ঢাকা ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চেয়ারম্যানপ্রার্থীর বাড়িতে মধ্যরাতে আগুন, ছাই হলো ১৫ বাড়ি

সৈয়দপুর প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে মধ্যরাতে অগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩টি গরুসহ ১৫টি ঘর আসবাবপত্রসহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এছাড়া আগুন লাগার ঘটনায় আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, ধান, নগদ টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ওই ব্যক্তির। আগুনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ৫টি পরিবারের ৩৫ জন মানুষ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। ১১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী কাচারীপাড়ার এ অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মৃত দাউদ আলীর ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আগুন লাগার বিষয়টি টের পাই। পরে দ্রুত উঠে দেখি বাড়ির প্রধান গেট ও সংলগ্ন দুইটি রুমের চালে আগুন জ্বলছে। মুহূর্তে তা অন্য ঘরগুলোর চালেও ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, এ সময় আমার চিৎকারে বাড়ির সকলে জেগে উঠলেও গেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। পরে টয়লেটের ছাদ দিয়ে দেয়াল টপকে বাইরে গিয়ে একটি জ্বানালা ভেঙে সকলকে উদ্ধার করি। ইতোমধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো বাড়ি আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেক কষ্টে সেখান থেকে ৩টি মোটরসাইকেল বের করতে পারলেও ১৫টি ঘরের সর্বস্ব পুড়ে গেছে। এছাড়া পেটে ৯ মাসের বাচ্চাসহ একটি গাভী, একটি ষাড়, একটি বাছুর এবং নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, বই-সার্টিফিকেট, দলিল-দস্তাবেজসহ ধান- চাল সব ছাই হয়েছে। ৫টি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

পশু চিকিৎসক ডা: আবেদ আলী বলেন, মানুষগুলো যে প্রাণে বেঁচে গেছি এটাতেই আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। আমার ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম চলমান ইউপি নির্বাচনে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী। তাকে ভোট থেকে দমিয়ে দিতেই সপরিবারে হত্যার অপচেষ্টা।

কারণ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে বাড়ির বাইরে উঠানে প্রায় ১৫ ফুট দূরে থাকা ধানের পালায় এবং প্রধান গেট থেকে প্রায় ৪০ ফুট পশ্চিমে আমার রুমে আগুন লাগলো কিভাবে। তাছাড়া ওই সময়ও বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, খবর দেয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা পরে ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা দেরি না করলে হয়তো এত বেশি ক্ষতি হতো না। আমার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বই, অ্যাডমিট কার্ডও পুড়ে গেছে। আমার ভাতিজিরও একই অবস্থা। আমার ভাই জাবেদুল, সোলেমান, ভাতিজা জুলফিকার আলী ভুট্টু ও জাহাঙ্গীর আলমের সবশেষ হয়েছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের সূচনা বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে। তবে পারিপার্শ্বিক লক্ষণ দেখে মনে হয় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুর্বৃত্তরাও এটি ঘটাতে পারে। আমরা সকলে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি উল্লেখ করে সৈয়দপুর থানায় একটি জিডি করেছি।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশিদ আলম বলেন, খবর পেয়ে সৈয়দপুর ও উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তপূর্বক নির্ধারণ করা হবে।

এ সময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৫টি কম্বল, ২০ কেজি চাল, ৪ লিটার তেল, শুকনা খাবার ও নগদ ৩ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বই ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

ট্যাগস

চেয়ারম্যানপ্রার্থীর বাড়িতে মধ্যরাতে আগুন, ছাই হলো ১৫ বাড়ি

আপডেট সময় ০৪:২৩:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

সৈয়দপুর প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে মধ্যরাতে অগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩টি গরুসহ ১৫টি ঘর আসবাবপত্রসহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এছাড়া আগুন লাগার ঘটনায় আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, ধান, নগদ টাকাসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ওই ব্যক্তির। আগুনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ৫টি পরিবারের ৩৫ জন মানুষ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। ১১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলী কাচারীপাড়ার এ অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মৃত দাউদ আলীর ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আগুন লাগার বিষয়টি টের পাই। পরে দ্রুত উঠে দেখি বাড়ির প্রধান গেট ও সংলগ্ন দুইটি রুমের চালে আগুন জ্বলছে। মুহূর্তে তা অন্য ঘরগুলোর চালেও ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, এ সময় আমার চিৎকারে বাড়ির সকলে জেগে উঠলেও গেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। পরে টয়লেটের ছাদ দিয়ে দেয়াল টপকে বাইরে গিয়ে একটি জ্বানালা ভেঙে সকলকে উদ্ধার করি। ইতোমধ্যে আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো বাড়ি আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেক কষ্টে সেখান থেকে ৩টি মোটরসাইকেল বের করতে পারলেও ১৫টি ঘরের সর্বস্ব পুড়ে গেছে। এছাড়া পেটে ৯ মাসের বাচ্চাসহ একটি গাভী, একটি ষাড়, একটি বাছুর এবং নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, বই-সার্টিফিকেট, দলিল-দস্তাবেজসহ ধান- চাল সব ছাই হয়েছে। ৫টি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

পশু চিকিৎসক ডা: আবেদ আলী বলেন, মানুষগুলো যে প্রাণে বেঁচে গেছি এটাতেই আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। আমার ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম চলমান ইউপি নির্বাচনে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা মার্কার প্রার্থী। তাকে ভোট থেকে দমিয়ে দিতেই সপরিবারে হত্যার অপচেষ্টা।

কারণ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে বাড়ির বাইরে উঠানে প্রায় ১৫ ফুট দূরে থাকা ধানের পালায় এবং প্রধান গেট থেকে প্রায় ৪০ ফুট পশ্চিমে আমার রুমে আগুন লাগলো কিভাবে। তাছাড়া ওই সময়ও বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, খবর দেয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা পরে ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা দেরি না করলে হয়তো এত বেশি ক্ষতি হতো না। আমার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বই, অ্যাডমিট কার্ডও পুড়ে গেছে। আমার ভাতিজিরও একই অবস্থা। আমার ভাই জাবেদুল, সোলেমান, ভাতিজা জুলফিকার আলী ভুট্টু ও জাহাঙ্গীর আলমের সবশেষ হয়েছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগুনের সূচনা বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে। তবে পারিপার্শ্বিক লক্ষণ দেখে মনে হয় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুর্বৃত্তরাও এটি ঘটাতে পারে। আমরা সকলে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এ ব্যাপারে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি উল্লেখ করে সৈয়দপুর থানায় একটি জিডি করেছি।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশিদ আলম বলেন, খবর পেয়ে সৈয়দপুর ও উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তপূর্বক নির্ধারণ করা হবে।

এ সময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৫টি কম্বল, ২০ কেজি চাল, ৪ লিটার তেল, শুকনা খাবার ও নগদ ৩ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বই ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।