ক্রীড়া ডেস্ক: প্রিয় দলের বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় হতাশ গোটা দেশ ও জাতি। চারদিকে সমালোচনার ঝড়। ক্রিকেটারদের নেতিবাচক অ্যাপ্রোচ, অনুজ্জ্বল, দ্যুতিহীন, জীর্ন-শীর্ন আর লক্ষ্য ও দায়িত্বহীন পারফরম্যান্স নিয়ে নানা কথা-বার্তা সর্বত্র।
পাশাপাশি লাখো-কোটি টাকা মাসোহারা পাওয়া এক ঝাঁক বিদেশি কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচক প্যানেল নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। অনেক প্রশ্নের তিরে জর্জরিত ক্রিকেট বোর্ডও।
সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দ্রুতই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সে জন্য বিশ্বস্ত-পরীক্ষিত, খেলোয়াড়দের কাছের মানুষ বলে বিবেচিত খালেদ মাহমুদ সুজনকে টিম ডিরেক্টর (দলের পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে বিসিবি। উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফদের কর্মদক্ষতা, কর্মতৎপরতা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা নির্ধারণ, টিম কম্বিনেশন ও গেম প্ল্যান তৈরির কাজটি আরও সুচারু ও সুবিন্যস্ত করতে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর ওপরে ‘টিম ডিরেক্টর’ করে সুজনকে নিয়োগ দেওয়া।
দায়িত্বশীল সূত্রটি এও নিশ্চিত করেছে, কোচের ওপর ছড়ি না ঘোরালেও, তাদের কাজ-কর্মের ওপর নজরদারি করতে পারবেন সুজন এবং তাকে সে ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে বোর্ড থেকে।
খালেদ মাহমুদ সুজন এর আগেও জাতীয় দলে কয়েকবার টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন তার ক্ষমতা ছিল সীমিত। তবে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর যেন হুশ ফিরেছে বোর্ডের। তাই সুজনকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েই টিম ডিরেক্টরের চেয়ারে বসানো হচ্ছে। এখন থেকে তাই ক্রিকেটার নির্বাচন, লক্ষ্য-পরিকল্পনা, গেম প্ল্যানিংয়েও সম্পৃক্ত থাকবেন সুজন এবং বোঝাই যাচ্ছে রাসেল ডোমিঙ্গোর সঙ্গে বোর্ড যে নতুন করে চুক্তি করেছে, সেখানে তার সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকার বিষয়টিও নিশ্চয়ই যুক্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তান সিরিজ থেকেই কাজ শুরু করবেন খালেদ মাহমুদ সুজন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ নভেম্বর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি আর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে রাজধানী ঢাকায় পা রাখবে পাকিস্তান। ১৯ নভেম্বর শেরে বাংলায় প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। বিশ্বকাপের মাঠে পারফরম্যান্স যত অনুজ্জ্বল হোক না কেন, দেশে ফিরে আবার মাঠে দ্রুতই মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিতে হবে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের। আগামী ১২ নভেম্বর শুরু হবে অনুশীলন।
অনুশীলনের প্রথম দিনই টিম পরিচালকের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেবেন সুজন। তবে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার আগে আগামীকাল থেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ শুরু করে দেবেন তিনি। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বাইরে থাকা ৭ তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে আগামীকাল মাঠে নেমে পড়বেন সুজন।
ডাক পাওয়া ৭ তরুণ ক্রিকেটারের ভেতরে আছেন ৫ ব্যাটার-নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি, পারভেজ ইমন এবং তৌাহিদ হৃদয়। পেসারদের মধ্যে থাকবেন কামরুল ইসলাম রাব্বি ও তরুন বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। সুজনের অধীনে প্রস্তুতিতে নেমে পড়ায় চলতি জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) চতুর্থ পর্বে খেলবেন না এই ৭ ক্রিকেটার।
এদিকে, সুজনের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে অনেকটা নির্ভার হওয়া গেলেও, বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনসহ বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের প্রায় সবাই বিশ্বকাপে জাতীয় দলের ব্যর্থতা ও শ্রীহীন পারফরম্যান্সের পর এখনো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আসেন। একদম ভেতরের খবর, কেউ গণমাধ্যমের সামনে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও, খুব সন্তর্পনে চলছে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষন এবং আগামী দিনের পথ চলা নিয়ে কথাবার্তা। সেই ভাবনা থেকেই তো সুজনকে টিম ডিরেক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া বিসিবির।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আর আব্দুর রাজ্জাকের (অপর নির্বাচক হাবিবুল বাশার তখনো দেশে ফেরত আসেননি, তাই তিনি ছিলেন না) সঙ্গে একান্তে বসেছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। বৈঠকে ছিলেন সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন এবং একাধিক শীর্ষ পরিচালকও। যেই আলোচনায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা থেকে উত্তরণে করণীয় দিকগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।