মরুর বুকে একের পর এক নক্ষত্রের পতন হচ্ছে। নেইমারের পর এবার সিআরসেভেন। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে রোনালদোর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে দেয় মরক্কো। পর্তুগালকে হতাশায় ডুবিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠে আফ্রিকান দলটি। কোয়ার্টারে পর্তুগিজদের ১-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কানরা।
দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পরও পর্তুগালের এমন হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভক্তরা। বিশ্বমঞ্চ থেকে পর্তুগালের এমন বিদায়ে হতাশ দেশটির সমর্থকরা। রোনালদোকে সেরা একাদশে না রাখায় ক্ষোভ ঝড়েছে সমর্থকদের কণ্ঠে।
তারা বলেন, পর্তুগাল ভালো খেলেও হেরে গেছে। রোনালদো অসাধারণ খেলেন। তাকে যদি প্রথম থেকেই নামানো হতো, তবে মরক্কো আরও চাপে থাকত। হয়তো এ ম্যাচটা পর্তুগিজদের পক্ষেই কথা বলত।
কাতার বিশ্বকাপে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না রোনালদোর। আগের ম্যাচের মতো মরক্কোর বিপক্ষেও বদলি হিসেবে নেমেছিলেন তিনি। বিরতির পরপরই তাকে নামিয়েছিলেন কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। তখন পর্তুগাল মরক্কোর বিপক্ষে এক গোল পিছিয়ে। রোনালদোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। তিনি সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা। ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন রোনালদো।
কত আলোর ঝলকানি, কত ক্যামেরার লেন্স তাকে খুঁজে ফিরে। শেষবারের মতো বিশ্ব মঞ্চে তার পদচারণা। বাস্তবতা তাকে দাঁড় করিয়েছে এই অবস্থায়। তাই তো আবেগ তাকে ছুঁয়েছে। আবেগ হয়তো এর আগেও তাকে ছুঁয়েছিল। তবে এতটা হৃদয়বিদারক মর্মাহত রোনালদোকে কে দেখেছে! ফুটবল বিশ্ব দেখেনি এর আগে। আর হয়তো দেখবেও না। বয়সটা যে ৩৭।
ফুটবল ক্যারিয়ারের এপিঠ-ওপিঠ সবটাই দেখা হয়ে গেছে তার। বিশ্বমঞ্চে শুরুর একাদশে রাখা হয়নি সিআরসেভেনকে। পর্তুগালের জার্সিতে তার দেয়ার যে সময় শেষ হয়ে এসেছে, সেটা জানা হয়ে গেছে। জানা হয়ে গেছে, তাকে ঘিরে আর পরিকল্পনা সাজানো হয় না সেলেকাও শিবিরে। বিশ্বকাপ মিশনে তিনি এখন পার্শ্বচরিত্র।
স্বপ্নীল জার্সিতে আবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগটা তিনি পেলেন না। বিশ্বমঞ্চে মরক্কোর মতো দলের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় তার দলকে। মাঠে থেকেই দর্শক হতে হয় প্রতিপক্ষের উল্লাসের।
তাই তো এমন কষ্টে রোনালদোরাও ভেঙে পড়েন। অশ্রু চেপে রাখতে না পেরে সতীর্থদের ফেলে মাঠ ছাড়েন তিনি। এই মঞ্চে হয়তো আর তার পদধূলি পড়বে না। শেষবার তাই হয়তো একটু বেশি আপ্লুত সিআরসেভেন। বিদায় তো এমনই হয়!
তবে ম্যাচটি হেরে পর্তুগাল বিদায় নিলেও বদলি হিসেবে নেমে একটি রেকর্ড গড়েছেন রোনালদো। আগে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি ছিল কুয়েতের স্ট্রাইকার বাদের আল-মুতাওয়ার। সেই রেকর্ডে এখন ভাগ বসিয়েছে সিআরসেভেন। দুজনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা এখন ১৯৬।
এর আগে কাতার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন রোনালদো। ঘানার বিপক্ষে পর্তুগালের উদ্বোধনী ম্যাচে গোল করেছিলেন রোনালদো। সে ম্যাচে গোল করে বনে যান ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করেছেন।
কাতার বিশ্বকাপে বিদায়ের মধ্য দিয়েই হয়তো আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও অনেকেই বিশ্বাস করছেন এটাই রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। পাঁচ বিশ্বকাপে ২২ ম্যাচ খেলে ৮টি গোল করেছেন রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৯৬ ম্যাচে গোল করেছেন ১১৮ টি।