বাগেরহাঠ প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগের (কালব্) টাকা আত্মসাতের মামলায় ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০ আগস্ট) গভীর রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ওই রাতে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ম্যানেজার ফরিদসহ পাঁচজনকে আসামিকে করে মামলা দায়ের করেন কালবের মোরেলগঞ্জ উপজেলা শাখার চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে গ্রেপ্তার ফরিদ উদ্দিনকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ সোপর্দ করেছে পুলিশ। আদালতের বিচারক সমির মল্লিক আসামি ফরিদ উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ফরিদ উদ্দিন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগের (কালব্) মোরেলগঞ্জ শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মোরেলগঞ্জের মা-বাবার ঋণ কলেজের অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন (৪৫), বিএসএস দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো. মুঈন উদ্দিন হিরু (৩৯), রওশন আরা স্মৃতি মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শেখ নজরুল ইসলাম (৪৫) ও স্থানীয় মো. আবুল কালাম আজাদ মল্লিক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা পরিষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে কালব মোরেলগঞ্জ শাখার ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন ও অন্যান্য আসামিরা।
আত্মসাতকৃত টাকা রূপালী ব্যাংক লি মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী শাখার এসটিডি-১৩ নং সঞ্চয়ী হিসাব থেকে তোলা হয়েছে।
এই টাকা আত্মসাৎ করতে প্রায় ৪০ জন সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সিল ও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। রূপালী ব্যাংক বারইখালী শাখা থেকে রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি ছাড়া কিছু চেকবইও সংগ্রহ করেছে চক্রটি। সমিতির রেজুলেশন খাতাও নকল করেছে তারা।
কালব্ মোরেলগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান ও এসিলাহা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কালব মোরেলগঞ্জ শাখা থেকে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা শিক্ষকদের মাঝে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ম্যানেজার ও অন্য আসামিরা।
বিষয়টি কালবের কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবহিত করলে তারা কয়েকবার অডিট করেন। অডিটে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে আমি মামলা দায়ের করেছি।’ শিক্ষকদের টাকা যারা এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন, তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।
মোরেলগঞ্জ থানার এসআই সুফল সরকার বলেন, আব্দুস সালাম হাওলাদারের অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।