ঢাকা ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ

পণ্যর দাম বৃদ্ধিতে জোবেদার মত হাজারো পরিবারের কান্না

কম দামে পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ সারি। তাদের কেউ বয়স্ক। কেউ অসুস্থ। কেউ আবার মুখোশে মুখ লুকিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়ানো নারীদেরও দেখা গেছে। জোবেদা খাতুন।

ভাঙা পা নিয়ে ট্রাকসেলের নিত্যপণ্য কিনতে গিয়েছেন। শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। শরীরে দুটি অপারেশন হয়েছে। ভাঙা পায়ের জন্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন।

অশ্রুসজল জোবেদা বলেন, কি কষ্ট কইরা চলি। স্বামী ভাত-কাপড় দেয় না। রিকশা চালাইয়া সে তার মতো খায়। আমি আমার ছেলের সঙ্গে থাকি। পোলাটা লেখাপড়া করে আর ফুড পান্ডায় চাকরি করে। ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। বাসা ভাড়া দেই ৪৩০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়া সংসার চালাইতে কষ্ট হয়। তাই ভাঙা পা নিয়া ট্রাকে মাল নিতে আইছি।

প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে টিসিবি ট্রাকসেলের দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। ফুটপাথে ফলের ব্যবসা করেন তিনি। এখন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না তার। মোশাররফ জানান, সাত সদস্যের পরিবারে কর্মক্ষম তিনি একাই। ফল বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এই আয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে টিকে থাকতে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার।

মোশাররফ বলেন, মাসে ৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেয়ার পর আর ডাল-ভাত খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। শাহজাহান দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাকসেল থেকে দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি পিয়াজ ও চার কেজি আলু কিনেছেন। তারও ৬ জনের বড় পরিবার। গাড়ি চালিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। তা দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করেন তারা। শাহজাহান বলেন, ট্রাক থেকে পণ্য কেনা অনেক কষ্টের। লাইনে ধাক্কা-ধাক্কি লেগেই থাকে। তাও কষ্ট করে কিনতে হয়। যে টাকা সাশ্রয় হয় তা দিয়ে অন্য বাজার করা লাগে।

বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম। কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না আলু, পিয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম। টিসিবি’র ট্রাক থেকে ক্রেতারা বাজার সাশ্রয়ী মূল্যে ২ কেজি করে ডাল, পিয়াজ, ৪ কেজি আলু ও ২ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। এতে তাদের ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা সাশ্রয় হয়। ট্রাকসেলে আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পিয়াজ ৫০ টাকা, ডাল ৬০ টাকা ও তেল ১০০ টাকা লিটারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে তেল ১৬৫ থেকে ১৭০, আলু ৫০ থেকে ৫৫, ডাল ১১০ থেকে ১১৫ এবং আমদানি করা পিয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি’র ট্রাকে পণ্য কিনতে আসারা জানান, তাদের দৈনিক নিত্যপণ্যের চাহিদার ক্ষুদ্র একটা অংশ ট্রাকসেল থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পান। যা দিয়ে কয়েকদিন চলে যায়। তবে তা যথেষ্ট নয়। বাজারে সবজি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাভিশ্বাস ফেলতে হয়। প্রতিনিয়তই নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়।

জীবনযুদ্ধে বিপর্যস্ত খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা কামাল। ইট ভেঙে সংসার চালান। কামাল বলেন, আমাদের জীবন কষ্টের। সবসময় কাজ কাম থাকে না। ট্রাক আসলে মাল নিতে আসি। কোনো দিন পাই, কোনো দিন পাই না। আজকে যা পাইছি তা দিয়া কয়েকদিন চলবো। শিক্ষার্থী জিসান স্কুল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ট্রাকসেলের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রাক থেকে পণ্য নিয়েছে। তার মতো অনেকেই সকাল থেকে ট্রাকসেলের অপেক্ষায় ছিল।

ট্রাক আসার পরও ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিতে হয়েছে তাদের। অনেকের সময় লেগেছে আরও বেশি। কেউ কেউ আবার দীর্ঘ লাইন দেখে খালি হাতে ফিরে গেছেন। শহরের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাকসেলে পণ্য কিনতে আসা মানুষের ভিড় দেখা যায় নিত্যদিন।

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

পণ্যর দাম বৃদ্ধিতে জোবেদার মত হাজারো পরিবারের কান্না

আপডেট সময় ১২:২৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

কম দামে পণ্য কিনতে মানুষের দীর্ঘ সারি। তাদের কেউ বয়স্ক। কেউ অসুস্থ। কেউ আবার মুখোশে মুখ লুকিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়ানো নারীদেরও দেখা গেছে। জোবেদা খাতুন।

ভাঙা পা নিয়ে ট্রাকসেলের নিত্যপণ্য কিনতে গিয়েছেন। শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি। শরীরে দুটি অপারেশন হয়েছে। ভাঙা পায়ের জন্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন।

অশ্রুসজল জোবেদা বলেন, কি কষ্ট কইরা চলি। স্বামী ভাত-কাপড় দেয় না। রিকশা চালাইয়া সে তার মতো খায়। আমি আমার ছেলের সঙ্গে থাকি। পোলাটা লেখাপড়া করে আর ফুড পান্ডায় চাকরি করে। ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। বাসা ভাড়া দেই ৪৩০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়া সংসার চালাইতে কষ্ট হয়। তাই ভাঙা পা নিয়া ট্রাকে মাল নিতে আইছি।

প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে টিসিবি ট্রাকসেলের দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। ফুটপাথে ফলের ব্যবসা করেন তিনি। এখন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না তার। মোশাররফ জানান, সাত সদস্যের পরিবারে কর্মক্ষম তিনি একাই। ফল বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এই আয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে টিকে থাকতে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার।

মোশাররফ বলেন, মাসে ৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেয়ার পর আর ডাল-ভাত খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। শাহজাহান দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাকসেল থেকে দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি পিয়াজ ও চার কেজি আলু কিনেছেন। তারও ৬ জনের বড় পরিবার। গাড়ি চালিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করেন। তা দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করেন তারা। শাহজাহান বলেন, ট্রাক থেকে পণ্য কেনা অনেক কষ্টের। লাইনে ধাক্কা-ধাক্কি লেগেই থাকে। তাও কষ্ট করে কিনতে হয়। যে টাকা সাশ্রয় হয় তা দিয়ে অন্য বাজার করা লাগে।

বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম। কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না আলু, পিয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম। টিসিবি’র ট্রাক থেকে ক্রেতারা বাজার সাশ্রয়ী মূল্যে ২ কেজি করে ডাল, পিয়াজ, ৪ কেজি আলু ও ২ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। এতে তাদের ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা সাশ্রয় হয়। ট্রাকসেলে আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা, পিয়াজ ৫০ টাকা, ডাল ৬০ টাকা ও তেল ১০০ টাকা লিটারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে তেল ১৬৫ থেকে ১৭০, আলু ৫০ থেকে ৫৫, ডাল ১১০ থেকে ১১৫ এবং আমদানি করা পিয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি’র ট্রাকে পণ্য কিনতে আসারা জানান, তাদের দৈনিক নিত্যপণ্যের চাহিদার ক্ষুদ্র একটা অংশ ট্রাকসেল থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পান। যা দিয়ে কয়েকদিন চলে যায়। তবে তা যথেষ্ট নয়। বাজারে সবজি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাভিশ্বাস ফেলতে হয়। প্রতিনিয়তই নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়।

জীবনযুদ্ধে বিপর্যস্ত খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা কামাল। ইট ভেঙে সংসার চালান। কামাল বলেন, আমাদের জীবন কষ্টের। সবসময় কাজ কাম থাকে না। ট্রাক আসলে মাল নিতে আসি। কোনো দিন পাই, কোনো দিন পাই না। আজকে যা পাইছি তা দিয়া কয়েকদিন চলবো। শিক্ষার্থী জিসান স্কুল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ট্রাকসেলের অপেক্ষায় ছিল। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ট্রাক থেকে পণ্য নিয়েছে। তার মতো অনেকেই সকাল থেকে ট্রাকসেলের অপেক্ষায় ছিল।

ট্রাক আসার পরও ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিতে হয়েছে তাদের। অনেকের সময় লেগেছে আরও বেশি। কেউ কেউ আবার দীর্ঘ লাইন দেখে খালি হাতে ফিরে গেছেন। শহরের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাকসেলে পণ্য কিনতে আসা মানুষের ভিড় দেখা যায় নিত্যদিন।