ঢাকা ০৬:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস কোনো প্রকার পূর্বাভাসই দিতে পারছে না

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস কোনো প্রকার পূর্বাভাসই দিতে পারছে না

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:  পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পৌরসদরে অবস্থিত আবহাওয়া অফিসে তিন বছর আগে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) মেশিন স্থাপন করা হয়। তবে শুরু থেকেই বিকল হয়ে আছে সে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।

ফলে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দেওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি যুগোপযোগী ও আধুনিকীকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।

স্থানীয় প্রবীণজনরা জানান, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের আগাম খবর জানতে প্রয়োজন আবহাওয়া অফিস। সেই প্রয়োজন মেটাতেই পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় আবহাওয়া অফিস (পর্যবেক্ষণাগার)। প্রতিষ্ঠার এত বছর কেটে গেছে তারপরও এখানে নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। এসব সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভৌগলিক অবস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিবেচনায় ১৯৬৫ সালে স্থাপন করা হয় ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। প্রতিষ্ঠাকালে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পদ মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু মাত্র ১০ জন লোকবল এবং পুরোনো ও প্রায় অকার্যকর যন্ত্রপাতি নিয়ে দায়সারাভাবে চলছে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি।

দুই বছর আগে একটি অটোমেটিক আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা হয়। তবে তা একদিনের জন্যও চালু করা যায়নি। এ অবস্থায় এখান থেকে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের টেলিপ্রিন্টার সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে একটি আধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এটির নাম এওয়াজ। যা অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন হিসেবে পরিচিত। তিন বছর আগে অটোমেটিক মেশিনটি স্থাপন করা হলেও শুরু থেকেই বিকল হয়ে আছে। ফলে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দিতে পারছি না।

ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়ার পূর্বাভাস) সম্পর্কে তিনি জানান, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুমণ্ডল কেমন হবে তার পূর্বাভাস। এটি মেঘের আচ্ছাদন, বৃষ্টি, তুষার, বাতাসের গতি এবং তাপমাত্রা হওয়ার আগে ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি উপায়। কিন্তু এখান থেকে সেগুলোর কোনোটিই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার প্রধান উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে বর্তমান আবহাওয়ার অবস্থা দেখা, আকাশে বায়ু এবং মেঘের গতিবিধি ট্র্যাক করা, বর্তমান আবহাওয়ার অনুরূপ পূর্ববর্তী আবহাওয়ার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া, বায়ুর চাপের পরিবর্তন পরীক্ষা করা এবং কম্পিউটার মডেল চালানো। এজন্য দরকার দক্ষ জনল।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটি স্থাপনের পর যে মেশিনগুলো বসানো হয়েছিল, সেগুলোও অকেজো হয়ে গেছে। ভবনগুলোর মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। যেসব জনবল চাকরি শেষ করেছেন, সেই পদে আর নতুন করে কোনো লোক নিয়োগ হয়নি। ফলে আমরা জরাজীর্ণ ভবন, লোকবল সংকট আর অকেজো যন্ত্রপাতি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি।

এদিকে অবিলম্বে ঈশ্বরদী পর্যবেক্ষণাগারটিকে আধুনিক ও পুর্ণাঙ্গ আবহাওয়া অফিসে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন কৃষক, সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও দেশখ্যাত সবজি চাষি শাহজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশা জানান, ঋতুবৈচিত্রের খামখেয়ালিপনায় আবহাওয়া বদলে গেছে অনেকটাই। বর্ষায় অনাবৃষ্টি কখনো অতিবৃষ্টি, গ্রীষ্মের দাবদাহ, শীতে প্রচণ্ড শীত এখন অনেকটাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

আবহাওয়া অফিসের মূল কাজটিই এখানে। সবজি চাষ প্রধান এ এলাকায় নিরাপদে সবজি ফলানোর জন্য আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি জানা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস শুধু প্রতিদিনের তাপমাত্রা বলা ছাড়া আর কোনো তথ্যই দিতে পারে না।

ঈশ্বরদীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংবাদকর্মী বলেন, ঈশ্বরদী বর্তমানে অতি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। দেশের সর্ববৃহৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ে জংশন, সদর দপ্তর, ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অধিকারী এলাকায় আবহাওয়া অফিসটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটি প্রত্যাশা করি।

ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম বলেন, আবহাওয়া অফিসটিতে অনেক দৈন্যতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ দেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আবহাওয়া অফিসটি দ্রুত আধুনিকায়ন করা দরকার।

ট্যাগস

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস কোনো প্রকার পূর্বাভাসই দিতে পারছে না

আপডেট সময় ১১:৪৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:  পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পৌরসদরে অবস্থিত আবহাওয়া অফিসে তিন বছর আগে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) মেশিন স্থাপন করা হয়। তবে শুরু থেকেই বিকল হয়ে আছে সে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।

ফলে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দেওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি যুগোপযোগী ও আধুনিকীকরণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।

স্থানীয় প্রবীণজনরা জানান, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের আগাম খবর জানতে প্রয়োজন আবহাওয়া অফিস। সেই প্রয়োজন মেটাতেই পাবনার ঈশ্বরদীতে ৫৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় আবহাওয়া অফিস (পর্যবেক্ষণাগার)। প্রতিষ্ঠার এত বছর কেটে গেছে তারপরও এখানে নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি, নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। এসব সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভৌগলিক অবস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিবেচনায় ১৯৬৫ সালে স্থাপন করা হয় ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। প্রতিষ্ঠাকালে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাসহ ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পদ মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু মাত্র ১০ জন লোকবল এবং পুরোনো ও প্রায় অকার্যকর যন্ত্রপাতি নিয়ে দায়সারাভাবে চলছে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি।

দুই বছর আগে একটি অটোমেটিক আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা হয়। তবে তা একদিনের জন্যও চালু করা যায়নি। এ অবস্থায় এখান থেকে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের টেলিপ্রিন্টার সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে একটি আধুনিক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এটির নাম এওয়াজ। যা অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন হিসেবে পরিচিত। তিন বছর আগে অটোমেটিক মেশিনটি স্থাপন করা হলেও শুরু থেকেই বিকল হয়ে আছে। ফলে ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়া পূর্বাভাস) দিতে পারছি না।

ওয়েদার ফোরকাস্ট (আবহাওয়ার পূর্বাভাস) সম্পর্কে তিনি জানান, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুমণ্ডল কেমন হবে তার পূর্বাভাস। এটি মেঘের আচ্ছাদন, বৃষ্টি, তুষার, বাতাসের গতি এবং তাপমাত্রা হওয়ার আগে ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি উপায়। কিন্তু এখান থেকে সেগুলোর কোনোটিই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার প্রধান উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে বর্তমান আবহাওয়ার অবস্থা দেখা, আকাশে বায়ু এবং মেঘের গতিবিধি ট্র্যাক করা, বর্তমান আবহাওয়ার অনুরূপ পূর্ববর্তী আবহাওয়ার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া, বায়ুর চাপের পরিবর্তন পরীক্ষা করা এবং কম্পিউটার মডেল চালানো। এজন্য দরকার দক্ষ জনল।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রটি স্থাপনের পর যে মেশিনগুলো বসানো হয়েছিল, সেগুলোও অকেজো হয়ে গেছে। ভবনগুলোর মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। যেসব জনবল চাকরি শেষ করেছেন, সেই পদে আর নতুন করে কোনো লোক নিয়োগ হয়নি। ফলে আমরা জরাজীর্ণ ভবন, লোকবল সংকট আর অকেজো যন্ত্রপাতি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছি।

এদিকে অবিলম্বে ঈশ্বরদী পর্যবেক্ষণাগারটিকে আধুনিক ও পুর্ণাঙ্গ আবহাওয়া অফিসে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন কৃষক, সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও দেশখ্যাত সবজি চাষি শাহজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশা জানান, ঋতুবৈচিত্রের খামখেয়ালিপনায় আবহাওয়া বদলে গেছে অনেকটাই। বর্ষায় অনাবৃষ্টি কখনো অতিবৃষ্টি, গ্রীষ্মের দাবদাহ, শীতে প্রচণ্ড শীত এখন অনেকটাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

আবহাওয়া অফিসের মূল কাজটিই এখানে। সবজি চাষ প্রধান এ এলাকায় নিরাপদে সবজি ফলানোর জন্য আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি জানা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস শুধু প্রতিদিনের তাপমাত্রা বলা ছাড়া আর কোনো তথ্যই দিতে পারে না।

ঈশ্বরদীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংবাদকর্মী বলেন, ঈশ্বরদী বর্তমানে অতি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। দেশের সর্ববৃহৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ে জংশন, সদর দপ্তর, ইপিজেড, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অধিকারী এলাকায় আবহাওয়া অফিসটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকাটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটি প্রত্যাশা করি।

ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম বলেন, আবহাওয়া অফিসটিতে অনেক দৈন্যতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ দেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আবহাওয়া অফিসটি দ্রুত আধুনিকায়ন করা দরকার।