ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ফিলিপাইনের কালো আখ চাষে সফল ‍উদ্যোক্তা সোহেল রানা

নওগাঁ প্রতিনিধি:

 নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকায় ৪৫ একর (১৩৫ বিঘা) জমিতে ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ নামে তাঁর গড়ে তোলা মিশ্র ফলবাগান এলাকায় ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। বাগানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন তিনি।

চাকরি ছেড়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়া সোহেল এবার তাঁর খামারে চাষ করেছেন ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ (ব্ল্যাক সুগার কেইন)। সেই আখ সুমিষ্ট ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও এ জাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

আখগুলোর বাইরের অংশ দেখতে কালো খয়েরি। লম্বায় সাধারণত ১২ থেকে ১৬ ফুট। দেশীয় আখের মতো হলেও এর আছে বেশ কিছু ভিন্নতা। এই আখের কাণ্ড কিছুটা নরম, রস বেশি, মিষ্টি বেশি, চাষের পর লাভ বেশি। এসব কথা ভেবেই অনেক চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ করেছে।

১৩৫ বিঘার মিশ্র ফলবাগানের ভেতরে করা সরু পথের দুই পাশে সারি করে আখ চাষ করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির আখের তুলনায় এসব আখ বেশি লম্বা। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরো।

সোহেল রানা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ৮০০ বীজ সংগ্রহ করেন জয়পুরহাট থেকে। সেই বীজ থেকে আখ চাষের পর সেখান থেকে তিনি ৫ হাজার বীজ তৈরি করেন। সব বীজ তিনি বাগানে পায়ে হাঁটা পথগুলোতে রোপণ করেন। বীজ রোপণের পর কিছু নষ্ট হলেও এখন তাঁর বাগানে শোভা পাচ্ছে ফিলিপাইনের সাড়ে তিন হাজার আখ। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৬০০টি আখ প্রতিটি ৮০-৮৫ টাকা দামে বিক্রি করেছেন।

ফিলিপাইনের কালো খয়েরি বা কালো রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের চাষিরা দেখতে ভিড় করছেন বলে জানালেন সোহেল। তিনি বলেন, বিভিন্ন নার্সারির মালিক ও কৃষিভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আখখেত পরিদর্শন করে বীজ কেনার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষের কৌশল জেনে নিচ্ছেন। এ বছরই তিনি ১০ হাজার আখবীজ বিক্রির আশা করছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, সোহেল রানা উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) মেনে ফল চাষ করে থাকেন। গ্যাপ মেনে আম চাষ করায় এ বছর আমের মৌসুমে তিনি ১৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করেছেন। এ ছাড়া তিনি তাঁর বাগানে পুষ্টিকর ফল ড্রাগন, প্যাসন, পেয়ারা, বরই চাষ করেও সফল হয়েছেন। ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষেও তিনি সফল হয়েছেন। অন্য চাষিরা এই আখ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেন। কৃষি বিভাগ নতুন জাতের এ আখ চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা (৪০)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকায় একটি দৈনিক পত্রিকার ফিচার বিভাগে কিছুদিন তিনি চাকরি করেন। সেই চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় পৈতৃক ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি এখন ১৭৫ বিঘা জমিতে পৃথক তিনটি সমন্বিত খামার গড়ে তুলেছেন।

ট্যাগস

নওগাঁয় ফিলিপাইনের কালো আখ চাষে সফল ‍উদ্যোক্তা সোহেল রানা

আপডেট সময় ০১:০৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি:

 নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকায় ৪৫ একর (১৩৫ বিঘা) জমিতে ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ নামে তাঁর গড়ে তোলা মিশ্র ফলবাগান এলাকায় ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। বাগানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফল চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন তিনি।

চাকরি ছেড়ে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পড়া সোহেল এবার তাঁর খামারে চাষ করেছেন ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ (ব্ল্যাক সুগার কেইন)। সেই আখ সুমিষ্ট ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও এ জাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

আখগুলোর বাইরের অংশ দেখতে কালো খয়েরি। লম্বায় সাধারণত ১২ থেকে ১৬ ফুট। দেশীয় আখের মতো হলেও এর আছে বেশ কিছু ভিন্নতা। এই আখের কাণ্ড কিছুটা নরম, রস বেশি, মিষ্টি বেশি, চাষের পর লাভ বেশি। এসব কথা ভেবেই অনেক চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ চাষ করেছে।

১৩৫ বিঘার মিশ্র ফলবাগানের ভেতরে করা সরু পথের দুই পাশে সারি করে আখ চাষ করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির আখের তুলনায় এসব আখ বেশি লম্বা। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরো।

সোহেল রানা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন জাতের ৮০০ বীজ সংগ্রহ করেন জয়পুরহাট থেকে। সেই বীজ থেকে আখ চাষের পর সেখান থেকে তিনি ৫ হাজার বীজ তৈরি করেন। সব বীজ তিনি বাগানে পায়ে হাঁটা পথগুলোতে রোপণ করেন। বীজ রোপণের পর কিছু নষ্ট হলেও এখন তাঁর বাগানে শোভা পাচ্ছে ফিলিপাইনের সাড়ে তিন হাজার আখ। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৬০০টি আখ প্রতিটি ৮০-৮৫ টাকা দামে বিক্রি করেছেন।

ফিলিপাইনের কালো খয়েরি বা কালো রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের চাষিরা দেখতে ভিড় করছেন বলে জানালেন সোহেল। তিনি বলেন, বিভিন্ন নার্সারির মালিক ও কৃষিভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আখখেত পরিদর্শন করে বীজ কেনার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষের কৌশল জেনে নিচ্ছেন। এ বছরই তিনি ১০ হাজার আখবীজ বিক্রির আশা করছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, সোহেল রানা উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) মেনে ফল চাষ করে থাকেন। গ্যাপ মেনে আম চাষ করায় এ বছর আমের মৌসুমে তিনি ১৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করেছেন। এ ছাড়া তিনি তাঁর বাগানে পুষ্টিকর ফল ড্রাগন, প্যাসন, পেয়ারা, বরই চাষ করেও সফল হয়েছেন। ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষেও তিনি সফল হয়েছেন। অন্য চাষিরা এই আখ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেন। কৃষি বিভাগ নতুন জাতের এ আখ চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা (৪০)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ঢাকায় একটি দৈনিক পত্রিকার ফিচার বিভাগে কিছুদিন তিনি চাকরি করেন। সেই চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় পৈতৃক ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি এখন ১৭৫ বিঘা জমিতে পৃথক তিনটি সমন্বিত খামার গড়ে তুলেছেন।