ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০ দিনে শনাক্তের হার বেড়েছে ১০ গুণ

করোনা ভাইরাস পরীক্ষা (ফাইল ছবি)

স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশে চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন কোহিনুর বেগম। পিত্তথলির অপারেশনের আগের দিন ধরা পড়ে করোনা। পাঠানো হয় ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে

এই হাসপাতালে সাত দিন আগে রোগী ভর্তি ছিল ১৮ জন। এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন একশোর বেশি রোগী।

প্রতিদিন গড়ে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৪০ জন।রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। ঢাকা মেডিকেলে ১৫ দিনে রোগী বেড়েছে ৫ গুন। একই অবস্থা মুগদা, কুর্মিটোলাতেও।

দেশে করোনায় সংক্রণের হার এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে৷ এর আগে কখনো এত দ্রুত ছড়ায়নি করোনা। ২০ দিন আগের তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায়, শনিবার শতকরা ২৮ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়; আর রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ ভাগ।

গত কয়েক দিনের চিত্র দেখলে ভয়াবহ পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ ১১ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৪৫৮ জন, মারা গেছেন দুইজন৷ ১২ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৯১৬, মৃত্যু চার৷ ১৩ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৩৫৯, মৃত্যু ১২৷ ১৪ জানুয়ারি আক্রান্ত চার হাজার ৩৭৮, মৃত্যু ছয়৷ ১৫ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৪৪৭, মৃত্যু সাত৷ ১৬ জানুয়ারি আক্রান্ত পাঁচ হাজার ২২২, মৃত্যু আট।

১৭ জানুয়ারি আক্রান্ত ছয় হাজার ৬৭৬, মৃত্যু ১০৷ ১৮ জানুয়ারি আক্রান্ত আট হাজার ৪০৭, মৃত্যু ১০৷ ১৯ জানুয়ারি আক্রান্ত ৯ হাজার ৫০০, মৃত্যু ১২৷ ২০ জানুয়ারি আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ হন, মারা গেছেন চার জন৷ এই বিবেচনায় ১০ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ৷ আর যদি ১ জানুয়ারির বিবেচনা করা হয় তাহলে সংক্রমণ বড়েছে ৩০ গুণ৷ ১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন৷ মারা গেছেন চার জন৷

এদিকে ওমিক্রনের কারণেই সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে দাবি চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, এবার করোনার সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, এখন ঢাকা শহরে ৭০-৭৫ ভাগই ওমিক্রনের সংক্রমণ৷ আর ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷ ফলে দ্রুত ছাড়াচ্ছে৷ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকার বাইরে এবং গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷

তিনি বলেন,”আগামী দুই-তিন সপ্তাহ এটা বাড়তে থাকবে৷ এই হারে বাড়লে দিনে সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে৷ আর আগে দেখা যেত পিক-এ গিয়ে কমে যায় কিন্তু এবার সহসা পিক থেকে নামবে না৷ এবার ছাড়ানোর হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ হাসপাতালেও আগের পিকের সমান রোগীই যাবে৷ যাদের টিকা দেয়া আছে তারা আক্রান্ত হলেও বেশি জটিলতা হবেনা৷ কিন্তু যারা এখনো টিকা দেননি এবং বয়ষ্ক ও নানা শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য বিপদ৷ তাই টিকা নিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷ মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি৷”

বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালে নেয়া নয়, সংক্রমণ ঠেকানোই হলো মোকাবেলার উপায়৷ নয়তো কোনোভাবেই হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেয়া যাবে না৷ তাই তিনি মনে করেন,”টিকা দেওয়ার গতি আরো বাড়াতে হবে৷ মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে হবে৷ আর ঘরে বাইরে সবখানেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে হবে৷ কারণ বদ্ধ জায়গায় করোনা বেশি ছড়ায়৷ সরকার নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকতে পারে না৷ এটা কার্যকর করাও তার দায়িত্ব৷”

২০২০ ও ২১ সালের জুলাই-আগস্টে বাড়ে সংক্রমণ। গত বছরের জুলাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ৮ জুলাই, ৩২ ভাগ। শনাক্তের হার ২৮ ভাগ বাড়তে সময় লাগে ১২৯ দিন। কিন্তু চলতি ২৮ ভাগ শনাক্ত বেড়েছে মাত্র ২০ দিনে। অর্থাৎ দেশে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে এখন।

দেশে গত ৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৫২ হাজার রোগী। এক মাসে আগের একই সময়ে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৪৯৬ জন।

ট্যাগস

২০ দিনে শনাক্তের হার বেড়েছে ১০ গুণ

আপডেট সময় ১০:৫১:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২

স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশে চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন কোহিনুর বেগম। পিত্তথলির অপারেশনের আগের দিন ধরা পড়ে করোনা। পাঠানো হয় ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে

এই হাসপাতালে সাত দিন আগে রোগী ভর্তি ছিল ১৮ জন। এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন একশোর বেশি রোগী।

প্রতিদিন গড়ে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৪০ জন।রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর চাপ। ঢাকা মেডিকেলে ১৫ দিনে রোগী বেড়েছে ৫ গুন। একই অবস্থা মুগদা, কুর্মিটোলাতেও।

দেশে করোনায় সংক্রণের হার এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে৷ এর আগে কখনো এত দ্রুত ছড়ায়নি করোনা। ২০ দিন আগের তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায়, শনিবার শতকরা ২৮ ভাগ করোনা শনাক্ত হয়; আর রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ ভাগ।

গত কয়েক দিনের চিত্র দেখলে ভয়াবহ পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ ১১ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৪৫৮ জন, মারা গেছেন দুইজন৷ ১২ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৯১৬, মৃত্যু চার৷ ১৩ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৩৫৯, মৃত্যু ১২৷ ১৪ জানুয়ারি আক্রান্ত চার হাজার ৩৭৮, মৃত্যু ছয়৷ ১৫ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৪৪৭, মৃত্যু সাত৷ ১৬ জানুয়ারি আক্রান্ত পাঁচ হাজার ২২২, মৃত্যু আট।

১৭ জানুয়ারি আক্রান্ত ছয় হাজার ৬৭৬, মৃত্যু ১০৷ ১৮ জানুয়ারি আক্রান্ত আট হাজার ৪০৭, মৃত্যু ১০৷ ১৯ জানুয়ারি আক্রান্ত ৯ হাজার ৫০০, মৃত্যু ১২৷ ২০ জানুয়ারি আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ হন, মারা গেছেন চার জন৷ এই বিবেচনায় ১০ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ৷ আর যদি ১ জানুয়ারির বিবেচনা করা হয় তাহলে সংক্রমণ বড়েছে ৩০ গুণ৷ ১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন৷ মারা গেছেন চার জন৷

এদিকে ওমিক্রনের কারণেই সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে দাবি চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, এবার করোনার সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, এখন ঢাকা শহরে ৭০-৭৫ ভাগই ওমিক্রনের সংক্রমণ৷ আর ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷ ফলে দ্রুত ছাড়াচ্ছে৷ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকার বাইরে এবং গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷

তিনি বলেন,”আগামী দুই-তিন সপ্তাহ এটা বাড়তে থাকবে৷ এই হারে বাড়লে দিনে সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে৷ আর আগে দেখা যেত পিক-এ গিয়ে কমে যায় কিন্তু এবার সহসা পিক থেকে নামবে না৷ এবার ছাড়ানোর হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ হাসপাতালেও আগের পিকের সমান রোগীই যাবে৷ যাদের টিকা দেয়া আছে তারা আক্রান্ত হলেও বেশি জটিলতা হবেনা৷ কিন্তু যারা এখনো টিকা দেননি এবং বয়ষ্ক ও নানা শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য বিপদ৷ তাই টিকা নিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷ মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি৷”

বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালে নেয়া নয়, সংক্রমণ ঠেকানোই হলো মোকাবেলার উপায়৷ নয়তো কোনোভাবেই হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেয়া যাবে না৷ তাই তিনি মনে করেন,”টিকা দেওয়ার গতি আরো বাড়াতে হবে৷ মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে হবে৷ আর ঘরে বাইরে সবখানেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে হবে৷ কারণ বদ্ধ জায়গায় করোনা বেশি ছড়ায়৷ সরকার নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকতে পারে না৷ এটা কার্যকর করাও তার দায়িত্ব৷”

২০২০ ও ২১ সালের জুলাই-আগস্টে বাড়ে সংক্রমণ। গত বছরের জুলাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ৮ জুলাই, ৩২ ভাগ। শনাক্তের হার ২৮ ভাগ বাড়তে সময় লাগে ১২৯ দিন। কিন্তু চলতি ২৮ ভাগ শনাক্ত বেড়েছে মাত্র ২০ দিনে। অর্থাৎ দেশে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে এখন।

দেশে গত ৫ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৫২ হাজার রোগী। এক মাসে আগের একই সময়ে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৪৯৬ জন।