খুলনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণপানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে নলকূপ ও মিঠাপানির পুকুর ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে।
এলাকায় পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।
এছাড়া চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন দুর্গতরা। সবচেয়ে বেশি অসহায় শিশু ও নারী। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, চর্মরোগসহ নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
পানিবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ নানান কারণে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যবিপর্যয়, বিশেষ করে শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। অনেক জায়গায় পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে শুরু করেছে রোগ-ব্যাধি। বাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় অতিরিক্ত লবণাক্ততায় মরছে মাছও।
জানা যায়, ২৬ মে (বুধবার) ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কয়রা, কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি জোয়ার বেড়ে ৬ থেকে ৭ ফুট হয়। এতে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১১টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং উপচে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়।
বাড়িঘরে জোয়ারের পানি ঢোকায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। আবার যেসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই নিজ ভিটা ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের উপর অস্থায়ী ঘর করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন।
কয়রার বামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত রুমা নামে এক গৃহিণী বলেন, আমরা এ জায়গায় ৪/৫ দিন আছি। আমাদের বাড়ি বাগালী ইউনিয়নের বামিয়া বিলের মধ্যি। পানির ভিতরে ডুবি গেছে। আমাদের চুলকানি, পাতলা পায়খানা এইসব হচ্চে। এইখানে কোনো ডাক্তার আসিনি। খাবারের সমস্যাও রয়েছে। আমার হাতে যেমন চুলকানি হইছে ছেলেও তেমন হইছে।
রুমার মতো আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেকে জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসিনতায় অসুস্থ হয়ে পড়লেও জরুরি তারা কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।
বামিয়া গ্রামের কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আর পরিবেশগত নানা সমস্যায় কয়রার দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে। ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে সুপেয় পানির সবগুলো আধার লবণপানিতে ডুবে গেছে। সেগুলো থেকে এখন আর লবণপানি সরানো যাচ্ছে না। ফলে এলাকায় মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু এনজিও খাবার পানি দিয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
তিনি বলেন, লবণ পানির কারণে এখন পেটের অসুখে ভুগছেন মানুষ। পানি দূষিত হওয়ায় চুলকানি, খোস-পাঁচড়া দেখা দিয়েছে অনেকের।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আংটিহারা, বীনাপানি ও হলুদবুনিয়ার প্রায় ৬ হাজার মানুষ। ঘর-বাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। লবণপানির কারণে এই এলাকার মানুষের ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। মানুষ অসুস্থ হলেও ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদ স্বাস্থ্য ও পারিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন কোনো ডাক্তার নিয়োগ নেই। জুনিয়র একজন আছেন। তিনি সপ্তাহে একদিন আসেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, কয়রায় স্বাস্থ্যসেবা পেতে দু’একদিন সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি আমি জানার পর এখন নিবিড়ভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।