ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে বরাদ্দের বিপরীতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের কম টাকার খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে—এমন সংবাদ প্রকাশের জেরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন কমের জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু।
শনিবার (১০ জুলাই) রাত ৮টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে থানাহাজতে নেয়া হলে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশি হেফাজতে হাতকড়া পরেই হাসপাতালের শুয়ে আছেন সাংবাদিক তানু।
সাংবাদিক তানুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই তিনি করোনা থেকে সুস্থ হন। তবে এখনও শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছেন। তাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তারা শঙ্কিত।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক তানু হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করে। বিষয়টি দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানালে আমি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার চয়ন বলেন, কিছুদিন আগেই তিনি করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। তাই তার কিছুটা শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। তাকে হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর খাবার পরিবেশনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে তানুসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা দায়ের করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজের দায়ের করা এ মামলায় তানু ছাড়া বাকি যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘গত জুন মাসে ২/১ দিন খাবার সরবরাহে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেও অন্যান্য সময় সরকারি বরাদ্দ মোতাবেক যথাযথভাবে রোগীদের খাবার প্রদান করা হচ্ছে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দাবি— সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি হাসপাতালে খাবার সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাসপাতালের পাচক (বাবুর্চি) ও রোগীদের খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছেন।
অর্থাৎ সংবাদ প্রকাশের পরই তিন খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং তার দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লিখিত হাসপাতালে ‘দু-একদিন খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর তথ্য জানতে পেরেছেন। অথচ ‘খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
এদিকে তানুকে গ্রেফতারের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তি দাবিতে এবং মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সামবেশ করেন সাংবাদিকরা। তারা তানুর মুক্তি ও সাংবাদিকদের নামে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এছাড়া তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতারের ঘটনায় সর্বস্তরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তানুর মুক্তির দাবিতে এবং মামলা প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ফেসবুক পোস্ট করে নিন্দা জানাচ্ছেন।