স্টাফ রিপোর্টার,নওগাঁ : দেশের আমের জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। এ বছর জেলার সাপাহার উপজেলা থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩) জাতের আম রফতানি করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় আম্রপালির প্রথম চালান (প্রায় এক টন) বহনকারী বিমান যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
জানা যায়, জেলার বরেন্দ্র এলাকার সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর ও পত্নীতলার আংশিক এলাকা আম্রপালির জন্য বিখ্যাত। এ জাতের আমগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হয়।
উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ এর মালিক সোহেল রানা তার নিজস্ব বাগান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিদেশে আমগুলো রফতানি করেন।
নওগাঁর পত্নীতলার দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামের কৃষক আজিজার রহমানের ছেলে সোহেল রানা। তিনি নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন।
২০১৫ সালে নিজ গ্রামের খাড়িপাড়া এলাকায় পৈতৃক ১২ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। নাম দেন ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মেধা ও পরিশ্রমে তিনি এখন ১৪০ বিঘা জমিতে পৃথক দুটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। তার এ খামার এখন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণার উৎস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাপাহার গোডাউন পাড়ায় এ ১৪০ বিঘা জমিতে আড়াই বছর বয়সী প্রায় দেড় হাজার আম্রপালি গাছ রয়েছে।
এ বাগান থেকে এ বছর প্রায় ৪০ টনের মতো আম পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গাছের বয়স কম হওয়ায় আমগুলো জলদি পাকবে। কারণ গাছের বয়স বেশি হলে আম পাকতে দেরি হয়।
তরুণ উদ্যক্তা সোহেল জানান, বিদেশে আম রফতানির জন্য আমগুলোর বিশেষ পরিচর্যা করা হয়েছে। চাষের সময় সুষম ও জৈব সার, নিয়মিত কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।
যাতে আমগুলো রোগবালাই মুক্ত থাকে। তবে আম পাড়ার ১৫ দিন আগে গাছে সব ধরনের স্প্রে বন্ধ করতে হয়। এতে কীটনাশকের কেমিক্যাল মানুষের শরীরে আর কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
সাধারণ চাষিরা কয়েকদিন আগে কীটনাশক স্প্রে করে বাজারে নিয়ে যান আম। কিন্তু বিদেশে যেসব আম রফতানি করা হবে সেগুলো ঢাকায় যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর সব ঠিক থাকলে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় বলে জানান সোহেল।
তিনি বলেন, ‘বুধবার (১৬ জুন) হারভেস্ট করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেজিং করা হয় বাগানের আমগুলো।
এরপর রাতে পিকআপে ঢাকায় পাঠানো হয় এ আম্রপালি আম। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সারাদিন রফতানির যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সন্ধ্যায় বিমানে আমের চালান ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করেছে।’
সাপাহারের আম বিশ্ববাজারে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের বাগানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ‘Global Gap’ (গ্লোবাল গ্যাপ) পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম্রপালি আমচাষ করা হয়।
এ বছর প্রায় ১০ টন আম রফতানি করার ইচ্ছা আছে আমার। আগামী সপ্তাহে আরও এক টন বরাদ্দ আসতে পারে। রফতানিকারকের কাছে প্রায় চার হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের বেশির ভাগ আমই বেশ সুস্বাদু। আমরা জানতাম না কীভাবে আম বিদেশে রফতানি করার উপযোগী করতে হয়? বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেয়ার মাধ্যমে তা জানতে পেরেছি।
সুইডেন ও ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমের জন্য অর্ডার পাচ্ছি। আমার দেখাদেখি অনেকেই আম ব্যবসায় উৎসাহিত হবে বলে আশা করছি। স্থানীয় বাজারে দাম কম পেলেও দেশের বাইরে ভালো দাম পাওয়া যাবে আমের। এতে আমরা লাভবান হবো।’