ঢাকা ১১:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

স্টাফ রিপোর্টারঃ  বিশ্ব বাঘ দিবস আজ ২৯ জুলাই। বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এই দিবসটির সূচনা হয়।

সারা বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ বাঁচাবে সুন্দরবন, সুন্দরবন বাঁচাবে লক্ষ প্রাণ’।

২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল।

এর মধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়লেও সেই লক্ষ্য থেকে দূরে আছে।

বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে গত চার বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪টি হয়েছে। অর্থাৎ চার বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি। ২০১৮ সালের পর আবারও বাঘশুমারি হবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে এবার শুমারিতে বিদেশি কোনো বিশেষজ্ঞ নাও থাকতে পারে।

বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়।

২০০৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।

২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টি। হটাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারাবিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায়। সর্বশেষ বাঘশুমারিতে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনে চোরা শিকারি ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েকশত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলছে বিশেষজ্ঞরা।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আবু সালেহ বলেন, বর্তমান সরকার বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। যার সুফল কিন্তু দেখা যাচ্ছে। বিগত তিন বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বন বিভাগ বাঘ সুরক্ষায় যেভাবে কাজ করছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার।

সুন্দরবনে বন-দস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারিদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্রেট্রলিং চালু করা হয়েছে।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

আপডেট সময় ১০:৫৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

স্টাফ রিপোর্টারঃ  বিশ্ব বাঘ দিবস আজ ২৯ জুলাই। বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এই দিবসটির সূচনা হয়।

সারা বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ বাঁচাবে সুন্দরবন, সুন্দরবন বাঁচাবে লক্ষ প্রাণ’।

২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল।

এর মধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়লেও সেই লক্ষ্য থেকে দূরে আছে।

বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে গত চার বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪টি হয়েছে। অর্থাৎ চার বছরে বাঘ বেড়েছে ৮টি। ২০১৮ সালের পর আবারও বাঘশুমারি হবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে এবার শুমারিতে বিদেশি কোনো বিশেষজ্ঞ নাও থাকতে পারে।

বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়।

২০০৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।

২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টি। হটাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারাবিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায়। সর্বশেষ বাঘশুমারিতে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনে চোরা শিকারি ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েকশত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলছে বিশেষজ্ঞরা।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আবু সালেহ বলেন, বর্তমান সরকার বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। যার সুফল কিন্তু দেখা যাচ্ছে। বিগত তিন বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বন বিভাগ বাঘ সুরক্ষায় যেভাবে কাজ করছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার।

সুন্দরবনে বন-দস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারিদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্রেট্রলিং চালু করা হয়েছে।