প্রথমার্ধে অফসাইডে বাতিল হওয়া ৩ গোলের আফসোসে দ্বিতীয়ার্ধে পুড়তে হলো আর্জেন্টিনাকে। গোটা ম্যাচে ৪ গোল করেও যে সৌদি আরবের বিপক্ষে জেতা হলো না মেসিদের। র্যাঙ্কিংয়ের ৫১ নম্বরে থাকা এশিয়ান দেশটির কাছে অঘটনের শিকার হয়েছে র্যাঙ্কিংয়ের ৩ নম্বরে থাকা আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার কট্টর বিরোধীরাও হয়ত কল্পনা করেননি এমন অঘটনের।
লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গেছে টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধে ২ গোল হজম করে। এই হারে শেষ হলো আর্জেন্টিনার টানা ৩৬ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা।
২০০২ বিশ্বকাপেও তারকাবহুল দল নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল ফর্মের তুঙ্গে থাকা আর্জেন্টিনা। সেবারও র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল তারা। অথচ সেবার বাজে পারফরম্যান্সের কারণে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে যায় গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, ক্যানিজিয়াদের আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে ফের উঁকি দেয় সেই স্মৃতি।
লুসিয়ালে এদিন দ্বিতীয় মিনিটেই ডি-বক্সের জটলা ঠেলে মেসির কিক ফেরান গোলরক্ষক। ষষ্ঠ মিনিটে ডি পলকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রি কিক নেয়ার সময় ডি-বক্সে আর্জেন্টিনার একজনকে ফেলে দেয় সৌদি আরবের ডিফেন্ডার। ভিএআর দেখে পেনাল্টি দেয় রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন মেসি।
সৌদি আরবের বিপক্ষে এই প্রথম গোল পেলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। গ্রিন ফ্যালকনদের বিপক্ষে আগেও এক ম্যাচ খেললে সেবার গোল পাননি মেসি। দ্বিতীয় দেখায় গোল করে মেটালেন আক্ষেপ।
পঞ্চম বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচটি গোল করে স্মরণীয় করে রাখলেন মেসি। ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে এসে সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে গোল করেছিলেন তিনি। ২০১০ বিশ্বকাপে কোন গোল করতে না পারলেও পরের বিশ্বকাপে ৪ গোল করে ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হারলেও সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছিলেন গোল্ডেন বল।
২০১৮ বিশ্বকাপে ১টি গোল করেন মেসি। পাঁচ আসরে খেলে ৭গোল করলেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী তারকা। গোল পেয়ে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি এদিন ছিলেন দারুণ ছন্দে।
২০ মিনিটের সময় ডি-বক্সের বাইরে থেকে উড়িয়ে মারেন পাপু গোমেজ। সুযোগ নষ্টের পরের মিনিটে ফের সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে লম্বা করে বাড়ানো বল খুঁজে পায় মেসিকে। অরক্ষিত মেসি গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোলও করেন। কিন্তু রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজান।
সৌদি আরব এদিন চমৎকারভাবে অফসাইড ট্র্যাপ ব্যবহার করে চমক দেখিয়েছে। বারবার এই ফাঁদে পা দিয়েছেন মেসি-মার্টিনেজ। যার কারণে প্রথমার্ধে আরও দুই গোল করেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি আর্জেন্টিনা। মেসির পর বাতিল হয়েছে লাউতারো মার্টিনেজের জোড়া গোল।
২৭ মিনিটে গোল করেছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। সৌদি রক্ষণের ফাঁক খুঁজে নিয়ে অরক্ষিত লাউতারো খুঁজে নেন বল। একা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি তার। তবে গোলটি রেফারি ভিএআর দেখে অফসাইডের কারণে বাতিল করে দেন। ৩৫ মিনিটে বাতিল হয় লাউতারো মার্টিনেজের আরও এক গোল। এবারো বাধ সাধে অফসাইড।
প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ধাক্কা খায়। দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে সৌদি আরবকে তটস্থ করে রাখলেও দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টা জবাব দিতে থাকে সৌদি আরব। ৪৮ মিনিটে গোটা দলকে স্তব্ধ করে দিয়ে সমতায় ফেরে সৌদি আরব। সালেহ আল সেহরির গোলে সমতায় ফেরে গ্রিন ফ্যালকনরা। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে দারুণ দক্ষতায় গোল করেন আল সেহরি।
৬২ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোল প্রায় শোধ করেই দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সে জটলা থেকে গোলে শট নিয়েছিলেন মার্টিনেজ। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় গোললাইন থেকে বল ফেরান গোলরক্ষক আল ওয়াইস। ৬৮ মিনিটে মেসির বাড়ানো বিপজ্জনক পাস স্লাইডিং ট্যাকলে ক্লিয়ার করেন সৌদি মিডফিল্ডার ফারাজ।
৭১ মিনিটে আর্জেন্টিনার আরেকটি দারুণ আক্রমণ রুখে দেন সৌদি গোলরক্ষক। সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণে ওঠার পর ডি মারিয়ার নেয়া শট লুফে নেন তিনি।
৭৭ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রি কিক নিতে গিয়ে বল উড়িয়ে মারেন মেসি।
৮৪ মিনিটে ফের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। সতীর্থের ক্রস থেকে মেসির হেড সরাসরি লুফে নেন গোলরক্ষক।
ম্যাচের শেষদিকে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। তবে গোলরক্ষক আল ওয়াইসি একের পর এক আক্রমণ রুখে দেন। যোগ করা সময়ে দুবার নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন তিনি। এর মধ্যে ১০১ মিনিটে ম্যাচের সেরা সুযোগটাই পেয়েছিলেন ইউলিয়ান আলভারেজ। কিন্তু তার হেড অনেকটা লাফিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন আল ওয়াইসি।
১৯৭৪ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম কোন বিশ্বকাপে নিজেদের শুরুর ম্যাচে ২ গোল খেল আলবিসেলেস্তেরা। ২০১৯ এর কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হারার পর এই প্রথম কোন ম্যাচ হারলো তারা।