বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক টুইটারের মালিক হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কিছু নির্বাহীদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পরাগ আগরওয়াল, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাস্ক।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) এক টুইটে টুইটার কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইলন মাস্ক।
গত বুধবার (২৬ অক্টোবর) টুইটার কার্যালয়ে যান বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। টুইটার ক্রয় চুক্তিতে আদালতের বেধে দেয়া সময় সীমা শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চুক্তিটি সম্পন্ন করবেন মাস্ক। এরই অংশ হিসেবে তার এই পরিদর্শন।
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং সিএনবিসি তাদের অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, টুইটার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ইলন মাস্কের প্রাথমিক পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এর শীর্ষ পদে থাকা প্রধান নির্বাহী পরাগ আগরওয়ালকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া। এপ্রিলে প্রথম চুক্তি হওয়ার পর ইলন মাস্ক তাকে সরিয়ে দিতে চাইলে পরাগ আগরওয়াল আদালতের শরণাপন্ন হন, যেন ইলন মাস্ক চুক্তি থেকে সরে আসতে না পারেন।
টুইটার ক্রয় চুক্তির নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোয় কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় ঘুরে দেখেছেন ইলন মাস্ক। বুধবার এক ভিডিও পোস্টে নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এতে দেখা যায়, হাতে একটি সিংক নিয়ে সদর দফতরে ঢুকছেন তিনি। এর ক্যাপশনে মজা করেই লিখেছেন, ‘আসুন, ডোবা যাক!’ এছাড়া নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে নিজের পরিচয় বদলেছেন। নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন ‘চিফ টুইট’।
টুইটার ইস্যুতে বুধবার আরও দুটি টুইট করেছেন ইলন মাস্ক। টুইটারের প্রশংসা করে একটি বার্তায় তিনি লিখেছেন, নাগরিক সাংবাদিকতার ক্ষমতায়নে টুইটার যা করেছে, তা একটি ভালো দিক। কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়া সাধারণ মানুষ এতে খবর প্রকাশ করতে পারছেন। আরেক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, টুইটারের কিছু অসাধারণ মানুষের সঙ্গে আজ সাক্ষাৎ হলো।
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামনের মাসগুলোতে টুইটারের আরও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে। টুইটারের মালিকানা ইলন মাস্ক কিংবা বর্তমান কর্তৃপক্ষ যার হাতেই থাকুক না কেন, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মী ছাঁটাই হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টুইটারের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগামী বছরের শেষ নাগাদ কোম্পানির কর্মীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ থেকে ৮০ কোটি ডলার কাটছাঁটের পরিকল্পনা করেছে। এর মানে হলো, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় এক–চতুর্থাংশ কর্মশক্তিকে বিদায় নিতে হবে।
এ বছরের এপ্রিলে টুইটার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন ইলন মাস্ক। এরপর বিশ্বজুড়েই শুরু হয় আলোড়ন। তবে মে মাসে যোগাযোগ মাধ্যমটি কেনার চুক্তি থেকে সরে আসার কথা বলেন মাস্ক। তার অভিযোগ টুইটারের বট এবং স্পাম অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কত, তা নিয়ে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করে তারা।
ক্রয় প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বাধ্য করার জন্য ডেলাওয়্যার চ্যান্সারি আদালতে মাস্কের নামে মামলা করে টুইটার কর্তৃপক্ষ। পরে, আদালতের নির্দেশে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কিনতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় সীমা বেধে দেয়া হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মাস্ক আবারও নিজের সিদ্ধান্ত বদল করেন। বলেন, মূল শর্তগুলো মেনেই তিনি চুক্তিটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।