দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি জন্য এক হাহাকার জীবনের সম্মুখীন হচ্ছে মধ্যেবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্ম আয়ের মানুষ গুলো । তাদের সাথে ভুক্তে হচ্ছে দেশর প্রধান শিল্পখাত তৈরী পোশাক শ্রমিকদেরও । এরই ধারাবাহিকতায় পোশাক শ্রমিকরা গত কয়েকদিন থেকে একের পর এক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছে।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্পেরশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে আজ মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় চূড়ান্ত হতে পারে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন। গতকাল এক গোলটেবিল বৈঠকে জানিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি। এর আগে গত ২২ অক্টোবরের বৈঠকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন ১০ হাজার ৪০০ টাকা।
বৈঠকে উভয় পক্ষের মাঝামাঝি একটি মজুরি নির্ধারণ হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকার বেশি হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। তবে শ্রমিকরা চান ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা হবে। শিল্প সুরক্ষা করে শ্রমিকদের জন্য সম্মানজনক হবে এই মজুরি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকবান্ধব বলে ১৯৯৪ সালে যে মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা, ২০১৮ সালে তা তিনি আট হাজার টাকায় নিয়ে গেছেন।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ বৈঠকে সব পক্ষ আলাপ-আলোচনা করে ন্যূনতম যে মজুরি ঘোষণা করা হবে আমরা সেটি মেনে নেব। তবে শ্রমিকপক্ষও যেন সেটি মেনে নেয়—এ প্রত্যাশা থাকবে আমাদের।’ যদিও মঙ্গলবার মালিকপক্ষ বাড়িয়ে নতুন করে প্রস্তাব দেবে এবং সেটি ভালো মজুরির প্রস্তাবই দেওয়া হবে।
এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, এই উচ্চমূল্যের বাজারে শ্রমিক যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচার মতো মজুরি পায় সে দিকটি বিবেচনায় রেখেই যেন চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়।শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিক পক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে তার মাঝামাঝি একটা মজুরি চূড়ান্ত করলেই আমার মনে হয় উভয় পক্ষের জন্যই সেটি গ্রহণযোগ্য হবে।’
তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকায় উন্নীত করতে শ্রমিক, কর্মী ও ট্রেড ইউনিয়নের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে অসমতা দূরীকরণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম ইন বাংলাদেশ।
গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তবে প্রায় প্রতিবারই নিজেদের দাবি আদায়ে শ্রমিকদের রাজপথে নামার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা (৭২ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং সুস্পষ্ট শ্রমবৈষম্য) নির্ধারণের আগমুহূর্তেও পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চাকরি হারিয়েছেন শত শত শ্রমিক।
অক্সফাম গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমত প্রকাশ করে। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি সফর করেন এবং সেই সফরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য মোকাবেলায় সব শ্রমিকের ন্যায্য মজুরিপ্রাপ্তির অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ২৩ হাজার টাকার নিচে যেকোনো মজুরি দিয়ে শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
এমন পরিস্থিতিতে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ দাবি জানাচ্ছে—পোশাক শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অধিকারভিত্তিক আন্দোলনের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।