মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়পত্র জমা দিতে যান নওগাঁ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা ইউএনওর কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়।
স্বতন্ত্র ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য বড় গদি চেয়ারের ব্যবস্থা করেন এবং তাকে তার পাশে নিয়ে বসান। অথচ অন্য প্রার্থীদের বসতে দেওয়া হয় ইউএনওর ডেস্কের সামনে চেয়ারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার এ ধরনের কার্যক্রম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শত শত নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আসেন নওগাঁ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক আমলা সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীক ও সৌরেন্দ্রনাথের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সৌরেন্দ্রনাথ ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বদলগাছীর ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনের কক্ষে ঢোকেন। এ সময় খবর সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা ইউএনওর কক্ষে ঢুকতে চাইলে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্য তাদেরকে বাধা দেন। কর্তব্যরত আনসার সদস্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাদেরকে ইউএনওর কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আনসার সদস্যের বাগবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বদলগাছী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানজাদ রয়েল (সাগর) বলেন, বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ইউএনওর কক্ষে মনোনয়ন জমা দিতে ঢোকেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঢোকার পরপর আমিসহ সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিক মনোনয়ন জমাদানের ছবি ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ইউএনওর কক্ষে ঢুকতে চাইলে আনসার সদস্য ঢুকতে বাধা দেন। ওই আনসার সদস্যের কাছে ইউএনওর কক্ষে ঢুকতে না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ইউএনও স্যারের অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পরে অবশ্য বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডিএম মাহবুব ইল মান্নাফ (শুভ) ৩-৪ জন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তখনও সাংবাদিকদের ইউএনওর কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
বদলগাছী প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসানসহ উপজেলার আরও কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনওর রুমে ঢোকেন। অথচ আমরা সাংবিদকরা ঢুকতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। ইউএনওর রুমের সামনে কর্তব্যরত আনসার সদস্য আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডিএম মাহবুব উল মান্নাফ (শুভ) বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পর বদলগাছী ইউএনওর কার্যালয়ে আমি যখন মনোনয়ন পত্র জমা দিতে চাই, তখন সাংবাদিকদের ইউএনওর রুমে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। আমি সেখানে উপস্থিত থাকা অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ইউএনওর বাগবিতণ্ডা হয়।
এছাড়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজ আকরাম চৌধুরী মিছিল নিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে আসেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথকে ইউএনও তার পাশে আলিশান চেয়ারে বসতে দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ডিএম মাহবুব উল মান্নাফ (শুভ) বলেন, প্রার্থীদের মিছিল করা ও ইউএনওর এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দেওয়া ও প্রার্থীদের মিছিল-শোডাউন করার ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাধা। এসব ঘটনায় ব্যবস্থা না হলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে নওগাঁ-৩ আসনের অধিকাংশ প্রার্থী আমার কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন। মনোনয়ন জমা দিতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেজন্য আমার রুমের সামনে ডিউটিরত আনসার সদস্যকে বলা ছিল যতটা কমসংখ্যক লোকজন যেন আমার রুমে ঢোকেন। দুপুরের পর একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলে তার সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিক আমার রুমে ঢুকতে চান। এ সময় ডিউটিরত আনসার সদস্য তাদের চিনতে না পারায় আমার রুমে ঢুকতে নিষেধ করেন। তখন সাগর নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে অবশ্য ওই সাংবাদিক আমার রুমে ঢুকে প্রার্থীর মনোনয়ন জমাদানের ছবি নেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পাশের চেয়ারে বসতে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এতে আমি কোনো পক্ষপাত করিনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী যখন মনোনয়ন জমা দিতে আসেন তখন আমার পাশের চেয়ারে বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বসেছিলেন। তিনি তখন তার আসন থেকে উঠে গিয়ে সম্মান করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্রনাথকে ওই চেয়ারে বসতে দেন।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকতে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আর একজন প্রার্থীকে সম্মান করে পাশের চেয়ারে বসতে দিলেই তাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় না। গতকাল আমার কার্যালয়ে যখন খাদ্যমন্ত্রী মনোনয়ন পত্র জমা দিতে আসেন তখন তিনিও আমার পাশের চেয়ারে বসেছিলেন। যেহেতু তিনি এখনও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন এবং সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তাকে পাশের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়েছে।