জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধে মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেছেন।
গাজায় মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের আহ্বান জানিয়ে মাল্টার উত্থাপিত প্রস্তাবটি গতকাল বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে এরডান বলেন, ইসরায়েল এ প্রস্তাব মানবে না। তাঁর দাবি, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েল এমনিতেই সাধ্যমতো সবকিছু করছে।
এরডান বলেন, এ পরিষদ মাত্রই যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে, তা দুঃখজনকভাবে বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। এ পরিষদ এখনো গত ৭ অক্টোবর হামাসের চালানো হামলা নিয়ে নিন্দা জানাতে পারেনি। প্রস্তাবটিতে কেবল গাজার মানবিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কী কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো, তার উল্লেখ নেই।
ইসরায়েলি দূত এরডানের দাবি, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার কথা ইসরায়েলকে মনে করিয়ে দিতে কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজন নেই। ইসরায়েল সব সময় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনাটা ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের বিষয়। লক্ষ্য পূরণে ইসরায়েলের যা কিছু করার, তা করবে। ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটিকে অর্থহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, হামাস এ প্রস্তাব মানা তো দূরের কথা, পড়েও দেখবে না।
এক্স পোস্টে গিলাড লিখেছেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবটি বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত ও অর্থহীন। নিরাপত্তা পরিষদ যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েল কাজ করে যাবে। হামাসের সন্ত্রাসীরা প্রস্তাবটি পড়বেই না, মানা তো দূরের কথা। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে নিরাপত্তা পরিষদ ৭ অক্টোবর হামাসের চালানো হামলার ঘটনাকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় পরিষদ থেকে নিন্দা জানানো হয়নি, এমনকি এ ঘটনার উল্লেখও করা হয় না। এটি সত্যিই লজ্জাজনক।’
গিলাড এরডান আরও লেখেন, ‘গাজা উপত্যকায় ইচ্ছা করেই মানবিক পরিস্থিতির অবনতি করতে চাইছে হামাস। ইসরায়েলকে থামাতে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে তারা। এমনটা হতে দেওয়া হবে না। হামাস ধ্বংস না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এবং জিম্মিদের না ফেরা পর্যন্ত ইসরায়েল সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।’ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যদিও শুরুতে এ সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ দাবি করেছিল দেশটি। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে ইসরায়েল দাবি করে আসছে।
হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। নির্বিচার ও বিরামহীন হামলায় গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।