ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘মডেল লাইভস্টক ভিলেজ’ এখন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে

স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: সবুজ ছায়ার গ্রাম ‘ললিতপুর’। গ্রামটি নওগাঁর মান্দা উপজেলা মৈনম ইউনিয়নে অবস্থিত। চারপাশ প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়ায় যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এখানে।

নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচঢালা পথ থেকে নেমে উত্তর পাশের মেঠোপথ ধরেই গ্রামটি। রাস্তার পাশেই সাইনবোর্ড টাঙানো।

যেখানে লেখা আছে- মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি- ‘মডেল লাইভস্টক ভিলেজ’। গ্রামের মাঝ দিয়ে মাটির রাস্তাটি বয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুপাশে চোখে পড়বে বাড়ির সামনে বেঁধে রাখা গবাদিপশু।

গত এক বছর থেকে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) এবং কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তাদের গবাদিপশু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করছেন।

গ্রামের প্রাণিজাত পণ্যের দৈনিক উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন, বার্ষিক চাহিদা ও উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যমতে, গ্রামের ৯২টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৩২২ জন। যেখানে গরু ২৫৯টি, ছাগল ২৭৮টি, মুরগি ৮০০টি, হাঁস ২০০টি, কবুতর ৬০টি এবং ভেড়া পাঁচটি ।

প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ২০৮ লিটার, ডিম ৪৫৪টি এবং মাংস ৫৫ কেজি। গ্রামে আমিষ ও পুষ্টি চাহিদার পরিমাণ দুধ ৪৩ লিটার, ডিম ১৮৬টি ও মাংস ২৫ কেজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এগুলো।

ললিতপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং কবুতর আছে। অন্যান্য গ্রামের তুলনায় সবদিক থেকে গবাদিপশু বেশি থাকায় গ্রামটিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে ফ্রি প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘গাভী পালন প্রদশর্নী সমিতি’ নামের সমিতি করে ৩০ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অন্যরা পরামর্শ নিচ্ছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন গ্রামের সবাই।

গাভী পালন প্রদর্শনী সমিতির ক্যাশিয়ার সাগরী রানী বলেন, আগে গরু ও ছাগল পালন এবং রোগবালাই (খুরারোগ, পচামিনা, কৃমি) বিষয়ে তেমন কিছুই জানতাম না।

এছাড়া ইচ্ছেমতো খাবার দিতাম। কোনো ধরনের ভ্যাকসিন বা কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতাম না। পরিচর্যাও ঠিকমতো করতে জানতাম না।

তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অনেক কিছু জানতে পেরেছি। কখন কি ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং কীভাবে পরিমাণ মতো খাবার দিতে হবে সেসব সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। আগে গাভী কম দুধ দিত। কিন্তু এখন একটু বেশি দুধ দিচ্ছে।

সমিতির সদস্য বাঁধন বলেন, আমাদের পাঁচটি গরু ও চারটি ছাগল আছে। আগে পশু ডাক্তারকে চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য টাকা দিতে হতো। কিন্তু এখন আমরা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছি।

শিক্ষিত যুবক সবুজ কুমার বলেন, আমাদের গ্রামকে মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘গাভি পালন প্রদর্শনী’র আওতায় ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

গ্রামে আরো যারা বাসিন্দা আছেন তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে পশুপালন ও যত্নের দিক দিয়ে গ্রামটি আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

গাভি পালন প্রদর্শনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র বলেন, অন্য গ্রামের তুলনায় পশুপালনের জন্য আমাদের গ্রামটি এগিয়ে।

নিজেরও ৯টি গরু (চারটি গাভি, তিনটি বকনা ও দুটি বলদ) আছে। আগে নিজেদের ইচ্ছেমত গরু-ছাগল পালন করতাম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর যত্নের সঙ্গে পালন করছি।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সমিতিকে তিন লাখ ৮৭ হাজার টাকা দিয়েছি। যেখানে সমিতির ৩০ জন সদস্যের অগ্রাধিকার রয়েছে।

এ টাকা দিয়ে আমরা তিনটি অটোরিকশা ও দুধের কনটেইনার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক সময় বাজারে দুধের দাম পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে অটোরিকশায় শহরের বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমান্য চন্দ্র বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতর’র কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি গ্রামকে বেছে নিয়েছি।

গত বছরের মার্চ মাস থেকে ললিতপুর গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে গবাদিপশু পালনে ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়া এবং পুষ্টিকর খাবারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি ইনোভেশন ফান্ড’ নামের একটি ফান্ড আছে। সমিতির সদস্যরা তাদের উন্নয়নের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করবেন এখানে।

এরপর তাদের সঞ্চয়ের ৩০ শতাংশ এবং কৃষি ইনোভেশন ফান্ড থেকে ৭০ শতাংশ টাকা দেয়া হবে, যা দিয়ে দুধ বাজারজাত করতে অটোগাড়ি, কনটেইনার বা ঘাস কাটার মেশিন কেনার জন্য টাকা দেয়া হবে।

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

‘মডেল লাইভস্টক ভিলেজ’ এখন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে

আপডেট সময় ০৬:৪৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁ: সবুজ ছায়ার গ্রাম ‘ললিতপুর’। গ্রামটি নওগাঁর মান্দা উপজেলা মৈনম ইউনিয়নে অবস্থিত। চারপাশ প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়ায় যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এখানে।

নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচঢালা পথ থেকে নেমে উত্তর পাশের মেঠোপথ ধরেই গ্রামটি। রাস্তার পাশেই সাইনবোর্ড টাঙানো।

যেখানে লেখা আছে- মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি- ‘মডেল লাইভস্টক ভিলেজ’। গ্রামের মাঝ দিয়ে মাটির রাস্তাটি বয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুপাশে চোখে পড়বে বাড়ির সামনে বেঁধে রাখা গবাদিপশু।

গত এক বছর থেকে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) এবং কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষ তাদের গবাদিপশু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করছেন।

গ্রামের প্রাণিজাত পণ্যের দৈনিক উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন, বার্ষিক চাহিদা ও উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যমতে, গ্রামের ৯২টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৩২২ জন। যেখানে গরু ২৫৯টি, ছাগল ২৭৮টি, মুরগি ৮০০টি, হাঁস ২০০টি, কবুতর ৬০টি এবং ভেড়া পাঁচটি ।

প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ২০৮ লিটার, ডিম ৪৫৪টি এবং মাংস ৫৫ কেজি। গ্রামে আমিষ ও পুষ্টি চাহিদার পরিমাণ দুধ ৪৩ লিটার, ডিম ১৮৬টি ও মাংস ২৫ কেজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এগুলো।

ললিতপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং কবুতর আছে। অন্যান্য গ্রামের তুলনায় সবদিক থেকে গবাদিপশু বেশি থাকায় গ্রামটিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে ফ্রি প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘গাভী পালন প্রদশর্নী সমিতি’ নামের সমিতি করে ৩০ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অন্যরা পরামর্শ নিচ্ছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন গ্রামের সবাই।

গাভী পালন প্রদর্শনী সমিতির ক্যাশিয়ার সাগরী রানী বলেন, আগে গরু ও ছাগল পালন এবং রোগবালাই (খুরারোগ, পচামিনা, কৃমি) বিষয়ে তেমন কিছুই জানতাম না।

এছাড়া ইচ্ছেমতো খাবার দিতাম। কোনো ধরনের ভ্যাকসিন বা কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতাম না। পরিচর্যাও ঠিকমতো করতে জানতাম না।

তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অনেক কিছু জানতে পেরেছি। কখন কি ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং কীভাবে পরিমাণ মতো খাবার দিতে হবে সেসব সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। আগে গাভী কম দুধ দিত। কিন্তু এখন একটু বেশি দুধ দিচ্ছে।

সমিতির সদস্য বাঁধন বলেন, আমাদের পাঁচটি গরু ও চারটি ছাগল আছে। আগে পশু ডাক্তারকে চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য টাকা দিতে হতো। কিন্তু এখন আমরা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছি।

শিক্ষিত যুবক সবুজ কুমার বলেন, আমাদের গ্রামকে মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘গাভি পালন প্রদর্শনী’র আওতায় ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

গ্রামে আরো যারা বাসিন্দা আছেন তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে পশুপালন ও যত্নের দিক দিয়ে গ্রামটি আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

গাভি পালন প্রদর্শনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র বলেন, অন্য গ্রামের তুলনায় পশুপালনের জন্য আমাদের গ্রামটি এগিয়ে।

নিজেরও ৯টি গরু (চারটি গাভি, তিনটি বকনা ও দুটি বলদ) আছে। আগে নিজেদের ইচ্ছেমত গরু-ছাগল পালন করতাম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর যত্নের সঙ্গে পালন করছি।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সমিতিকে তিন লাখ ৮৭ হাজার টাকা দিয়েছি। যেখানে সমিতির ৩০ জন সদস্যের অগ্রাধিকার রয়েছে।

এ টাকা দিয়ে আমরা তিনটি অটোরিকশা ও দুধের কনটেইনার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক সময় বাজারে দুধের দাম পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে অটোরিকশায় শহরের বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমান্য চন্দ্র বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতর’র কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি গ্রামকে বেছে নিয়েছি।

গত বছরের মার্চ মাস থেকে ললিতপুর গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে গবাদিপশু পালনে ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়া এবং পুষ্টিকর খাবারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি ইনোভেশন ফান্ড’ নামের একটি ফান্ড আছে। সমিতির সদস্যরা তাদের উন্নয়নের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করবেন এখানে।

এরপর তাদের সঞ্চয়ের ৩০ শতাংশ এবং কৃষি ইনোভেশন ফান্ড থেকে ৭০ শতাংশ টাকা দেয়া হবে, যা দিয়ে দুধ বাজারজাত করতে অটোগাড়ি, কনটেইনার বা ঘাস কাটার মেশিন কেনার জন্য টাকা দেয়া হবে।