বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে নিট পোশাক রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এই অর্জন করেছে দেশের পোশাক খাত। এর আগে ইউরোপের বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের আধিপত্য অর্জনের পরেই এই সাফল্য এলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২৭ দেশের এই ব্লকে বাংলাদেশের নিট পোশাকের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮৩১ কোটি ইউরো।
একই সময়ে চীনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ইউরো। তবে খুব কম ব্যবধানে এগিয়েছে বাংলাদেশ।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। তখন পোশাকের মোট রপ্তানিমূল্য ছিল ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজারটিতে বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশের রপ্তানি কমেছে। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের কমেছে ২০.৯৪ শতাংশ। শীর্ষ রপ্তানি আয়ের দেশ চীনের রপ্তানি কমেছে ২১.৫১ শতাংশ। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হওয়ার ফলে এই বাজারে চাহিদাও কমেছে। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যেও ইইউয়ের নিট পোশাক খাতের আমদানি চাহিদায় মন্দাভাবের চিত্র উঠে এসেছে, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে যা ১৭.৭১ শতাংশ বা তিন হাজার ১৯৪ কোটি ইউরোতে নেমে আসছে। আগের বছরের একই সময়ে চাহিদা ছিল তিন হাজার ৮৮২ কোটি ইউরোর।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক পণ্যের মন্থর চাহিদা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বছরওয়ারি হিসাবে ১৭.৬৬ শতাংশ কমে মোট এক হাজার ৩৬৯ কোটি ইউরো হয়েছে। চীনের মোট রপ্তানিও একই সময়ে ২০.১৭ শতাংশ কমে এক হাজার ৭১২ কোটি ইউরো হয়েছে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘অব্যাহত চাহিদা মন্থর হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বাজারে পোশাক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি আমরা, যা আমাদের জন্য সুবাতাস বয়ে আনছে।
যদিও চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে আমাদের একরকম সংগ্রাম করতে হয়েছে, তবে আশার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) চলতি বছরের বাকি অংশে ভোক্তাদের ব্যয় যথেষ্টভাবে বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খুচরা বিক্রি ৩-৪ শতাংশ বাড়তে পারে। এনআরএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি প্রাক-মহামারি সময়ের গড় মাত্রা ছাপিয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। এগুলো আমাদের জন্য, আমাদের পোশাকশিল্পের জন্য ইতিবাচক।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে চাহিদা ও রপ্তানি আদেশ কমছে। এখন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ নিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এর পরও দাম কম, রপ্তানি কম, এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীনকে টপকে আজ বাংলাদেশ। এটা মন্দের ভালো। তবে আমরা ভালো নেই।’
ফজলে শামীম আরো বলেন, কম দামের পোশাক রপ্তানিতে চীনের আগ্রহ কম। তাই দেশটি থেকে ক্রেতারা তাদের সোর্সিং অন্য দেশে স্থানান্তর করছে। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছে আস্থার বড় জায়গায়। এর ফলে দেশের রপ্তানি আয় বাড়ছে।
এদিকে রপ্তানি আদেশ কমার পাশাপাশি তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে টানা গত দুই মাস। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরের তথ্য মতে, গত অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩.৯৩ শতাংশ, আর নভেম্বর মাসে কমেছে ৭.৪৫ শতাংশ।