ঢাকা ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক সমালোচনায় কঠিন হুমকিতে নেতানিয়াহুর

জনরোষের মুখে পড়েছেন  ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের অতর্কিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এ ঘটনায় দেশের জনগণ সরকারের নানা ব্যর্থতা দেখছে, বিশেষ করে গোয়েন্দা ব্যর্থতার আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা একমত।

তাঁর রাজনৈতিক পতনের গতিমুখের সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের চলতি সামরিক অভিযানের ঘটনাপ্রবাহের সম্পর্ক থাকবে।
ইসরায়েলের সন্ত্রাসবিরোধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কাউন্টার টেররিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল মিরি এইজিন মনে করেন, হামাসের এই আক্রমণ ধরতেই পারেননি ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। তাঁর মতে, এটি বিশাল ব্যর্থতার নমুনা। এ বিষয়ে কর্নেল এইজিন বলেন, ‘সমালোচনামূলক কথা সামনে আসবে। তবে ইসরায়েলে তা এখনই দেখা যাবে না। এখন এই পরিস্থিতি (যুদ্ধ) থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। তারপর আঙুল তোলা শুরু করব আমরা। এটি হবে চরম ও তীব্র।

কট্টর ইসলামপন্থী প্রভাবশালী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে। গত শনিবার তারা ইসরায়েলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। গাজার সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে তারা বহু মানুষ হত্যার পাশাপাশি অনেককে জিম্মি করে। এর আগে ইসরায়েল লক্ষ্য করে শত শত রকেট ছুড়তে থাকে তারা। স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা ইসরায়েল।

চমকে যায় গোটা বিশ্বও। ইসরায়েল, তাদের ভাষ্যমতে, চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু করেছে। এতে দুই পক্ষের প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। ইসরায়েলের বার ইলান ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক জুলিয়া এলাদ-স্ট্রেনজার জানান, ইসরায়েলি জনগণ ফুঁসছে এবং তারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে মরিয়া হয়ে রয়েছে। হামাসের অতর্কিত আক্রমণ গাজায় সামরিক অভিযানের শক্ত বৈধতা তৈরি করেছে।

কিন্তু শিক্ষক জুলিয়া এলাদ-স্ট্রেনজার এ-ও বলেন, ইসরায়েলের সরকার কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে যাচ্ছে। এমনকি তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ভেতরের শরিকরাও এতে অংশ নেবে। এটি নেতানিয়াহুকে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলবে, যিনি বারবার দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংকটের প্রশ্নে কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন। ইসরায়েলি রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের নেতা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে একই রকম শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক থিংকট্যাংক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো মাইকেল স্টিফেনস। তিনি বলেন, একটি সরকারকে নিরাপত্তা ইস্যুকে দৃঢ়ভাবে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার সংকট থেকে বেঁচে ফেরা মানুষ হিসেবে পরিচিত। হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ ও বেনি গান্টজ তাঁকে জরুরি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। নেতানিয়াহু দেরি না করে ডানপন্থী সরকারের তকমা ফেলে দিয়ে জরুরি সরকার গঠন করে ফেলেন। বিষয়টিকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর আগে বিরোধী নেতারা বিচার বিভাগের সংস্কার কর্মসূচির বিরোধিতা করে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলাদ-স্ট্রেনজার মনে করেন, সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যতে ডানপন্থী শরিকদের এক পাশে সরিয়ে দেওয়া কিংবা নিঃশেষ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে পারেন লিকুদ পার্টির নেতা।

ইসরায়েলের বামপন্থী রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীদের দায় রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো মাইকেল স্টিফেনস বলেন, জনগণকে হতাশার মধ্যে ফেলায় সরকারের ওপর তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

রাজনৈতিক সমালোচনায় কঠিন হুমকিতে নেতানিয়াহুর

আপডেট সময় ০১:১৭:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

জনরোষের মুখে পড়েছেন  ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের অতর্কিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে যাচ্ছে। কারণ এ ঘটনায় দেশের জনগণ সরকারের নানা ব্যর্থতা দেখছে, বিশেষ করে গোয়েন্দা ব্যর্থতার আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা একমত।

তাঁর রাজনৈতিক পতনের গতিমুখের সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের চলতি সামরিক অভিযানের ঘটনাপ্রবাহের সম্পর্ক থাকবে।
ইসরায়েলের সন্ত্রাসবিরোধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কাউন্টার টেররিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল মিরি এইজিন মনে করেন, হামাসের এই আক্রমণ ধরতেই পারেননি ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। তাঁর মতে, এটি বিশাল ব্যর্থতার নমুনা। এ বিষয়ে কর্নেল এইজিন বলেন, ‘সমালোচনামূলক কথা সামনে আসবে। তবে ইসরায়েলে তা এখনই দেখা যাবে না। এখন এই পরিস্থিতি (যুদ্ধ) থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। তারপর আঙুল তোলা শুরু করব আমরা। এটি হবে চরম ও তীব্র।

কট্টর ইসলামপন্থী প্রভাবশালী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে। গত শনিবার তারা ইসরায়েলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। গাজার সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে তারা বহু মানুষ হত্যার পাশাপাশি অনেককে জিম্মি করে। এর আগে ইসরায়েল লক্ষ্য করে শত শত রকেট ছুড়তে থাকে তারা। স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা ইসরায়েল।

চমকে যায় গোটা বিশ্বও। ইসরায়েল, তাদের ভাষ্যমতে, চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু করেছে। এতে দুই পক্ষের প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। ইসরায়েলের বার ইলান ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক জুলিয়া এলাদ-স্ট্রেনজার জানান, ইসরায়েলি জনগণ ফুঁসছে এবং তারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে মরিয়া হয়ে রয়েছে। হামাসের অতর্কিত আক্রমণ গাজায় সামরিক অভিযানের শক্ত বৈধতা তৈরি করেছে।

কিন্তু শিক্ষক জুলিয়া এলাদ-স্ট্রেনজার এ-ও বলেন, ইসরায়েলের সরকার কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে যাচ্ছে। এমনকি তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ভেতরের শরিকরাও এতে অংশ নেবে। এটি নেতানিয়াহুকে ব্যাপক চাপের মুখে ফেলবে, যিনি বারবার দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংকটের প্রশ্নে কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন। ইসরায়েলি রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের নেতা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে একই রকম শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক থিংকট্যাংক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো মাইকেল স্টিফেনস। তিনি বলেন, একটি সরকারকে নিরাপত্তা ইস্যুকে দৃঢ়ভাবে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার সংকট থেকে বেঁচে ফেরা মানুষ হিসেবে পরিচিত। হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ ও বেনি গান্টজ তাঁকে জরুরি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। নেতানিয়াহু দেরি না করে ডানপন্থী সরকারের তকমা ফেলে দিয়ে জরুরি সরকার গঠন করে ফেলেন। বিষয়টিকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর আগে বিরোধী নেতারা বিচার বিভাগের সংস্কার কর্মসূচির বিরোধিতা করে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলাদ-স্ট্রেনজার মনে করেন, সরকারের বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যতে ডানপন্থী শরিকদের এক পাশে সরিয়ে দেওয়া কিংবা নিঃশেষ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে পারেন লিকুদ পার্টির নেতা।

ইসরায়েলের বামপন্থী রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারের ডানপন্থী মন্ত্রীদের দায় রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো মাইকেল স্টিফেনস বলেন, জনগণকে হতাশার মধ্যে ফেলায় সরকারের ওপর তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।