পোশাক শ্রমিকদের ঘোষিত খসড়া মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে আন্দোলনরত সংগঠনসমূহের মোর্চা ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’।
রোববার (২৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশ থেকে এ দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে শ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ কারাবন্দি শ্রমিকদের মুক্তি ও শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাদেকুর রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক তাসলিমা আক্তার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুর রহমান মানিক প্রমুখ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, মজুরি বোর্ড প্রস্তাবিত খসড়া মজুরি কাঠামো গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মালিকপক্ষের অনুকূলে নামমাত্র মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এলে অন্তত ৪ জন শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যাদের মধ্যে রাসেল, আঞ্জুয়ারা ও জালালউদ্দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
গাজীপুরের শ্রমিক ইমরান কারখানার ভেতরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মজুরি বোর্ড ঘোষিত মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনা করবে এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছে। নেতারা বলেন, খসড়া মজুরি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে মজুরি বোর্ডের ৭ম সভা চলছে। মজুরি বৃদ্ধির নামে আবারো কোনো প্রহসনের ঘোষণা এলে শ্রমিকরা তা মানবে না। নেতারা আজকের সভা থেকে ঘোষিত মজুরি সকল অসঙ্গতি সংশোধন ও গার্মেন্ট শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন দমনে সরকার শক্তি প্রয়োগের পথ গ্রহণ করে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে। গত ১৪ নভেম্বর রাতে শ্রমিকনেতা বাবুল হোসেনকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। নেতারা বাবুল হোসেনসহ সকল কারাবন্দি শ্রমিকের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, গঠনমূলক ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়নের ফলাফল ভালো হবে না।
সমাবেশে নেতারা বলেন, শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের গ্রেফতার করার পরিবর্তে আন্দোলনের নেতাদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাষ্ট্রের এমন দমনমূলক আচরণ বন্ধ করে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি মেনে না নেওয়া হলে শিল্পে উৎপাদনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে না। তারা বলেন, খসড়া মজুরি কাঠামোতে একজন হেল্পারের সঙ্গে দক্ষ অপারেটরের মজুরি পার্থক্য ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। তারা বলেন, হেল্পার ও অপারেটরের বেতনের পার্থক্য ন্যায্য না হলে শ্রমিকরা ঘোষিত মজুরি মানবে না। সমাবেশ থেকে বেসিক ৬৫ শতাংশ, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ, পূর্বের ১ ও ২নং গ্রেড বহাল, শিক্ষানবিশ গ্রেড বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে ঘোষিত খসড়া মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সকল গ্রেডে একই হারে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে কদমফুল ফোয়ারা ঘুরে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।