ঢাকা ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ

ব্যর্থতার আরেকটি বছর পার করল বিএনপি

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপিকে বড় কোনো আন্দোলনে নামতে দেখা যায়নি। হয়ত সেই সক্ষমতাও তারা হারিয়েছিল। ঢাকার বিভিন্ন গলি-ঘুজি থেকে ঝটিকা মিছিল ও নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়েই সীমিত ছিল তাদের কর্মসূচি।

বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচি না থাকায় সংবাদমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার হয়েছে। টেলিভিশন টকশোতেও তাদের উপস্থিতি ছিল কম।

কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ করে রাজপথে সরব হতে চেষ্টা করে দলটি। খালেদা জিয়া দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন। এখন ঘরে বসেই দিন গুজরান করছেন তিনি। আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক। এসবের মধ্যেই বিভাগীয় পর্যায়ে ১০টি সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চেয়েছিল দলটি। কিন্তু ব্যর্থতা ও শূন্য অর্জন নিয়ে আরেকটি বছর পার করল দেশের বৃহত্তর বিরোধী দলটি।

এদিকে অভিযান ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর পুলিশের কথা মেনে গোলাপবাগে সমাবেশ করে বিএনপি। দলটির এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘সরকার কতটা অগণতান্ত্রিক, সেই রূপটি তারা এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পেরেছেন।’ গেল এক বছরে যা বিএনপির জন্য সান্ত্বনা হয়ে থাকল।

‘দেশ চলবে খালেদা-তারেকের নির্দেশে’
ঢাকায় সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি নেতারা আগে থেকেই উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। যেমন, গেল ৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে। কাঁচপুর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সারাদেশ বন্ধ করে দেবেন। এই বাংলাদেশ চলবে না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারও কথায় আর দেশ চলবে না।

বিএনপি নেতাদের এমন পরিষ্কার হুমকির পর সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুতরভাবেই নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বার বার বলেন, বিজয়ের মাসে বিএনপি কোনো ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইলে জবাব দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ কর্মীরাও ওইদিন রাজপথে থাকবে বলে জানানো হয়।

এই মারমুখী মনোভাব ও উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সুনসান নীরবতা নেমে আসে।

জেদাজেদি থেকে ৭ ডিসেম্বর সংঘাত
নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ১৫ নভেম্বর ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। সেই চাওয়ায় সাড়া মেলেনি। বিকল্প হিসেবে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান অথবা পূর্বাচলে সমাবেশ করতে তাদের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়া হয় দলটিকে। কিন্তু তাতেও বিএনপির সায় ছিল না। কিন্তু বিএনপি বলেছে, তারা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে।

পুলিশের দাবি, ঢাকায় গণসমাবেশের জন্য মৌখিকভাবে নয়াপল্টনের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের কথা বলেছিল বিএনপির প্রতিনিধিদল। পরে বিএনপি নেতারা তা অস্বীকার করেন। নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বিএনপির অনমনীয়তা ও জেদ থেকেই ৭ ডিসেম্বর সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত হয়। এতে মকবুল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ৪৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

এরপর বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে ককটেল, ১৬০ বস্তা চাল, পৌনে দুই লাখ বোতাল পানি ও কয়েক ডেকচি খিচুড়িও জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল বিএনপি। এ জন্যই এগুলো মজুদ করা হচ্ছিল। বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিচতলার অস্থায়ী রান্নাঘর থেকে খিচুড়ি জব্দ করা হয়।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, তারা গত কয়েকদিন ধরেই এখানে কর্মী জমায়েত করে রান্নার আয়োজন করে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু যে আয়োজন দেখলাম, তাতে স্পষ্ট তারা আমাদের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশের প্রস্ততি নিচ্ছিল।

বিএনপির ১০ সমাবেশ
মাঠের তৎপরতা থেকে বিএনপি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। বহুদিন তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়নি। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া দলটি ঝিমিয়েপড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ২০২২ সালে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। যার অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করে।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয়েছে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগের সমাবেশের মধ্য দিয়ে। ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা ও ৩ নভেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বলেন, এসব সমাবেশের কারণে অভূতপূর্ব জনসমর্থন বেড়েছে তাদের। এতে নেতাকর্মীদেরই শুধু সাহস বাড়েনি, সাধারণ জনগণেরও সাহস বেড়ে গেছে।

ঢাকার বাইরে বিএনপির সমাবেশগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ। সংঘাত হলেও তা ছিল দলটির অন্তঃকোন্দল। সমাবেশগুলোতে তারা সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছে। তবে সহিংসতার আশঙ্কায় বিভাগগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

বিএনপির ১০ দফা
গেল ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ সমাবেশ থেকে দশ দফা ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। এসব দাবি বহু আগ থেকে দলটি করে এসেছিল। কিন্তু বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার কারণে তাদের দাবিগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যে কারণে বিএনপি সমাবেশ থেকে নতুন আদলে দশ দফা ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাতে মানুষের সাড়া মেলেনি। ১০ দফা ঘোষণাগুলো নিচে দেয়া হলো:

• বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

• ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ–এর আলোকে দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

• বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।

• খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী সব মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। দেশে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।

• ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন–১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।

• বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার, পানিসহ জনসেবা খাতগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।

• নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

• গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত, শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।

• গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

• আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ
গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল সংসদে বিএনপি দলীয় সদস্যরা। পরে তারা সশরীরে স্পিকারের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্যরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ও সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলটির সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বগুড়া–৬ আসনের মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি পাঁচজন তখন শপথ নেন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেয়ায় ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সেখানে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জি এম সিরাজ।

১০ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র-গণবিরোধী কার্যকলাপে বাকস্বাধীনতা, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, গণগ্রেফতার, গুম, হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।

জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি ভুল করেছে। তাদের এই ভুলের জন্য পরে অনুতপ্ত হতে হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।

২০ দলে ভাঙন
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি। পরে পরিসর বেড়ে ২০১২ সালে ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। তবে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখে বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে গড়ে তোলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

নির্বাচনে ভরাডুবির পর সেই জোট থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু ২০ দলীয় জোটও আর পুনরুজ্জীবিত হয়নি। তা নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগের তীর ছিল বড় দল বিএনপির দিকেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কার্যত, এখন ২০ দলীয় জোট ওইভাবে নাই। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা।’

যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা
তবে জোট ভাঙলেও সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। দলটি বলছে, বিভাগীয় গণসমাবেশগুলো একক দলীয় কর্মসূচি হলেও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করবে তারা। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার কয়েকটি সড়কে গণমিছিল করে বিএনপি। পরে বিভাগীয় শহরগুলোতে একযোগে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তারা।

ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে গত ১‌০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ গণমিছিল বের করে বিএনপি। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে গণমিছিল পালন করলেও সেদিন আওয়ামী লীগের সম্মেলন থাকায় ঢাকায় তা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

একই সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তিনি জানান। আশা প্রকাশ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির পাশাপাশি গণমিছিলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী দল ও জোটও ‘যুগপৎভাবে’ ১১ জানুয়ারি গণ অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস গ্রেফতার
নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার উসকানি ও পরিকল্পনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোলাপবাগ সমাবেশের আগের দিন ৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এখনো মুক্তি পাননি তারা।

এদিকে মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে ২৯ ডিসেম্বর বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৬০ বিশিষ্ট নাগরিক। যাদের মধ্যে আছেন, লেখক ও শিক্ষক বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ (অব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ (অব), বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ।

এসব বুদ্ধিজীবীরা কেবল ফখরুলের মুক্তি দাবি করলেও মির্জা আব্বাসসহ অন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছু বলেননি। যা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এক সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারী মশকরা করে বলেন, তারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। মির্জা আব্বাস কি তবে মির্জা বাড়ির পালিতপুত্র?

আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

ব্যর্থতার আরেকটি বছর পার করল বিএনপি

আপডেট সময় ০৯:৩৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপিকে বড় কোনো আন্দোলনে নামতে দেখা যায়নি। হয়ত সেই সক্ষমতাও তারা হারিয়েছিল। ঢাকার বিভিন্ন গলি-ঘুজি থেকে ঝটিকা মিছিল ও নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়েই সীমিত ছিল তাদের কর্মসূচি।

বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচি না থাকায় সংবাদমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার হয়েছে। টেলিভিশন টকশোতেও তাদের উপস্থিতি ছিল কম।

কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ করে রাজপথে সরব হতে চেষ্টা করে দলটি। খালেদা জিয়া দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন। এখন ঘরে বসেই দিন গুজরান করছেন তিনি। আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক। এসবের মধ্যেই বিভাগীয় পর্যায়ে ১০টি সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চেয়েছিল দলটি। কিন্তু ব্যর্থতা ও শূন্য অর্জন নিয়ে আরেকটি বছর পার করল দেশের বৃহত্তর বিরোধী দলটি।

এদিকে অভিযান ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর পুলিশের কথা মেনে গোলাপবাগে সমাবেশ করে বিএনপি। দলটির এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘সরকার কতটা অগণতান্ত্রিক, সেই রূপটি তারা এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পেরেছেন।’ গেল এক বছরে যা বিএনপির জন্য সান্ত্বনা হয়ে থাকল।

‘দেশ চলবে খালেদা-তারেকের নির্দেশে’
ঢাকায় সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি নেতারা আগে থেকেই উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। যেমন, গেল ৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে। কাঁচপুর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সারাদেশ বন্ধ করে দেবেন। এই বাংলাদেশ চলবে না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারও কথায় আর দেশ চলবে না।

বিএনপি নেতাদের এমন পরিষ্কার হুমকির পর সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুতরভাবেই নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বার বার বলেন, বিজয়ের মাসে বিএনপি কোনো ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইলে জবাব দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ কর্মীরাও ওইদিন রাজপথে থাকবে বলে জানানো হয়।

এই মারমুখী মনোভাব ও উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সুনসান নীরবতা নেমে আসে।

জেদাজেদি থেকে ৭ ডিসেম্বর সংঘাত
নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ১৫ নভেম্বর ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। সেই চাওয়ায় সাড়া মেলেনি। বিকল্প হিসেবে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান অথবা পূর্বাচলে সমাবেশ করতে তাদের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়া হয় দলটিকে। কিন্তু তাতেও বিএনপির সায় ছিল না। কিন্তু বিএনপি বলেছে, তারা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে।

পুলিশের দাবি, ঢাকায় গণসমাবেশের জন্য মৌখিকভাবে নয়াপল্টনের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের কথা বলেছিল বিএনপির প্রতিনিধিদল। পরে বিএনপি নেতারা তা অস্বীকার করেন। নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে বিএনপির অনমনীয়তা ও জেদ থেকেই ৭ ডিসেম্বর সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত হয়। এতে মকবুল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ৪৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

এরপর বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে ককটেল, ১৬০ বস্তা চাল, পৌনে দুই লাখ বোতাল পানি ও কয়েক ডেকচি খিচুড়িও জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল বিএনপি। এ জন্যই এগুলো মজুদ করা হচ্ছিল। বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের নিচতলার অস্থায়ী রান্নাঘর থেকে খিচুড়ি জব্দ করা হয়।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, তারা গত কয়েকদিন ধরেই এখানে কর্মী জমায়েত করে রান্নার আয়োজন করে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু যে আয়োজন দেখলাম, তাতে স্পষ্ট তারা আমাদের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশের প্রস্ততি নিচ্ছিল।

বিএনপির ১০ সমাবেশ
মাঠের তৎপরতা থেকে বিএনপি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। বহুদিন তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়নি। কিন্তু রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া দলটি ঝিমিয়েপড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে ২০২২ সালে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। যার অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করে।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয়েছে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগের সমাবেশের মধ্য দিয়ে। ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা ও ৩ নভেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন বলেন, এসব সমাবেশের কারণে অভূতপূর্ব জনসমর্থন বেড়েছে তাদের। এতে নেতাকর্মীদেরই শুধু সাহস বাড়েনি, সাধারণ জনগণেরও সাহস বেড়ে গেছে।

ঢাকার বাইরে বিএনপির সমাবেশগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ। সংঘাত হলেও তা ছিল দলটির অন্তঃকোন্দল। সমাবেশগুলোতে তারা সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছে। তবে সহিংসতার আশঙ্কায় বিভাগগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

বিএনপির ১০ দফা
গেল ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ সমাবেশ থেকে দশ দফা ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। এসব দাবি বহু আগ থেকে দলটি করে এসেছিল। কিন্তু বিএনপি নেতাদের দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার কারণে তাদের দাবিগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যে কারণে বিএনপি সমাবেশ থেকে নতুন আদলে দশ দফা ঘোষণা দিয়েছে। তবে তাতে মানুষের সাড়া মেলেনি। ১০ দফা ঘোষণাগুলো নিচে দেয়া হলো:

• বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

• ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ–এর আলোকে দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

• বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।

• খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী সব মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। দেশে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।

• ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন–১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।

• বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার, পানিসহ জনসেবা খাতগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।

• নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

• গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত, শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।

• গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

• আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ
গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল সংসদে বিএনপি দলীয় সদস্যরা। পরে তারা সশরীরে স্পিকারের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্যরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ও সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফারহানা।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দলটির সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। বগুড়া–৬ আসনের মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি পাঁচজন তখন শপথ নেন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেয়ায় ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সেখানে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জি এম সিরাজ।

১০ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র-গণবিরোধী কার্যকলাপে বাকস্বাধীনতা, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, গণগ্রেফতার, গুম, হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।

জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি ভুল করেছে। তাদের এই ভুলের জন্য পরে অনুতপ্ত হতে হবে। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।

২০ দলে ভাঙন
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি। পরে পরিসর বেড়ে ২০১২ সালে ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। তবে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখে বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে গড়ে তোলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

নির্বাচনে ভরাডুবির পর সেই জোট থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু ২০ দলীয় জোটও আর পুনরুজ্জীবিত হয়নি। তা নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতাদের অভিযোগের তীর ছিল বড় দল বিএনপির দিকেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কার্যত, এখন ২০ দলীয় জোট ওইভাবে নাই। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা।’

যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা
তবে জোট ভাঙলেও সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। দলটি বলছে, বিভাগীয় গণসমাবেশগুলো একক দলীয় কর্মসূচি হলেও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করবে তারা। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার কয়েকটি সড়কে গণমিছিল করে বিএনপি। পরে বিভাগীয় শহরগুলোতে একযোগে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তারা।

ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে গত ১‌০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ গণমিছিল বের করে বিএনপি। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে গণমিছিল পালন করলেও সেদিন আওয়ামী লীগের সম্মেলন থাকায় ঢাকায় তা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

একই সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তিনি জানান। আশা প্রকাশ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির পাশাপাশি গণমিছিলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী দল ও জোটও ‘যুগপৎভাবে’ ১১ জানুয়ারি গণ অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস গ্রেফতার
নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার উসকানি ও পরিকল্পনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোলাপবাগ সমাবেশের আগের দিন ৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এখনো মুক্তি পাননি তারা।

এদিকে মির্জা ফখরুলের মুক্তির দাবিতে ২৯ ডিসেম্বর বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৬০ বিশিষ্ট নাগরিক। যাদের মধ্যে আছেন, লেখক ও শিক্ষক বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ (অব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ (অব), বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ।

এসব বুদ্ধিজীবীরা কেবল ফখরুলের মুক্তি দাবি করলেও মির্জা আব্বাসসহ অন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছু বলেননি। যা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এক সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারী মশকরা করে বলেন, তারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। মির্জা আব্বাস কি তবে মির্জা বাড়ির পালিতপুত্র?