আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটা তাদের রাজনীতির আরেক ভণ্ডামি।’ মঙ্গলবার সকালে মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তাদের (বিএনপি) আমন্ত্রণ করছি না। জাতীয় নির্বাচনেও না, সিটি নির্বাচনেও। কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তাদের অধিকার। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি; ধানের শীষ ছিল না কিন্তু ঘোমটা পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে এসেছে। এই ঘোমটা পরা প্রার্থী সিটি নির্বাচনেও থাকবে। সিলেটের আরিফ, বর্তমান মেয়র অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। অন্যান্য সিটি করপোরেশনেরও দেখা যাবে ঘোমটা পরা এ রকম স্বতন্ত্র প্রার্থী। এটা তাদের রাজনীতির আরেক ভণ্ডামি।’
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সূত্র ধরে কাদের বলেন, ‘তাদের কপালে ৩০ সিট জুটবে কি না সেটা ভেবেই বিএনপি নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে। জনমত বিগড়ে যাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।’
‘এই আন্দোলন পাবলিক খায় না। পাবলিক যদি খায় না ওই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সেই আন্দোলনে ডাক দেওয়া যাবে, ঢেউ আসবে না-জোয়ার আসবে না। আসেনি এ যাবত, ভবিষ্যতেও আসার সম্ভাবনা নেই। মরুভূমিতে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা করছে, লাভ নেই’—বলেন কাদের।
কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মহল বিএনপির নেতৃত্বে এখনো স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত দিবসগুলোকে অস্বীকার করে। তারা পালন করে না, তারা উপেক্ষা করে। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল একটি। এদিন বিএনপির কোনো কর্মসূচি থাকে না। তারা পালন করে না। যে ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে; ৭ মার্চ তারা স্বীকারও করে না, পালনও করে না। আমাদের স্বাধীনতার পথে স্বাধিকার সংগ্রামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের নাম হচ্ছে ৭ জুন, তারা পালনও করে না, স্বীকারও করে না। এরা নাকি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে!’
‘দেখবেন বিজয় দিবস-স্বাধীনতা দিবসে তাদের অনুষ্ঠান মালায় বঙ্গবন্ধু সেই। জিয়াউর রহমান যা শুরু করে দিয়ে গেছেন সেই ধারা বিএনপি এখনো অব্যাহত রেখেছে। আপনি ডেনমার্কের প্রিন্সকে বাদ দিয়ে হ্যামলেটের মঞ্চায়ন কী করে করবেন! তারা বিজয় দিবস পালন করে, বিজয়ের মহানায়ক নেই,’ বলেন তিনি।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতেও তারা এটা করেছে, এখনো তারা একই ভাবধারার অনুসারী। স্বাধীনতার আদর্শে তারা বিশ্বাসী নয়। এটা আজকে বাংলাদেশে প্রমাণিত সত্য।’
‘তারা স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে তাকে যিনি স্বাধীনতার ঘোষণার অন্যতম পাঠক। আবুল কাশেম সন্দীপ, এম এ হান্নান—এ রকম অনেক পাঠক ছিল। জিয়াউর রহমানও এদের মধ্যে একজন, ঘোষণার পাঠক। ঘোষণার পাঠক ঘোষক হতে পারে না। ঘোষক হওয়ার বৈধ অধিকার আর কারো ছিল না বঙ্গবন্ধু ছাড়া,’ যোগ করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বাঙালির ইতিহাসের ফুটনোট (পাদটীকা) হতে পারেন কিন্তু নায়ক-মহানায়ক বানানো তাদের উদ্ভট কল্পনা, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো সংযোগ নেই, মিল নেই এবং এটা ইতিহাসের নির্লজ্জ বিকৃতি।’
জিয়াউর রহমান ইতিহাসের নায়ক নন, ইতিহাসের ফুটনোট বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাধীনতার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তির কালো ছায়া এখনো বিস্তারিত মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘এই অপশক্তি যে বিষবৃক্ষের জন্ম দিয়েছে তার উৎপাটন হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম-লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
‘আগামী নির্বাচনেও আমাদের টার্গেট মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপির নেতৃত্বে এই অপরাজনীতির অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে এবং সেটাই সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাব,’ বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।