মুশফিকুর রহিমের নীরবতা প্রশ্নের উদ্রেক না ঘটালেও খানিক বিস্ময়ের খোরাক জুগিয়েছিল বৈকি। তবে শেষ পর্যন্ত আর নীরব থাকলেন না তিনি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১ টিভির বিপক্ষে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেন টাইগার ব্যাটার।
ঢাকা টেস্টে তার বল ধরে (অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড) আউট হওয়ার ঘটনাকে সন্দেহজনক ও স্পট ফিক্সিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করা হয় ৭১ টেলিভিশনের খেলাযোগের এক প্রতিবেদনে।
জবাবে মুশফিক আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ৭১ টিভির বিরুদ্ধে এক আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দীন খান মুশফিকের পক্ষে এ উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
মুশফিকের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টেলিভিশন চ্যানেলটির হেড অব নিউজ, ক্রীড়া সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে বিষয়ের নিষ্পত্তি চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ব্যারিস্টার শিহাবউদ্দীন খান জানান, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ চলাকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ‘আউট অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ কে কেন্দ্র করে ‘মিরপুর টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের গন্ধ! সন্দেহ সিনিয়র ক্রিকেটারের দিকে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ৭১ টেলিভিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান খেলাযোগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে প্রচার করা হয়।
সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের আউট নিয়ে মনগড়া, অসত্য, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত তথ্য পরিবেশন করে তার দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ওপর কালিমা লেপন করা হয়েছে এবং তার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে করা হয়েছে, যখন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চলমান। উক্ত প্রতিবেদনের কারণে মুশফিকুর রহিম পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে সুনাম ক্ষুণ্নের শিকার হয়েছেন এবং তিনি এই বিকৃত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদনের কারণে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সময় পার করেছেন।
মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিমের পরিশ্রম ও ঘামে অর্জিত সুনাম এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিবেদনের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের কারণে তার অপূরণীয় সুনামহানি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৭১ টেলিভিশনের হেড অব নিউজ, ক্রীড়া সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে কিছু বিষয়ের নিষ্পত্তি চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মুশফিকের পক্ষে নোটিশটি আজ ইমেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আইনি নোটিশে চারটি বিষয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিষ্পত্তি চাওয়া হয়েছে-
১. অতি সত্বর ইউটিউবসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অসত্য ও মনগড়া প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলতে ও সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
২. ভুল, অসত্য এবং মানহানিকর তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদনের জন্য ৭১ টেলিভিশনকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ তাদের টিভি চ্যানেলে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রচার করতে বলা হয়েছে।
৩. ৭১ টেলিভিশনকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের এ মনগড়া, ভুল প্রতিবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।
৪. সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক সাইফুল রূপককে ভবিষ্যতে এমন অসত্য ও মনগড়া প্রতিবেদন না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে মর্মে মুশফিকুর রহিমের নিকট লিখিতভাবে ৭১ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে ।
ওই প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতি-আদর্শ মেনে করা হয়নি উল্লেখ করে ৭১ টিভির মতো সুপরিচিত চ্যানেলে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ অপ্রত্যাশিত বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। নোটিশে প্রতিবেদন দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর ২৫(১)(ক), ২৫(২) এবং ২৯ ধারায় সাইবার বুলিংয়ের অপরাধ উল্লেখ করে প্রতিকার না পেলে ফৌজদারি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের দেওয়ানি আদালতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৭১ টিভি অবশ্য এরই মধ্যে মুশফিককে নিয়ে তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেছে তারা।