মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দায় সমবায় সমিতির নামে জমজমাট সুদ কারারের অভিযোগ উঠেছে। জেলা এবং উপজেলা সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বাহারি নামে শত শত ঋণদানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। কেউ কেউ ‘লাখপতি অফার’-এর নামে দিচ্ছেন লোভনীয় প্রস্তাব। এ অফারের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই সর্বশান্ত হয়েছেন ।
আবার ফাঁকা চেক নিয়ে সেই চেকে মোটা অংকের অর্থ বসিয়ে মামলা দিয়ে দরিদ্র মানুষ কে হয়রানী করা হচ্ছে । সমবায় অফিস থেকে ব্যবসার জন্য জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রীতিমত আমানত সংগ্রহ চড়া সুদে সপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তিতে ঋন প্রদান করছে কিছু প্রতিষ্টান ।
এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় গড়ে উঠছে এসব সমবায় সমিতি নামক তথাকথিত প্রতিষ্টান । উপজেলার চেয়ারম্যানের মোড়, সতীহাট-ঋষি পাড়া,পলাশবাড়ি,চৌবাড়িয়াসহ অন্যান্য এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলে এসব সুদের কারবার।
এ ছাড়া উপজেলা সদর, সতীহাট, পাঁজরভাঙ্গা, জোতবাজার,চকশৈল্যা,জোঁকাহাট,কালিকাপুর চকগৌড়ি,দেলুয়াবাড়ি,সাবাইহাট,মৈনম,ভোলাবাজার,খৈলসাকুড়ি,কলেজমোড়,গোটগাড়ী,মঞ্জিলতলা, সাতবাড়িয়া, কাঞ্চন,পরানপুর- গোপালপুর বাজার, বানিসর কালিতলা, শরিরমোড়,বৈদ্যপুর বাজার এলাকাতেও রয়েছে নানা নামের ব্যাবসায়ী সমবায় সমিতি।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন প্রতিবেদক।
সতীহাট বাজারের ব্যাবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, এসব সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গ্রামের হতদরিদ্র থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন সর্বশান্ত। ইতোমধ্যে বহু মানুষ ঘরবাড়ি বিক্রি করে দেশান্তরী হয়েছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
অপরদিকে সুদ ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। শিক্ষক আবুল কালামসহ অন্যান্য ভ‚ক্তভোগীরা বলেন, এনজিও গুলোর দাপটে এলাকায় টেকা দায়। সমবায় সমিতির নামে আইন বহির্ভূতভাবে ২০ থকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ঋণ দিয়ে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। মান্দার কসক ইউনিয়নের পলাশবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি নামের একটি প্রতিষ্টানের ৩য় শাখা ।
জানা গেছে, মৈনম ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি সমবায় দপ্তর থেকে ব্যবসায়ীক কারবার পরিচালনার জন্য রেজিস্ট্রেশন নিয়ে মৈনম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মোড়, গণেশপুর ইউনিয়নের সতীহাট-ঋষি পাড়া,কসব ইউনিয়নের পলাশবাড়ি এবং ভারশোঁ ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া বাজারে সোনালী ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ নামে শাখা খুলে বসে । লাখো প্রতি অফার দিয়ে সংগ্রহ করে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান আমানত । সরজমিনে দেখা যায় যেসব অফিসের নেই কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা কর্মচারী।
অধিক লাভের লোভনীয় অফার দিয়ে সোনালী ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমবায় সমিতিতে টাকা জমা রাখতে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করছেন তিনি । ‘লাখপতি অফার’ এর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যাবহার দেখিয়ে ব্যাংকিং কায়দায় পাঁচ বছর, সাত বছর ও ১০ বছর মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছেন মান্নান ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আব্দুল মান্নান একটি দলের দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে সাধারণ মানুষকে ডিপিএস জমা করার প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আমানত সংগ্রহ করছেন। তার সংগঠন টি ব্যবসায়ীক সমিতি হলেও সেখানে এনজিও ভিত্তিক কাজ পরিচালনা করছেন । অভিযোগ রয়েছে কোনো সদস্য দুই থেকে তিন কিস্তি টাকা জমা দিতে না পারলেও তেমন কোনো চাপ থাকে না। কিন্তু তিন-চার বছর হওয়ার পর খেলাপির দায়ে হঠাৎ তার ডিপিএস কেটে দেওয়া হয়। কোনো ডিপিএসকারী বিপদে পড়ে যদি ঋণ নিতে যান তাহলে তার কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করা হয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম,দূর্নীতি এবং গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে সম্প্রতি মান্দার সাবাইহাট এলাকায় ওয়াটার সাপ্লাই কোম্পানী লিঃ সিলগালা করে দেয় প্রশাসন। এতে সোনালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের মাঝে দেখা দিয়েছে শংকা । বৈধ কাগজ পত্র ছাড়া বিপুল আমানত জমা রাখা এ প্রতিষ্টান গ্রাহকের রয়েছে চরম দু:চিন্তায় ।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ি শাখা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ডটার্স ভিলায় সোনালী ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি লিঃ নামে প্রকল্প অফিস খুলে নানা ধরনের লোভনীয় অফার দিয়ে সুদের ব্যবসা করছেন । এ বিষয়ে আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি, সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য হুমকি দেন । তিনি দাবী করেন সমবায় অফিসের কর্মকর্তা ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানে কারো যাওয়ার এখতিয়ার নেই ।
। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, তারা ওই সোনালী ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি লিঃ থেকে ঋণ নিয়ে নিয়মিতভাবে আব্দুল মান্নানকে চড়াসুদ দেন । এরপর মাঝেমধ্যে তার চাহিদামত সুদের টাকা দিতে না পারায় ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে অথবা ব্যাংকের ফাঁকা চেক নিয়ে ঋণ গ্রহিতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন।
পলাশবাড়ি শাখায় তার এসব প্রতারণামূলক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। কিন্তু এতোকিছুর পরেও তার দলীয় ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাঃ আখতার হোসেন বলেন, সমবায় সমিতি এবং এনজিও আলাদা বিষয়। সমবায় সমতির কাজ হচ্ছে একই রেজিস্ট্রেশনে একটা নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানীয় সদস্যদের মাঝে সঞ্চয় এবং ঋণদান কার্য়ক্রম পরিচালনা করা।
কিন্তু এর বাহিরে একাধিক জায়গায় সমবায় সমতির কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। সমবায় সমতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে যদি কেউ এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটি অন্যায়। সোনালী ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি লিঃ এর পলাশবাড়ি এবং শাখাগুলো পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, সমবায় সমিতি লিঃ এর