ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

  মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ কারা পাবে এবং কতটুকু পাবে, সে হিসাব জানা যাচ্ছে সরকারের ‘উত্তরাধিকার ডট বাংলা’ ওয়েবসাইটে।

এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকেন্দ্রিক যত মামলা, তার অধিকাংশই উত্তরাধিকারকেন্দ্রিক। সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়, তা কমাতেই এই ওয়েবসাইট করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটের বিষয়ে প্রচার কম। মানুষ জানলে সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা সহজেই এই ওয়েবসাইট থেকে করে নিতে পারবেন। ক্যালকুলেটরে যেভাবে নিখুঁত হিসাব করা হয়, এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পত্তির হিসাবও এক নিমিষেই করা যায়। ধরা যাক বাবার সম্পত্তি ভাই-বোন ও মায়ের মধ্যে কোন হারে বণ্টন করা হবে। কিংবা প্রয়াত দাদার সম্পত্তি বাবা, চাচা ও ফুফুদের মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে।

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব জটিল। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী, তিন মেয়ে, সহোদর বোন এবং সহোদর ভাইয়ের দুই পুত্র রেখে মারা যান, সেটির হিসাব এক রকম। আবার শুধু সহোদর বোন রেখে মারা না গেলে পুরো হিসাব ভিন্ন। এই সূক্ষ্ম হিসাবগুলো সহজে করা যায় উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরে।

দেশে মুসলিম পরিবারে সম্পত্তির হিসাব করা হয় মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে। অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে কিছু কিছু জানেন। কিন্তু বণ্টন একটু জটিল হলে অনেক সময় আইনজীবী বা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে হয়। মূলত ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে জটিলতা দূর করতে ২০১৭ সালে ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ তৈরির কাজ শুরু করে এটুআই। মুসলিম আইনে সম্পত্তি বণ্টনের বিধান (ফারায়েজ) অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়।

উত্তরাধিকার ডট বাংলা সাইটে গেলে দেখা যাবে, ক্যালকুলেটরের ওপরের অংশে মৃত ব্যক্তির ২৯ ধরনের আত্মীয়স্বজনের তালিকা রয়েছে। প্রতিটি ধরনের (ভাই/বোন/ভাইয়ের ছেলেসহ অন্যান্য) পাশে উত্তরাধিকারীদের সংখ্যা কতজন সেটি লেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আর ক্যালকুলেটরের নিচের অংশে সম্পদের বিবরণ (জমি/সোনা/রুপা/মুদ্রা) লিখতে হয়। এর মধ্যে জমির ক্ষেত্রে শতাংশ, মুদ্রার ক্ষেত্রে টাকা এবং সোনা ও রুপার ক্ষেত্রে ভরিতে পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। এই দুই অংশের তথ্য দিয়ে ফলাফল অংশে চাপ দেওয়ার দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের তালিকা চলে আসে।

ক্যালকুলেটরগুলো ধর্মীয় আইন অনুযায়ী করা। সব বিষয় যথাযথভাবে যাচাই (ভেটিং) করতে হচ্ছে, যেন কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়।

হুমায়ূন কবীর, এটুআই প্রকল্প পরিচালক

ক্যালকুলেটরে ফলাফলের নিচের অংশে ‘হিসাবের ধাপ’ নামে একটি অংশ রয়েছে। সেখানে কে কতটুকু সম্পদ পেলেন, তার আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মধ্যে কেউ যদি সম্পত্তির ভাগীদার না হন, তাহলে কেন তিনি মৃত ব্যক্তির সম্পদ পাওয়ার যোগ্য নন, সেটিও উল্লেখ থাকে। এ ছাড়া ওয়েবসাইটের বিধিতে গিয়ে ইসলামের বিধান মোতাবেক সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত দেওয়া আছে। এ ছড়া ক্যালকুলেটরের ‘জিজ্ঞাসা’ অংশে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া আছে।

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব জটিল। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী, তিন মেয়ে, সহোদর বোন এবং সহোদর ভাইয়ের দুই পুত্র রেখে মারা যান, সেটির হিসাব এক রকম। আবার শুধু সহোদর বোন রেখে মারা না গেলে পুরো হিসাব ভিন্ন। এই সূক্ষ্ম হিসাবগুলো সহজে করা যায় উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরে।

ওয়েবসাইটটি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে মাইসফট হ্যাভেন (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোফাখখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুজন সহকারী জজ টানা তিন মাসের বেশি সময় বণ্টন প্রক্রিয়ার জটিলতা নিয়ে কাজ করেছেন। প্রাথমিকভাবে তৈরি করার পর আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

উত্তরাধিকার ওয়েবসাইটে বর্তমানে মুসলিম আইন মোতাবেক বণ্টন ক্যালকুলেটর রয়েছে। তবে ওয়েবসাইট নির্মাতারা জানিয়েছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মের জন্যও উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর তৈরি করা হয়েছে। তবে সেটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য এখনো চালু করা হয়নি।

এ বিষয়ে এটুআই প্রকল্প পরিচালক হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ক্যালকুলেটরগুলো ধর্মীয় আইন অনুযায়ী করা। সব বিষয় যথাযথভাবে যাচাই (ভেটিং) করতে হচ্ছে, যেন কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়। ভেটিং শেষ হলে অন্য ধর্মের উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

ট্যাগস

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

আপডেট সময় ১২:০৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২

  মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ কারা পাবে এবং কতটুকু পাবে, সে হিসাব জানা যাচ্ছে সরকারের ‘উত্তরাধিকার ডট বাংলা’ ওয়েবসাইটে।

এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকেন্দ্রিক যত মামলা, তার অধিকাংশই উত্তরাধিকারকেন্দ্রিক। সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়, তা কমাতেই এই ওয়েবসাইট করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটের বিষয়ে প্রচার কম। মানুষ জানলে সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা সহজেই এই ওয়েবসাইট থেকে করে নিতে পারবেন। ক্যালকুলেটরে যেভাবে নিখুঁত হিসাব করা হয়, এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পত্তির হিসাবও এক নিমিষেই করা যায়। ধরা যাক বাবার সম্পত্তি ভাই-বোন ও মায়ের মধ্যে কোন হারে বণ্টন করা হবে। কিংবা প্রয়াত দাদার সম্পত্তি বাবা, চাচা ও ফুফুদের মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে।

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব জটিল। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী, তিন মেয়ে, সহোদর বোন এবং সহোদর ভাইয়ের দুই পুত্র রেখে মারা যান, সেটির হিসাব এক রকম। আবার শুধু সহোদর বোন রেখে মারা না গেলে পুরো হিসাব ভিন্ন। এই সূক্ষ্ম হিসাবগুলো সহজে করা যায় উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরে।

দেশে মুসলিম পরিবারে সম্পত্তির হিসাব করা হয় মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে। অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে কিছু কিছু জানেন। কিন্তু বণ্টন একটু জটিল হলে অনেক সময় আইনজীবী বা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে হয়। মূলত ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে জটিলতা দূর করতে ২০১৭ সালে ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ তৈরির কাজ শুরু করে এটুআই। মুসলিম আইনে সম্পত্তি বণ্টনের বিধান (ফারায়েজ) অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়।

উত্তরাধিকার ডট বাংলা সাইটে গেলে দেখা যাবে, ক্যালকুলেটরের ওপরের অংশে মৃত ব্যক্তির ২৯ ধরনের আত্মীয়স্বজনের তালিকা রয়েছে। প্রতিটি ধরনের (ভাই/বোন/ভাইয়ের ছেলেসহ অন্যান্য) পাশে উত্তরাধিকারীদের সংখ্যা কতজন সেটি লেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আর ক্যালকুলেটরের নিচের অংশে সম্পদের বিবরণ (জমি/সোনা/রুপা/মুদ্রা) লিখতে হয়। এর মধ্যে জমির ক্ষেত্রে শতাংশ, মুদ্রার ক্ষেত্রে টাকা এবং সোনা ও রুপার ক্ষেত্রে ভরিতে পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। এই দুই অংশের তথ্য দিয়ে ফলাফল অংশে চাপ দেওয়ার দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের তালিকা চলে আসে।

ক্যালকুলেটরগুলো ধর্মীয় আইন অনুযায়ী করা। সব বিষয় যথাযথভাবে যাচাই (ভেটিং) করতে হচ্ছে, যেন কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়।

হুমায়ূন কবীর, এটুআই প্রকল্প পরিচালক

ক্যালকুলেটরে ফলাফলের নিচের অংশে ‘হিসাবের ধাপ’ নামে একটি অংশ রয়েছে। সেখানে কে কতটুকু সম্পদ পেলেন, তার আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া থাকে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মধ্যে কেউ যদি সম্পত্তির ভাগীদার না হন, তাহলে কেন তিনি মৃত ব্যক্তির সম্পদ পাওয়ার যোগ্য নন, সেটিও উল্লেখ থাকে। এ ছাড়া ওয়েবসাইটের বিধিতে গিয়ে ইসলামের বিধান মোতাবেক সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত দেওয়া আছে। এ ছড়া ক্যালকুলেটরের ‘জিজ্ঞাসা’ অংশে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া আছে।

সম্পত্তির ভাগ কে কতটা পাবে, মুহূর্তেই জানা যাবে

আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব জটিল। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রী, তিন মেয়ে, সহোদর বোন এবং সহোদর ভাইয়ের দুই পুত্র রেখে মারা যান, সেটির হিসাব এক রকম। আবার শুধু সহোদর বোন রেখে মারা না গেলে পুরো হিসাব ভিন্ন। এই সূক্ষ্ম হিসাবগুলো সহজে করা যায় উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরে।

ওয়েবসাইটটি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে মাইসফট হ্যাভেন (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোফাখখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুজন সহকারী জজ টানা তিন মাসের বেশি সময় বণ্টন প্রক্রিয়ার জটিলতা নিয়ে কাজ করেছেন। প্রাথমিকভাবে তৈরি করার পর আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

উত্তরাধিকার ওয়েবসাইটে বর্তমানে মুসলিম আইন মোতাবেক বণ্টন ক্যালকুলেটর রয়েছে। তবে ওয়েবসাইট নির্মাতারা জানিয়েছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মের জন্যও উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর তৈরি করা হয়েছে। তবে সেটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য এখনো চালু করা হয়নি।

এ বিষয়ে এটুআই প্রকল্প পরিচালক হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ক্যালকুলেটরগুলো ধর্মীয় আইন অনুযায়ী করা। সব বিষয় যথাযথভাবে যাচাই (ভেটিং) করতে হচ্ছে, যেন কোনো বিতর্ক তৈরি না হয়। ভেটিং শেষ হলে অন্য ধর্মের উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটরও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।