ঢাকা ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা Logo আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার Logo আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখব : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন বাহারুল আলম Logo সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পালমিরা শহরে ইসরায়েলি ভয়াবহ হামলায়, নিহত ৩৬, আহত ৫০ Logo ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় চালকদের বিক্ষোভ Logo নওগাঁয় প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যা Logo ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট

শবে মেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত

শবে মেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত। আল্লাহর ইচ্ছায় যে সবই সম্ভব সেটিরই মূর্তমান প্রকাশ হলো এই রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সপ্তম আসমান পর্যন্ত ঘুরে আসার ঘটনা। মেরাজের রাতে নিমেষেই এটি সংঘটিত হয়।

মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন- ‘মহামহিম পরম পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতেরবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যাতে আমি তাকে দেখিয়ে দেই, এর চারপাশের নিদর্শনগুলো, যা বরকতময়।’

আরবি শব্দ মেরাজের শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বরোহণ। ব্যাপক অর্থে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ এবং আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলাকেই মেরাজ বলে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের ১২তম সনে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিনগত রাতে রোজ সোমবার মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
হাদিস সূত্রে বলা হয়েছে, রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর গৃহে নিদ্রায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিব্রাইল (আ.) আল্লাহতায়ালার হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতার দল নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, হুজুর! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এ মুহূর্তেই আপনাকে তথায় গমন করতে হবে। বোরাকে করে আল্লাহর সানি্নধ্যে যাওয়ার সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফের খেজুরবাগান এলাকায় এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান মাদায়েনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণপথে অসংখ্য আশ্চর্য ঘটনা ও কর্মকাণ্ড দেখে আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া ও প্রশংসা করেন।
ঊর্ধ্বাকাশে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম, ঈসা, ইয়াহইয়া, ইউসুফ, ইদ্রিস, হারুন ও মূসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে হাজির হন। কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে- অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, তাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথার ব্যবধান রইল অথবা আরও নিকটে। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যা করার ছিল।

হাদিস ও সাহাবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, মেরাজের রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.) নিয়ে কাবা শরিফের হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজুর পর বোরাক নামক বাহনে জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর প্রথম আকাশে পৌঁছান মহানবী (সা.)। সেখানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাক্ষাৎ করেন হজরত ঈসা (আ.), হজরত ইয়াহইয়া (আ.), হজরত ইদ্রিস (আ.), হজরত হারুন (আ.), হজরত মুসা (আ.) এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে।

সপ্তম আকাশ থেকে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন মহানবী (সা.)। সেখান থেকে আরশে আজিম যান। এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয় মহানবী (সা.)-এর উম্মতদের জন্য। মেরাজ শেষে পৃথিবীতে ফিরে রাসুল (সা.) পুরো ঘটনা হজরত আবু বকর (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। রাসুল (সা.) তাকে সিদ্দিকী বা বিশ্বাসী খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসুলের মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে।

লেখক : আলেম ও ইসলামী গবেষক।

ট্যাগস

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

শবে মেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত

আপডেট সময় ১২:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

শবে মেরাজ আল্লাহর অসীম কুদরত। আল্লাহর ইচ্ছায় যে সবই সম্ভব সেটিরই মূর্তমান প্রকাশ হলো এই রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সপ্তম আসমান পর্যন্ত ঘুরে আসার ঘটনা। মেরাজের রাতে নিমেষেই এটি সংঘটিত হয়।

মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন- ‘মহামহিম পরম পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতেরবেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যাতে আমি তাকে দেখিয়ে দেই, এর চারপাশের নিদর্শনগুলো, যা বরকতময়।’

আরবি শব্দ মেরাজের শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বরোহণ। ব্যাপক অর্থে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ এবং আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলাকেই মেরাজ বলে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের ১২তম সনে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিনগত রাতে রোজ সোমবার মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
হাদিস সূত্রে বলা হয়েছে, রজব মাসের ২৬ তারিখ রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর গৃহে নিদ্রায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিব্রাইল (আ.) আল্লাহতায়ালার হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতার দল নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, হুজুর! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এ মুহূর্তেই আপনাকে তথায় গমন করতে হবে। বোরাকে করে আল্লাহর সানি্নধ্যে যাওয়ার সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফের খেজুরবাগান এলাকায় এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান মাদায়েনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণপথে অসংখ্য আশ্চর্য ঘটনা ও কর্মকাণ্ড দেখে আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া ও প্রশংসা করেন।
ঊর্ধ্বাকাশে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম, ঈসা, ইয়াহইয়া, ইউসুফ, ইদ্রিস, হারুন ও মূসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে হাজির হন। কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে- অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, তাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথার ব্যবধান রইল অথবা আরও নিকটে। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যা করার ছিল।

হাদিস ও সাহাবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, মেরাজের রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.) নিয়ে কাবা শরিফের হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজুর পর বোরাক নামক বাহনে জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর প্রথম আকাশে পৌঁছান মহানবী (সা.)। সেখানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাক্ষাৎ করেন হজরত ঈসা (আ.), হজরত ইয়াহইয়া (আ.), হজরত ইদ্রিস (আ.), হজরত হারুন (আ.), হজরত মুসা (আ.) এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে।

সপ্তম আকাশ থেকে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন মহানবী (সা.)। সেখান থেকে আরশে আজিম যান। এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয় মহানবী (সা.)-এর উম্মতদের জন্য। মেরাজ শেষে পৃথিবীতে ফিরে রাসুল (সা.) পুরো ঘটনা হজরত আবু বকর (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি নিঃসংশয়ে তা বিশ্বাস করেন। রাসুল (সা.) তাকে সিদ্দিকী বা বিশ্বাসী খেতাব দেন। মক্কার কাফেররা রাসুলের মেরাজের ঘটনাকে অবিশ্বাস করে।

লেখক : আলেম ও ইসলামী গবেষক।