উওর বঙ্গের একটি সমৃদ্ধ জেলা নওগাঁ, সাধারণত এ জেলা কৃষির উপর নির্ভশীল । তবে আধুনিকতার ছোয়ায় কিছুটা পরির্বতন এসেছে। বেড়েছে শিল্পে চাহিদা । তবে দিন দিন ব্যবসা বাণিজ্যের চাহিদা বাড়লেও গ্যাস সংকটে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় হারাতে বসেছে নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প সম্ভাবনা। এতে নতুন উদ্যোক্তারাও হারাচ্ছেন ব্যবসার সম্ভাবনা।
নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে দেখা যায়, ৬৮ প্লটে ৫০টি ইউনিটের প্রতিষ্ঠানে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, কীটনাশক, ট্রাকের বডি, পাম্প, কেবল, কৃষি যন্ত্রাংশ, জৈব সার, প্লাস্টিক, কেমিকেল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন হলেও বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে অর্ধেক কারখানা। ভেতরের সড়কের খানাখন্দ আর দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সেখানে কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানসহ নতুন উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাচ্ছেন। এরইমধ্যে লোকসানের বোঝা কমাতে পাঁচটি শিল্প ইউনিটকে বন্ধ ঘোষণা করেছেন উদ্যোক্তারা। এসব ইউনিটে এখন চাষ করা হচ্ছে সবজি।
ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে গ্যাস সংকট, অন্যদিকে আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ। গ্যাস ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা হয় কিন্তু অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করলে কেজিতে ২০ টাকা লেগে যায়। সে কারণে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়তে হয় তাদের।
নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীর বারিক ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্সের মালিক আব্দুল বারিক বলেন, আগে আমাদের উৎপাদন খরচ কেজিতে ১১ টাকা ছিল, কিন্তু এখন সেটা ২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাশের জেলা বগুড়াতে যে যন্ত্রপাতি বানানো হয়, আমাদের এখানেও সেগুলোই বানানো হয়। সেখানে গ্যাস থাকায় তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কম এবং আমাদের অনেক বেশি। বাজারে গেলে আমাদের লসে বিক্রি করতে হয়। গ্যাস থাকলে উৎপাদন খরচ কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা হবে।
এস কে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক সহিদুর বলেন, পণ্য উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করতে গেলে বগুড়ার পণ্যের সঙ্গে আমাদের পণ্যের দাম অনেক কম-বেশি হয়। এজন্য আমরা বাহিরের বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে পারি না। নওগাঁতেও অনেক প্রতিযোগিতা করে মাল বিক্রি করতে হয়।
মুনিম এন্টারপ্রাইজের মালিক নূর মুমিনুল হক বলেন, এখানে প্রধান সমস্যা গ্যাস সরবরাহ না থাকা। শিল্প মালিকরা প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে পারছেন না। গ্যাসের সঙ্গে খরচ কুলিয়ে গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব নয়। আমাদের এখন কষ্ট করে টিকে থাকতে হচ্ছে। নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি মো. আতাউর রহমান বলেন, বিসিকের মূল সমস্যা গ্যাস না থাকা। উৎপাদন খরচ বেশি তাই অনেকে বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রেখেছেন, আবার কেউ গুটিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিযোগিতার বাজারে টেকা যাচ্ছে না। নওগাঁর মতো পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে কোনো ধরনের কারখানা হবে, গ্যাসহীন কারখানা টিকানো যাবে কিনা এসব নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। লাভ না হলে অবকাঠামো মেরামত করার মতো সামর্থ্য হয়ে ওঠে না।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক জনাব শামীম আক্তার মামুন বলেন, এখানকার উদ্যোক্তারা প্রধানত গ্যাস না থাকার কারণে তাদের জ্বালানি খরচ বেশি হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানা ৩ থেকে ৬ মাস চলে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে বন্ধ থাকে বেশিরভাগ কারখানা। বিকল্প উদ্যোগ, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা ছাড়া এই শিল্পাঞ্চলকে বাজারমুখী করা সম্ভব নয়। আমরা বিভিন্ন সংকটের কথা প্রতিবেদন আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে রাস্তার কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে।