ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরগির দামে সিন্ডিকেটের থাবা

মুরগির দাম নিয়ে দেশে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ব্রয়লারের দাম। সোনালি, লেয়ার, দেশি মুরগির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সাধারণ মানুষের পাত থেকে হারাতে বসছে প্রয়োজনীয় এ আমিষ।

ভোক্তা অধিকার বলছে, ব্রয়লারের দাম ২৯০ টাকা কেজি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। খামারি ও করপোরেট পর্যায়ের খরচ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি হতে পারে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও করপোরেট কারসাজিতেই মুরগির দামে এ আগুন।

জানা যায়, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এ দাম অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্য ব্যয় বাড়ার পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের প্রশ্ন, মুরগির অযৌক্তিক দাম কার্যকর করছে কারা। কারা সমন্বয় করে সারা দেশের মুরগির ব্যবসায়ীদের। কার ইশারায় চলছে বাজার। আর কোথায় যাচ্ছে মানুষের পকেট কেটে লুটে নেওয়া বাড়তি হাজার হাজার কোটি টাকা!

ভোক্তাদের অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুরগির বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করেছে। ব্রয়লার মুরগির এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন মেসেজের মাধ্যমে মুরগি, ডিম, বাচ্চা ও খাবারের দাম নির্ধারণ করে।

‘রাতে সারা দেশ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে মুরগি আসে। কাপ্তানবাজার, কারওয়ান বাজারের মতো এসব বাজারে করপোরেট কোম্পানির লোক থাকে। যারা বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা সম্পর্কে কোম্পানিকে জানায়। এরপর সকালে কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএস পাঠায়। সে সময় তারা তাদের মুরগি (করপোরেট কোম্পানি ও তাদের চুক্তিবদ্ধ খামারের উৎপাদিত মুরগি) লাভজনক করতে বাজারের দর ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করে।’

সুমন হাওলাদার বলেন, এ বাজারে প্রান্তিক খামারি ও করপোরেট কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। তাই যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দেয়। এরপর লোকসানে প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন কমিয়ে দিলে সরবরাহ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখন আমাদের হাতে (প্রান্তিক খামারি) পণ্য থাকে না, তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এমন দোষারোপ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ সবশেষ গত অক্টোবরে যখন মুরগির বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল, তখন এমন প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিকারও। সে সময় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে মুরগির বাজারে অস্থিরতার জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপ, সাগুনা ফুড অ্যান্ড ফিডস, আলাল পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, নারিশ পোল্ট্রি, প্যারাগন পোল্ট্রির এবং সিপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া ওই সময় কাজী ফার্মের সাভারের ডিপোতে মেসেজের মাধ্যমে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টির প্রমাণ মেলে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে।

ওই মামলার কার্যকর কোনো অগ্রগতি এখনো চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে বারবার বলছি, বাজার সিন্ডিকেটকারীদের দ্রুত কার্যকর শাস্তির আওতায় আনুন। কিন্তু সেটা কখনো কোথাও দৃশ্যমান হচ্ছে না। যদি অপরাধ করে অপরাধী শাস্তি না পায়, তাহলে তাদের সাহস বেড়ে যায়। এটাই সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাজারেও সেটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশন দীর্ঘসময় কিছুই করেনি। প্রথমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। কিন্তু সময়মতো মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো।

এদিকে মামলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, যে মামলাগুলো হয়েছিল, সেটার কার্যক্রম এখনো চলমান। মামলার কতগুলো গ্যাপ আছে। যেমন মামলা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেয়েছি। তারা সাবমিট করেছে। এরপর কমিশন থেকে বলা হয়েছে, এটা সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। এ তদন্ত চলমান। প্রায় শেষের পথে।

ট্যাগস

মুরগির দামে সিন্ডিকেটের থাবা

আপডেট সময় ০৭:৪৮:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

মুরগির দাম নিয়ে দেশে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ব্রয়লারের দাম। সোনালি, লেয়ার, দেশি মুরগির দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সাধারণ মানুষের পাত থেকে হারাতে বসছে প্রয়োজনীয় এ আমিষ।

ভোক্তা অধিকার বলছে, ব্রয়লারের দাম ২৯০ টাকা কেজি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। খামারি ও করপোরেট পর্যায়ের খরচ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি হতে পারে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও করপোরেট কারসাজিতেই মুরগির দামে এ আগুন।

জানা যায়, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এ দাম অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্য ব্যয় বাড়ার পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের প্রশ্ন, মুরগির অযৌক্তিক দাম কার্যকর করছে কারা। কারা সমন্বয় করে সারা দেশের মুরগির ব্যবসায়ীদের। কার ইশারায় চলছে বাজার। আর কোথায় যাচ্ছে মানুষের পকেট কেটে লুটে নেওয়া বাড়তি হাজার হাজার কোটি টাকা!

ভোক্তাদের অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মুরগির বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করেছে। ব্রয়লার মুরগির এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন মেসেজের মাধ্যমে মুরগি, ডিম, বাচ্চা ও খাবারের দাম নির্ধারণ করে।

‘রাতে সারা দেশ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে মুরগি আসে। কাপ্তানবাজার, কারওয়ান বাজারের মতো এসব বাজারে করপোরেট কোম্পানির লোক থাকে। যারা বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা সম্পর্কে কোম্পানিকে জানায়। এরপর সকালে কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএস পাঠায়। সে সময় তারা তাদের মুরগি (করপোরেট কোম্পানি ও তাদের চুক্তিবদ্ধ খামারের উৎপাদিত মুরগি) লাভজনক করতে বাজারের দর ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করে।’

সুমন হাওলাদার বলেন, এ বাজারে প্রান্তিক খামারি ও করপোরেট কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। তাই যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দেয়। এরপর লোকসানে প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন কমিয়ে দিলে সরবরাহ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখন আমাদের হাতে (প্রান্তিক খামারি) পণ্য থাকে না, তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এমন দোষারোপ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ সবশেষ গত অক্টোবরে যখন মুরগির বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল, তখন এমন প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিকারও। সে সময় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে মুরগির বাজারে অস্থিরতার জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপ, সাগুনা ফুড অ্যান্ড ফিডস, আলাল পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, নারিশ পোল্ট্রি, প্যারাগন পোল্ট্রির এবং সিপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া ওই সময় কাজী ফার্মের সাভারের ডিপোতে মেসেজের মাধ্যমে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টির প্রমাণ মেলে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে।

ওই মামলার কার্যকর কোনো অগ্রগতি এখনো চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে বারবার বলছি, বাজার সিন্ডিকেটকারীদের দ্রুত কার্যকর শাস্তির আওতায় আনুন। কিন্তু সেটা কখনো কোথাও দৃশ্যমান হচ্ছে না। যদি অপরাধ করে অপরাধী শাস্তি না পায়, তাহলে তাদের সাহস বেড়ে যায়। এটাই সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাজারেও সেটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশন দীর্ঘসময় কিছুই করেনি। প্রথমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। কিন্তু সময়মতো মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো।

এদিকে মামলা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, যে মামলাগুলো হয়েছিল, সেটার কার্যক্রম এখনো চলমান। মামলার কতগুলো গ্যাপ আছে। যেমন মামলা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চেয়েছি। তারা সাবমিট করেছে। এরপর কমিশন থেকে বলা হয়েছে, এটা সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। এ তদন্ত চলমান। প্রায় শেষের পথে।