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। বাজারে এখন আটা ১২০ টাকা ও ময়দা ১৪০ টাকা প্যাকেট (২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে মুগডালের ও ১০ টাকা বেড়েছে দেশি মশুর ডালের। বাজারে মুগডাল ১৪০ টাকা ও দেশি মশুর ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ের সুমি স্টোরের বিক্রেতা ইরাম বলেন, গত ১০ দিনের মধ্যে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে হঠাৎ করে পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। জোবায়ের স্টোরের বিক্রেতা বলেন, পিয়াজের দাম বাড়ার আগেই অন্য পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। বাসাবো বাজারের মুদি দোকানদার ফোরকান বলেন, পাঁচ লিটারে তেল এখন ৮৫০ টাকা বোতলের গায়ে মূল্য দেয়া। এর আগে যে তেল ছিল তা ৮২৫ টাকা ছিল। আমাদের কাছে নতুন রেটের পণ্য এসেছে।
রোজার পর থেকেই চড়া দামে থাকা চিনির দামও ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। কেজিতে ১৩ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চিনির দাম। বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ও প্যাকেটের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকায়। এদিকে গরুর মাংসের দাম কমলেও বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম। ব্রয়লার ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা ও সোনালী ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি দরে।
কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মানবজমিনকে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি যখন নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন জিনিসপত্রের দামে এমন নাজুক পরিস্থিতি হয়। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় যদি সে ব্যবস্থা নেয় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে বাজার স্থিতিশীল হবে। তবে নির্বাচনের আগে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে হচ্ছে না।