স্টাফ রিপোর্টার,নওগাঁঃ নওগাঁ শহরে বেড়েই চলেছে বহুতল ভবন নির্মাণ। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব ভবন নির্মাণে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না। ভবন নির্মাণে পৌরসভা থেকে নকশার অনুমোদন দেয়া হলেও অনুমোদন নিচ্ছেন না অনেকে।
এসব ভবনে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।শহরের জনকল্যাণ মহল্লার হুমায়ন কবির বটতলা সংলগ্ন ‘টিচার্স টাওয়ার’ নামে একটি আটতলা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
বিতর্কিত ওই ভবনে যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে প্রক্রিয়া চলছে বলে ভবনের তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া নওগাঁ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই লিমিটেড কোম্পানির (নেসকো) প্রকৌশলী তানজিমুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৩ মিটার (সাততলা) পর্যন্ত উঁচু বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে ভবনের সামনে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা, রিজার্ভ পানির ট্যাংক, ছাদের ওপর ২৫ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতার ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালকের ছাড়পত্র থাকতে হবে। গত বছরের ২৫ জুলাইয়ে ‘টিচার্স টাওয়ার’ ভবনটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
তবে এ বহুতল ভবন নির্মাণের অন্যান্য শর্তও মানা হয়নি। যদিও এখনো ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালকের ছাড়পত্র না থাকায় ভবনে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়নি।
২৪ জন শিক্ষক মিলে ২৮ ইউনিটবিশিষ্ট আটতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির সামনে চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। তবে শহরের পানি নিষ্কাশনে প্রায় আট ফুট প্রশস্ত ঢাকনাযুক্ত একটি ড্রেন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ভবনে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারবে না। এছাড়া ভবনটি নির্মাণে পৌরসভার অন্যান্য নিয়মও মানা হয়নি।
বির্তকিত ওই ভবনের তৃতীয় তলায় গত দুই মাস থেকে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছেন নেসকোর প্রকৌশলী তানজিমুল হক। যা তার কর্মস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে।
স্থানীয় হারুনুর রশীদ ও জালাল হোসেন বলেন, ‘ওই বহতুল ভবন নির্মাণে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। ভবন মালিকরা নেসকোর প্রকৌশলী তানজিমুল হককে দিয়ে যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারলে প্রকৌশলীকে তারা সুবিধা দিতে চেয়েছেন।’ তারা আরও বলেন, শহরের এত বাসা থাকতে বিতর্কিত ওই ভবনে প্রকৌশলীকে কেন উঠতে হবে?
ভবনটির অন্যতম অংশীদার শিক্ষক বেলাল হোসেন। তার দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কাউকে কোনো উদ্দেশ্যে ভাড়া দেয়া হয়নি।
নওগাঁ পৌরসভার প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বহুতল ভবন নির্মাণে চারপাশে তিন ফুট তিন ইঞ্চি জায়গা রেখে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
প্ল্যান পরিবর্তন করার বিধান পৌরসভার নেই। তবে কেউ প্ল্যান পরিবর্তন করে ভবন তৈরি করলে দায়ভার তাদের, পৌরসভার না।
শুনেছি ওই ভবনটির সামনে ড্রেনের ওপর ঢাকনা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। তবে এ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক একেএম মুরশেদ বলেন, ‘ভবনের সামনে একটি ড্রেন আছে। ড্রেনের ওপর ঢাকনা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ভারী গাড়ি চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। ওই ভবনটিতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে যেতে পারবে না।’
নওগাঁ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই লিমিটেড কোম্পানির প্রকৌশলী তানজিমুল হক বলেন, ‘উপযুক্ত কাগজপত্র থাকলে ওই ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে আপত্তি নেই।’
বিতর্কিত একটি ভবনে কেন ভাড়া থাকছেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোথাও না কোথাও ভাড়া থাকতেই হবে। নতুন ভবন এজন্য সেখানে পরিবার নিয়ে উঠেছি। তবে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে ভবনে উঠেছেন এমন বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। জানা গেছে, নওগাঁ শহরে এরকম ২০টি ভবন রয়েছে।